রাঙামাটি । বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ , ৪ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৬:৩৯, ১৪ জুলাই ২০২০

বাড়ছে পোশাকের ক্রয়াদেশ

বাড়ছে পোশাকের ক্রয়াদেশ

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান পোশাক খুচরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের আউটলেটগুলো পুনরায় চালু হওয়ায় সীমিত আকারে হলেও দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে কাজের ক্রয়াদেশ বাড়তে শুরু করেছে। ফলে কয়েক মাস আগের চেয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তৈরি পোশাকের উদ্যোক্তা ও শ্রমিকরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে মার্চে সাধারণ ছুটি শুরুর পর ব্যবসা-বাণিজ্য যে গভীর খাদে পড়েছিল, সেখান থেকে কিছুটা উত্তরণ ঘটেছে। জুন মাসে এসে কোনো কোনো খাতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিও হয়েছে।

চীন থেকে শুরু হয়ে গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশ অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিল। দেশগুলোর খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রগুলোও ছিল বন্ধ। এর প্রভাবে বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাগুলো ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশের কবলে পড়ে। আবার দেশের অভ্যন্তরে করোনা ঠেকাতে কারখানা বন্ধ রাখতে হয় প্রায় এক মাস। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে গত ২৬ এপ্রিল থেকে কারখানা সচল হতে শুরু করে। কারখানা মালিকরা বলছেন, বাতিল বা স্থগিত হওয়া ক্রয়াদেশগুলোর কিছু ফিরে এসেছে। আবার নতুন ক্রয়াদেশও পেতে শুরু করেছে কারখানাগুলো। কিন্তু তা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কম। ক্রেতারা ধীরে ধীরে ক্রয়াদেশ নিয়ে ফিরে আসায় তাদের বেশিরভাগ কারখানার কাজের সক্ষমতা ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

পোশাক সরবরাহকারীরা আরও জানিয়েছেন, নতুন করে কাজের আদেশের পরিমাণ কম করে হলেও বাড়ছে। ইতোমধ্যে প্রস্তুতকৃত পণ্যগুলো পুনরায় দাবি করছেন বা পুরানো ওয়ার্ক অর্ডার কার্যকর করছেন ক্রেতারা। যদিও নতুন কাজের আদেশের প্রবাহ এখনো প্রত্যাশিত পর্যায়ে নেই; তারপরও উদ্যোক্তরা তারা আশা করছেন, চলতি বছরের শেষের দিকে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি আরও উন্নতি হলে ক্রয়াদেশ প্রত্যাশিত পর্যায়ে বাড়বে।

উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বড় ইউনিটগুলো কাজের অর্ডার বড় আকারে পেলেও দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোশাক কারখানাগুলো এখনো সেভাবে পাচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয়কারী অন্যতম বৃহৎ ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের এক শীর্ষ নির্বাহী যায়যায়দিনকে বলেন, তারা অনেক অর্ডার পেস্নস করছেন। লকডাউন থেকে সচল হওয়ার পর তাদের সব সরবরাহকারী নতুন ক্রয়াদেশ পেয়েছেন।

ইউরোপভিত্তিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটির কান্ট্রি ম্যানেজার আরও বলেন, ভোক্তা আচরণে তারা বড় ধরনের পরিবর্তন দেখছেন। মানুষের অগ্রাধিকার বদলেছে। এদিকে, লকডাউনে স্টোর বন্ধ থাকায় মজুদ পণ্য নিয়েও তাদের কাজ করতে হচ্ছে। এ মুহূর্তে তারা পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত, অনেক কাজ প্রক্রিয়াধীন।

ক্রয়াদেশ পরিস্থিতি নিয়ে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, বিশ্বব্যাপী দেশগুলো অবরুদ্ধ বা লকডাউন পরিস্থিতি থেকে পুনরায় সচল হওয়া নিয়ে লড়াই করছে। কারণ কোভিডের উলেস্নখযোগ্য ঢেউ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে দমিয়ে রাখছে। এটা তাদের জন্য খারাপ সতর্কবার্তা। কারণ পোশাক শিল্প পশ্চিমা বাজারের চাহিদার ওপর নির্ভরশীল।

তবে বিজিএমইএ সূত্র বলছে, তাদের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে কারখানাগুলোর গড় সক্ষমতার ৫৫ শতাংশের মতো ক্রয়াদেশ আছে, যা বছর শেষে বাড়তে পারে। ২০২০-এর ডিসেম্বরের মধ্যে সক্ষমতার ৭০ শতাংশ ক্রয়াদেশ হতে পারে। এ ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবসম্মত না-ও হতে পারে। এর পরও তারা ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে নিয়মিত রপ্তানির ৮০ শতাংশ হবে- এমনটাই আশা করছে।

পোশাক শিল্পের প্রতিনিধিরা বলছেন, একটি নির্দিষ্ট কারখানা বিবেচনায় নিলে দেখতে হবে ওই কারখানা কোন ক্রেতার কাজ করছে। যারা ওয়ালমার্টের মতো বিক্রয়কেন্দ্রভিত্তিক ক্রেতার সঙ্গে কাজ করছে তারা কিছু ক্রয়াদেশ পাচ্ছে, কারণ ওই ধরনের বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে গ্রোসারি কেনাকাটার পাশাপাশি ভোক্তারা কিছু কিনছে। হয়তোবা তারা টি-শার্ট কিনছে কিন্তু শার্ট কিনছে না। আবার ডেনিম বিক্রি হচ্ছে বলে ক্রয়াদেশ থাকলেও ফরমাল ট্রাউজারের অর্ডার নেই, কারণ বিক্রি নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ তার স্বাভাবিক চলাচলে বাইরে না বের হবে ততক্ষণ পর্যন্ত বিক্রি বাড়বে না- এমন তথ্য উলেস্নখ করে শিল্প মালিকরা বলছেন, বিক্রি না হলে তো অর্ডার পেস্নস হবে না।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, নতুন অর্ডার পেস্নসমেন্টের অবস্থা ভালো না বলে শুনেছেন তিনি। সবাই খারাপ বলছে। কেউ বলে কিছু আছে, কেউ বলে নেই। বেশিরভাগ কারখানার কাছে শুনতে পাচ্ছেন, কারও সক্ষমতার ৫০ শতাংশ আছে, কারও আছে ৬০ শতাংশ। নিটের কিছু অর্ডার আছে। রিটেইল শপগুলো চালু হলেও লোক নেই। কোনো কারখানাই শতভাগ সক্ষমতা ব্যবহারে নেই। ক্রেতারা যারা বলছে ক্রয়াদেশ দিচ্ছে তাদের যদি জিজ্ঞাসা করা হয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কী পরিমাণ ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন? তাহলে তারা আর কোনো উত্তর দেবে না। কারণ তারা এমনিতেই বাংলাদেশে ৫০ শতাংশ ক্রয়াদেশ কম পেস্নস করছে। অনেক কারখানায় কোনো অর্ডারই পেস্নস করেনি। ক্রেতা যদি বলে অন্যদের তুলনায় আমি কিছু তো দিচ্ছি, সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘটনা।

এদিকে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দেশের গার্মেন্ট কারখানাগুলোয় বাতিল হয় একের পর এক ক্রয়াদেশ। এরই মধ্যে অর্ডার না থাকায় কাজ হারিয়েছেন বহু শ্রমিক। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা বলছেন, করোনার কারণে পোশাক খাতের প্রায় ৩২ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। আর এ অবস্থায় কিছু পোশাক কারখানা পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকু্যইপমেন্ট (পিপিই) ও ফেসিয়াল মাস্কের অর্ডার পাচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা ও তার আশপাশে সাভার ও গাজীপুরের ৩৩টি কারখানায় তৈরি হচ্ছে এসব সুরক্ষাসামগ্রী। বিশ্ববাজারে মাস্ক ও পিপিইর চাহিদা তুঙ্গে থাকায় পোশাক মালিকরাও আশা করছেন চলতি বছরে দেশে এ সুরক্ষা সামগ্রীগুলোর আরও অর্ডার আসবে। ফলে এ পণ্যগুলো নিয়ে তৈরি হয়েছে রপ্তানির নতুন সম্ভাবনা।

রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর তথ্যমতে, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত মোট ১১.৫৮ মিলিয়ন ডলার অর্থমূল্যের মাস্ক, গস্নাভস ও পিপিই রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ গত মাসেও এ পণ্যগুলো বিপুল পরিমাণ রপ্তানি করা হয়। পণ্যগুলো রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ৩৩টি প্রতিষ্ঠান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেডিকেল উপকরণ তৈরি করে ফের আশাবাদী হয়ে উঠেছে অনেক পোশাক কারখানা। বর্তমানে মেডিকেল সুরক্ষা উপকরণ উৎপাদনের কাজে জড়িত কারখানাগুলোর অর্ডার পাওয়ার সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনার কারণে যেসব কারখানার অর্ডার বাতিল হয়েছিল তারা এখন এ ধরনের পণ্য তৈরি করে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশের শ্রমিকদের হাতে তৈরি পিপিই।

পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট আরশাদ জামাল বলেন, বেশ কিছু দেশীয় কারখানা পিপিই ও মাস্ক তৈরি করছে। ধারণা করছি বছরজুড়ে এ ধরনের পণ্যের আরও অর্ডার আসবে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মেডিকেল গাউন, গস্নাভস-জাতীয় সুরক্ষা উপকরণ রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।

আলোকিত রাঙামাটি