রাঙামাটি । শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ , ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১০:২৩, ২৬ এপ্রিল ২০২০

করোনা পরীক্ষায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রর উৎপাদিত কিট ও কিছু সহজ প্রশ্ন

করোনা পরীক্ষায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রর উৎপাদিত কিট ও কিছু সহজ প্রশ্ন

ড. মনসুর আলম খান, মন্ত্রীর একান্ত সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনা ভাইরাস মহামারিকে বৈশ্বিক সংকট হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে। সংস্থাটির মতে করোনা মহামারীর কারণে সৃষ্ট বিশ্ব সংকট, সংক্রমণ ও মৃত্যু ছাড়াও অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি করবে। এর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। বিশ্বজুড়ে এখনই সংক্রমণের সংখ্যা ২৬ লাখের উপরে এবং মৃত্যুর সংখ্যা দুই লাখ ছুঁই ছুঁই করছে। বাংলাদেশেও এই মহামারী আঘাত হেনেছে। ইতোমধ্যে প্রাণ গেছে শতাধিক লোকের, আক্রান্ত কয়েক হাজার।

গত ১৬ এপ্রিল জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেড্রোস গেব্রেইয়েসুস বলেন, 'সব দেশের প্রতি আমাদের সাধারণ একটি বার্তা- টেস্ট টেস্ট টেস্ট।' তিনি বলেছেন টেস্টের মাধ্যমে দ্রুত রোগী শনাক্ত করা এবং তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা গেলে এই ভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হবে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরীক্ষার ওপর জোর দিয়ে আসছে। এমনই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশেরই একটি প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কর্তৃক করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কিট উৎপাদন করার খবর নিঃসন্দেহে আনন্দের। অনেক হতাশার মাঝে আশার আলো।

খবরে প্রকাশিত হয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন উদ্ভাবিত করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কিট উৎপাদন একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সবচেয়ে ভাল দিক হল, তাদের আবিষ্কৃত কিটের বিষয়ে সরকার দ্রুততার সহিত ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। দ্রুত উপাদান আমদানির ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহায়তা করেছে। উপাদান দেশে আসার পর শুল্ক মওকুফ ও দ্রুততম সময়ে খালাস করার ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সহায়তা করেছে। তিনি আরও বলেছেন, তাদের উদ্ভাবিত কিট দিয়ে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের মতো সহজে ৫ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে করোনা রোগী শনাক্ত করা যাবে। এতে দুই থেকে আড়াইশত টাকা খরচ হবে। ডাক্তারের চেম্বার, ওষুধের দোকান ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গাতে বসে এই পরীক্ষা করা যাবে। তিনি আশা দেখিয়েছেন এই শনাক্তকরণ পদ্ধতি অত্যন্ত ভালো। ফলে ইংল্যান্ড ও সাউথ আফ্রিকার মতো দেশ এই কিট নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

এসব দেখে মনে হতে পারে বিষয়টা খুবই সহজ! খুবই ইতিবাচক! কিন্তু তারপরও কথা থেকে যায়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা করতে যাচ্ছে সেই পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্বব্যাপী এই পদ্ধতি প্রয়োগের যথার্থতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। শুধু বাংলাদেশের যারা ভাইরোলজিস্ট বা সংশ্লিষ্ট তাঁরাই নন, বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা এই পদ্ধতির প্রয়োগ নিয়ে সন্দিহান।

গত ৮ এপ্রিল ‘হু’ এই সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছে। সেখানে তাঁরা এধরনের উদ্ভাবনী প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বলেছে ‘WHO recommends the use of these new point-of-care immunodiagnostic tests only in research settings. They should not be used in any other setting, including for clinical decision-making, until evidence supporting use for specific indications is available.’

এই যে, যুক্তরাষ্ট্রে এত এত লোক মারা যাচ্ছে তারপরও তাদের The Centers for Disease Control and Prevention (CDC) এখনো এই পদ্ধতির অনুমোদন করেন নাই। যাচাই বাছাই করছে। একই অবস্থা যুক্তরাজ্যের National Health Service (NHS) এর ক্ষেত্রে। তারাও যাচাই বাছাই করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে আরেক সংস্থা Food and Drug Administration (FDA) বহুল রোগী সনাক্তকরণের স্বার্থে প্রথমে এই পদ্ধতির অনুমোদন দিয়ে গত ২ এপ্রিল Letter of Authorization ইস্যু করলেও পরে সরে এসেছে। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও একই সন্দেহ। কিছু দিন আগে আনন্দবাজার পত্রিকা প্রশ্ন রেখেছে ‘র‌্যাপিড কিটে সম্পূর্ণ সায় নেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার, তবু ভারত কেন এই পথে হাঁটছে?’ কিন্তু কেন?

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে করোনা ভাইরাসের গঠন কিরূপ বুঝতে হবে। ভাইরাস কিভাবে কাজ করে সেটাও জানার প্রয়োজন। আশার কথা হল এসব বুঝার জন্য বায়োটেকনোলজিস্ট বা ভাইরোলজিস্ট হতে হবে না। এটা কোন রকেট সাইন্সও না। সাধারণ জ্ঞানের বিচার বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করলেই বুঝা যায়। সাধারণ কিছু তথ্য জেনে হয়তো বিজ্ঞানী হওয়া যাবে না। দরকারও নাই। কিন্তু গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কর্তৃক উদ্ভাবিত করোনা ভাইরাস পরীক্ষার এই কিট কাজে আসবে কি আসবে না সেটা বুঝতে অসুবিধা হবার কথা না।

 

করোনা পরীক্ষায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রর উৎপাদিত কিট ও কিছু সহজ প্রশ্ন

করোনা একটি আরএনএ (RNA) ভাইরাস। বৃত্তাকার কাঠামোর ব্যাস ৫০ থেকে ২০০ ন্যানোমিটার। ভিতরের দিকে থাকে রিবোনিউক্লিওটাইড বা আরএনএ এর রশ্মি বা সুতিকা এবং বাহিরের দিকে থাকে প্রোটিনের আবরণ। যে আরএনএ দিয়ে ভাইরাসটির পরিচয় তা মূলত ২৯৯০৩টি নিউক্লিওটাইড বেস (Nucleobase) -এর একটি শিকল। পুরো শিকলটি আবার ১৫টি ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রোটিন তৈরিতে নির্দেশনা দেয়। মানে এতে ১৫টি জিন আছে। জেনোমের দুই তৃতীয়াংশ জুড়ে থাকা জিন থেকে Non Structural Protein (NSP) আর অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ জুড়ে থাকা জিন থেকে Structural Protein তৈরি হয়। অবস্থানগত ভাবে Structural প্রোটিনগুলো আবার চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে- Spike protein (S); Envelope protein (E); Nucleocapsid এবং Membrane protein (M)। এদের মধ্যে স্পাইক প্রোটিন (S) ভাইরাসটিকে মানবদেহের কোষের সংগে সংযুক্ত, ফিউশন এবং ভিতরে প্রবেশ করতে প্রধান ভূমিকা রাখে। ভাইরাসটি এমনিতে বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্ন সময় ধরে বেঁচে থাকতে পারে। তার কাজ শুরু হয়, হোস্ট সেলে (মানব কোষ) প্রবেশ করার পর। মূলত শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে ভাইরাসটি মানব দেহে প্রবেশ করে। মানব কোষের বিভিন্ন উপাদান কাজে লাগিয়ে সে বর্ধিত হতে থাকে বহুগুণে। এক সময় পুরো হোস্ট সেলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। অকেজো হয়ে পড়ে মানব অঙ্গ।

এখন কথা হল করোনা বা অন্য কোন ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের শরীর কিভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। আমরা জানি, শরীরে যেকোন বহিরাগত বস্তু প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিক ভাবে তৎপর হয়ে উঠে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ডিফেন্স মেকানিজম বা ইমিউন সিস্টেম। শুধু করোনা ভাইরাস না, ব্যাকটেরিয়া বা অন্য যে কোন ফরেন পার্টিকল এর ক্ষেত্রেই একই ব্যবস্থা। দেহের ইমিউন সিস্টেম ভাইরাস বা এন্টিজেনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে। অ্যান্টিবডি হল প্রতিরক্ষামূলক প্রোটিন জাতীয় পদার্থ, দেখতে অনেকটা ইংরেজি Y -আকৃতির। অ্যান্টিবডিগুলো ফরেন পার্টিকেল বা এন্টিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে এগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে বা দেহ থেকে বের করে দেয়। সেই সাথে ভবিষ্যতের জন্য কিছু এন্টিবডি বা মেমরি কোষও তৈরি হয়ে থাকে যাতে করে ভবিষ্যতে অনুরূপ ভাইরাস বা ফরেন পার্টিকেল প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিক ভাবে প্রতিরক্ষা করতে পারে। অ্যান্টিবডি আবার সাধারণত দুই প্রকার; IgM এবং IgG। জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরে প্রথমে IgM অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। কিছুকাল পড়ে তৈরি হয় IgG। অনেকটা যুদ্ধে যেমন সব বাহিনী এক সাথে আসে না আসে একটার পর একটা, পদাতিকের পর গোলন্দাজ তারপর অন্য কেউ, এরকম। বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রক্রিয়াটা আরও জটিল হলেও সহজভাবে আমরা এভাবেই ভাবতে পাড়ি। ক্ষতি নেই। ক্ষতিটা হয় অন্য জায়গায়। যখন কেউ শরীরে এই এন্টিবডির উপস্থিতি দেখে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলে দিতে চান কোন ভাইরাসে আক্রমণ করেছে কিনা তখনই ক্ষতি। পত্রিকায় দেখলাম ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন ‘আমাদের কিট হান্ড্রেড পার্সেন্ট এটাকে ডিটেক্ট (শনাক্ত) করতে পেরেছে’। প্রশ্ন হল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কী প্রক্রিয়ার ক্রস-ভ্যলিডেশন করেছেন যে তাদের তৈরি কীট অন্যকোন ভাইরাসের (সারস, মারস কিংবা ডেঙ্গু) বিরুদ্ধে তৈরি এন্টিবডি কে ডিটেক্ট করছে না? গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কর্তৃক প্রস্তাবিত র‍্যাপিড ডট ব্লটের (জি র‍্যাপিড ডট ব্লট) টেস্ট রক্তে অ্যান্টিবডির (IgM এবং IgG) উপস্থিতি চিহ্নিত করার নিমিত্তে তৈরি। এই টেস্ট সরাসরি ভাইরাসকে চিহ্নিত করতে পারার কথা নয়। এন্টিবডি টেস্ট রুগী সনাক্তকরণে ব্যবহৃত হয় না। বরং এটা ব্যবহৃত হয় কেউ কখনো ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছে কিনা তা দেখার জন্য (রোগের বিস্তার দেখার জন্য)। বিশেষ করে কোন জনসমাজে হার্ড ইমিউনিটি বিস্তার লাভ করেছে কিনা তা দেখা হয়। কোনও একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষের মধ্যে রোগের প্রাদুর্ভাব দ্রুত জানতে সাহায্য করে এই টেস্ট। যেমন, নিউইয়র্কে আগামী সপ্তাহ থেকে এটি করা হবে, শতকরা কত জন লোক ভাইরাসটির সংস্পর্শে এসেছে তা দেখার জন্য। এর ফলে তারা লকডাউন খোলার জন্য আদৌও প্রস্তুত কি না তা যাচাই করে দেখবে। এমন প্রেক্ষাপটে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কর্তৃক শুধুমাত্র এন্টিবডি টেস্ট করে শতভাগ নিশ্চিত হবার খবর শুধু বিভ্রান্তিকরই নয় উদ্বেগেরও বটে।

করোনা বা অন্য কোন ভাইরাসের প্রায় শতভাগ নিশ্চিত টেস্টের জন্য এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত পদ্ধতি হল RT-PCR (Reverse Transcription Polymerase Chain Reaction)। স্যাম্পলে খুব সামান্য পরিমাণের ভাইরাসের উপস্থিতি থাকলেও Chain Reaction এর মাধ্যমে ভাইরাসের RNA-কে বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়। ফলে মানব দেহে করোনা বা অন্য ভাইরাস থাকলে তা নিখুঁতভাবে নির্ণয় করা যায়। আর সেটা সম্ভব আক্রান্ত হবার প্রথম দিন থেকেই। তবে RT-PCR টেস্ট তুলনামূলক ব্যয়বহুল, সময় সাপেক্ষ। প্রয়োজন দক্ষ টেকনিশিয়ানের।

অপরদিকে, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রস্তাবিত র‍্যাপিড ডট ব্লটের (জি র‍্যাপিড ডট ব্লট) টেস্ট রক্তে এন্টিবডির উপস্থিতি নিরূপণ করে। আঙুলের ডগাতে সুচ ফুটিয়ে সামান্য রক্ত নিয়ে র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট করা যায়। বড়সড় পরিকাঠামোর প্রয়োজন নেই। সাশ্রয়ী মূল্যে একসঙ্গে অনেকের পরীক্ষা করা যায়। টেস্ট করতে মোটামুটি ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে।

অসুবিধা হল, প্রথমত শরীরের অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সময় লাগে। করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে সংক্রমিত হবার অন্তত ৫ (পাঁচ) দিন পরে IgM অ্যান্টিবডি এবং ১০ দিন পরে IgG অ্যান্টিবডি রক্তে পাওয়া যেতে পারে (মোটামুটি ভাবে ৭-১৪ দিনের মাঝে) এবং পরবর্তী পর্যায়ে রক্তে কেবল IgG অ্যান্টিবডি উপস্থিত থাকতে পারে। কেউ যদি সংক্রমিত হবার প্রথম দিকে অথবা দীর্ঘদিন পরে এই টেস্ট করে তাহলে False Negative ফল আসার সম্ভাবনাই বেশী, যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। বিশেষ করে করোনা ভাইরাস যেখানে কোন উপসর্গ ছাড়াই বিপুল সংখ্যক লোকের মাঝে ছড়ানোর সক্ষমতা রাখে সেখানে কোনরূপ False Negative অথবা False Positive ফল হবে খুবই উদ্বেগের, ভয়ের কারণ।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রণীত এরূপ এন্টিবডি নির্ভর টেস্টে সর্বোচ্চ শতকরা ৩০ ভাগ পর্যন্ত False Negative অথবা False Positive ফল আসতে পারে। False Positive- এর ক্ষেত্রে ভাইরাসে আক্রান্ত না হওয়া লোককে বলে দেয়া হবে সে ভাইরাসে আক্রান্ত। আর এতে করে তাঁর জীবনে নেমে আসতে পারে দুর্বিষহ ভোগান্তি। অপর দিকে False Negative ফলের ক্ষেত্রে প্রকৃত ভাইরাসে আক্রান্ত লোককে বলে দেয়া হবে যে তিনি আক্রান্ত নন। যেহেতু করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত অনেকের বেলায়ই কোন উপসর্গ থাকে না, সেহেতু সে ফুরফুরে মেজাজে ভাইরাস নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন সবখানে। ডাক্তারের সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে। আর এই করে নিজের অজান্তেই ভাইরাস ছড়িয়ে দেবেন প্রিয়জন, দূরেরজন, যাকে কাছে পান তাঁকেই। এরকম একটি দুটি False Negative-ই ম্লান করে দিতে পারে সকল পরিশ্রম। এরূপ হলে পরে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে চলমান লড়াই এর কোন মূল্যই থাকবে না।

এসব কারণেই পৃথিবীর কোন দেশই ব্যক্তি পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ের জন্য অ্যান্টিবডি নির্ণায়ক টেস্ট অনুমোদন করে নাই। পৃথিবীর কোথাও এন্টিবডি নির্ণায়ক টেস্ট রুগী সনাক্তকরণে ব্যবহৃত হয় না। আমাদের পাশের দেশ ভারতে মুম্বাই-এ শুরু করেও পিছু হটেছে। গতকাল থেকে ভারত কেন্দ্রীয় ভাবে এই টেস্ট বন্ধ করে দিয়েছে এটির মাত্রাতিরিক্ত ফলস-পজিটিভ/ফলস-নেগেটিভ ফলাফলের কারণে। এই পদ্ধতি সম্পর্কে WHO স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছে ‘should not be used for clinical decision-making’।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কর্তৃক প্রস্তাবিত র‍্যাপিড ডট ব্লটের (জি র‍্যাপিড ডট ব্লট) গবেষণায় ব্যবহৃত হতে পারে। গবেষণাগার হতে পারে সেখানেই যেখানে করোনা সন্দেহ লোকের রক্ত ও আনুষঙ্গিক ব্যবহৃত দ্রব্যাদির ব্যবস্থাপনার (Biological waste disposal system) সুনিশ্চিত ব্যবস্থা আছে। কোন মতেই ডাক্তারের চেম্বার বা ঔষধের দোকানে নয়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কর্তৃক এমন একটি উদ্যোগ বাংলাদেশের ক্লিনিক্যাল গবেষণার জন্য নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক। গবেষণা, রোগ ব্যবস্থাপনা, অথবা ভ্যাকসিন পরবর্তী সময়ে বহুল জনগোষ্ঠীর মাঝে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা তা বুঝার জন্য এরূপ টেস্ট কাজে আসতে পারে। কোনভাবেই করোনা আক্রান্ত রোগ নির্ণয়ের জন্য নয়।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাহেব অবশ্য তাঁদের উদ্ভাবিত র‍্যাপিড ডট ব্লটের একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে কোন এক সাক্ষাতকারে উল্লেখ করেছেন। এরকম সীমাহীন সীমাবদ্ধতা নিয়ে যে টেস্টের যাত্রা শুরু সেই টেস্টকে কোন কাজে ব্যবহার করা যায় সরকার নিশ্চয় তা ভেবে দেখবে। তাই প্রশ্ন থেকে যায়, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোভিড-১৯ রোগ নির্ণয়ের জন্য শ্রদ্ধেয় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাহেব এর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কর্তৃক প্রস্তাবিত র‍্যাপিড ডট ব্লট পরীক্ষা পদ্ধতির অনুমোদন দেয়া সমীচীন হবে কি?

লেখক: মন্ত্রীর একান্ত সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়।

সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক

আলোকিত রাঙামাটি