রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ , ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১২:২০, ৮ মে ২০২১

এ যেন অন্যরকম কাপ্তাই হ্রদ!

এ যেন অন্যরকম কাপ্তাই হ্রদ!
ছবিঃ আলোকিত রাঙ্গামাটি

মো নজরুল ইসলাম লাভলু, কাপ্তাইঃ- অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড তাপদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এ যেন এক অন্যরকম কাপ্তাই হ্রদে পরিণত হয়েছে। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি পানি কমে যাওয়ায় হ্রদের উপর নির্ভরশীল বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া হ্রদের সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি উপজেলার সাথে নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

স্থানীয় একাধিক সুত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য সম্পদের উপর বিপুল জনগোষ্ঠি নির্ভরশীল। যারা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। মৎস্য খাতের পাশাপাশি হ্রদ কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের সাথে বহু লোক জড়িত। এসব খাতের পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাত হতে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। এছাড়া পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল যেমন- বাঁশ, গাছ, কলা, লিচু, পেঁপে, আনারসসহ নানান ধরনের ফলমূল এই হ্রদপথের মাধ্যমে এনে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে গত মার্চ মাস থেকে হ্রদের পানি কমতে থাকে। পানি কমায় হ্রদের উপর নির্ভরশীল বিপুল সংখ্যক মানুষের ব্যবসা, বাণিজ্য বন্ধ হয়ে পড়েছে। শতশত লোক কর্মহীন দিনযাপন করতে থাকে।

এদিকে, হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনও ব্যহত হচ্ছে। পানির অভাবে কেন্দ্রের সব ক'টি ইউনিট সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ম পর্যায়ে ঠেকেছে। 

এ ব্যাপারে গত শুক্রবার কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহেরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ১টি ইউনিট চালু রয়েছে। কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটে দৈনিক ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। কিন্তু পানির অভাবে সচল ১টি ইউনিটে বর্তমানে প্রতিদিন ২২-২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, রুলকার্ভ অনুযায়ী এসময় হ্রদে পানি থাকার কথা ৮৮.৮৬ ফিট এমএসএল (মীন সী লেভেল)। কিন্তু পানি আছে ৭৬.০৮ ফিট এমএসএল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর বর্ষায় পাহাড়ী ঢলের সাথে আসা ময়লা, আবর্জনার কারণে এবং হ্রদের আশেপাশে বসবাসরতদের নির্বিচারে বর্জ্য ফেলায় হ্রদের গভীরতা হ্রাস পেতে থাকে।

কাপ্তাই বাঁশ ব্যবসায়ী আবুল কাশেম জানান, চলতি মৌসুমে হ্রদের পানির গভীরতা কমে যাওয়ার ফলে তারা বাঁশ আনতে পারছেনা। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তাদের প্রায় তিন থেকে চার মাস পানির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এই চার মাস যাবৎ বাঁশ ব্যবসায়ীও বাঁশের চালি শ্রমিকদের কর্মহীন হয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

কাপ্তাই কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লোকমান আহমেদ জানান, পানির ওপর নির্ভর করে তাদের ব্যবসা। পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে তাদের ব্যবসায় ধস নেমেছে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছে শত শত শ্রমিক। ইঞ্জিন চালিত বোট মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মোঃ ইদ্রিছ বলেন, বর্তমানে হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে। হ্রদের বিভিন্ন স্থানে জেগে উঠা চরে ইঞ্জিন চালিত বোট চালানো সম্ভব হচ্ছে না। হ্রদে পানি বৃদ্ধি না হলে নৌ-পথে জড়িত চালকরা তাদের দৈনন্দিন কর্মে ফিরতে পারছেনা।

এ বিষয়ে কাপ্তাই ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ হ্রদের সাথে সংশ্লিষ্ট বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সরকারের মাধ্যমে কর্মহীন হয়ে পড়া খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে চলতি মে'-জুন' দুইমাসের জন্য খাদ্য সহাযতা এসে পৌঁছেছে। সংশ্লিষ্ট পরিবারপিছু মাসে ২০ কেজি হারে চাল প্রদান করা হবে আগামী সোমবার থেকে।

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়