রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ , ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কাপ্তাই প্রতিনিধিঃ-

প্রকাশিত: ১৫:৫৮, ২৮ জানুয়ারি ২০২২

কাপ্তাইয়ে মাস্টার হোটেলের সুস্বাদু ২০ পদের মাছের খ্যাতি

কাপ্তাইয়ে মাস্টার হোটেলের সুস্বাদু ২০ পদের মাছের খ্যাতি

চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের কাপ্তাই বাস স্টেশন। পাশেই কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়। অদূরে কাপ্তাই প্রকৌশল একাডেমি। বেশ জনাকীর্ণ এই এলাকা।  বাস স্টেশনের পাশেই ছনের চালের ঘরে বেড়া দিয়ে ঘেরা দেওয়া খাবারের হোটেল। মাষ্টার হোটেল নামে পরিচিত এর দেশীয় সুস্বাদু ২০ পদের মাছের জন্য স্থানীয় এলাকাবাসী ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের কাছে এই হোটেলের বেশ খ্যাতিও রয়েছে।

বাচা মাছ, বোয়াল মাছ, কাতাল মাছ, রুই মাছ, শৈল মাছ, আইল মাছ, শরপুটি মাছ, কাজলি মাছ, কাচকি মাছ, টেংরা মাছ, চিংড়ি মাছ, কোরাল মাছ, বাচকুইট্যা মাছ, কালিগইন্যা মাছ, বাটার মাছ, বাইং মাছ, শিং মাছ, পাবদা মাছ, মিসালি মাছ, বাইলা মাছসহ আরো কয়েক প্রকার মাছ প্রতিদিন এই হোটেলে রান্না করা হয়। সে সাথে পাহাড়ী দেশী মুরগি, বিভিন্ন পদের ভর্তাও পাওয়া যায় এই হোটেলে। কাপ্তাই লেক ও কর্ণফুলী নদীর তরতাজা মাছের স্বাদ এই হোটেলে না খেলে বোঝা যাবে না।

সম্প্রতি এক দুপুরে ওই মাস্টার হোটেলে গিয়ে দোকানের ক্যাশ বাক্সে দেখা হয় ৭৩ বছর বয়সী ফয়েজ আহমেদের সাথে। যিনি এই দোকানের মালিক। ফয়েজ আহমেদের চেয়ে মাস্টার নামে সকলে তাকে বেশী চিনে।

আলাপ কালে ফয়েজ আহমেদ জানান, তার  বাড়ি নোয়াখালীর ফেনী জেলাধীন সোনাগাজী উপজেলায়। স্বাধীনতার পরপরই তিনি সোনাগাজী থেকে কাপ্তাইয়ে আসেন। দৈনিক কাজ, গাড়ীর সহকারী এবং ট্রাক  চালক হিসাবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন এই এলাকায়। সেসাথে অনেকজনকে তিনি গাড়ির ড্রাইভিং শিখিয়েছেন। সে সুবাদে তাকে সকলে মাস্টার নামে ডাকে।

মাস্টার ফয়েজ আরো জানান, ২০০৩ সালে কাপ্তাই ইউনিয়নের পাশে কাপ্তাই বাস স্টেশনে এই হোটেল গড়ে তোলেন তিনি। জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, কেন মাস্টার হোটেল নাম রাখলেন। তিনি বলেন, অনেক জনকে তিনি ট্রাক চালানো শিখিয়েছেন। সেজন্য সবাই তাকে মাস্টার বলে ডাকে। তাই দোকানের নাম রাখেন মাস্টার হোটেল। তার দোকানে সব মাছ তরতাজা, কাপ্তাই লেক এবং কর্ণফুলী নদীর। প্রতিদিন সকালে তিনি কাপ্তাই জেটিঘাট মৎস্য আহরণ কেন্দ্র থেকে মাছ নিয়ে আসেন। দিনেরটা দিনেই পরিবেশন করেন। বাঁশি খাবার রাখেন না।

বাসায় তার সহধর্মিণী ও মেয়ে ঘরোয়া পরিবেশে রান্না করেন এসব খাবার। আর তিনিসহ আরো ৩ জন কর্মচারী খাবার পরিবেশন করেন কাস্টমারদের। প্রতিদিন শতাধিক ক্রেতা আসে দোকানে। দৈনিক খরচ বাদ দিয়ে ৫-৬ শত টাকা লাভ থাকে তার। বেশী লাভ করতে চায়না তিনি।

তার দোকানে প্রায়ই খেতে আসেন কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন জানান, এই মাস্টার হোটেলে সবকিছুই তরতাজা। কর্ণফুলী নদীর এবং কাপ্তাই লেকের মাছ বিক্রি করা হয়। ভোজন রসিকরা এখানে এসে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারেন।

ওইদিন দুপুরে এই দোকানে খেতে আসা বিপণন কোম্পানির প্রতিনিধি ইব্রাহীম ও শাহাজাহান আলাপকালে জানান, পেশাগত কারনে কাপ্তাই নতুন বাজার, জেটিঘাট এলাকায় আসলে দুপুরে এই মাস্টার হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে থাকি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এই হোটেলের খাবারের মান অত্যন্ত সু-স্বাদু ও মানসম্মত। বিশেষ করে বিভিন্ন পদের মাছ পাওয়া যায় এখানে।

কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মাহাবুব হাসান বাবু জানান, আমাদের স্কুল পরিদর্শনে বিভিন্ন সময় উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের আগমন ঘটে। প্রায়ই তাদেরকে এই হোটেলে আপ্যায়ন করাই।  সকলে খেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

তিনি জানান, কিছুদিন পূর্বে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব, আমাদের স্কুল ভিজিট করে আসার পর ওই মাস্টার হোটেলে গিয়ে দুপুরের আহার গ্রহন করেন। তিনি বিভিন্ন প্রকার মাছ খেয়ে অত্যন্ত খুশি হন এবং এই হোটেলের মানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তবে দেশে মাছ খাওয়ার টানে অনেক পর্যটক এই হোটেলে আসলেও এসব পর্যটকদের অনেকের অভিযোগ হোটেলে মাছের দাম তুলনা মূলকভাবে বেশি রাখা হয়।

৪নং কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ জানান, তার ইউনিয়ন পরিষদের পূর্ব পাশে এই মাস্টার হোটেল। ইতিমধ্যে খাবার পরিবেশন এবং মানের কারনে এই মাস্টার হোটেলটি সকলের কাছে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ