রাঙামাটি । শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ , ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ১৩ মার্চ ২০২২

মূল: দ্য ড্রিমস, লেখক- নাগিব মাহফুজ 

মানবশিশু

মানবশিশু
​​​​​​​ছবি: অন্তর্জাল (প্রতীকী)

নীলনদের পাড়ে একটি খেজুর গাছের ছায়ায় এক উদ্ভিন্ন যৌবনা নারী চিৎ হয়ে শুয়েছিল। বিশাল শরীর ও উচ্চতার। তার উন্মুক্ত বুকের ওপরে অসংখ্য শিশু হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। অন্যরা হামাগুড়ি দিয়ে তার দিকে এগোচ্ছিল। মৌমাছির মতো ঝাঁক বেঁধে তারা যুবতীর বুকের চারপাশে ভিড় করেছিল এবং অকল্পনীয় লোভের সঙ্গে তার স্তন্যপান করছিল। একদল স্তন্যপান শেষ করলে অন্যদল এগিয়ে আসছিল।

এক সময়ে মনে হলো পুরো ব্যাপারটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আমার মনে হলো কেউ একজনের উচিৎ বিষয়টা নিয়ে সতর্কতা উচ্চারণ করা এবং সাহায্যের জন্যে ডাকা। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, নীলনদের উপকূলের সমস্ত মানুষ তখন গভীর ঘুমে আছন্ন হয়েছিল। আমি চিৎকার করে সবাইকে ডাকার চেষ্টা করলাম, কিন্তু মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হলো না। কষ্টে আমার বুক চেপে এলো।

শিশুরা নারীটির পাঁজরের হাড়গুলোর ওপরের চামড়া ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট রাখল না। যখন তারা তার কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হলো, তখন তারা তাদের দাঁত দিয়ে তাকে কামড়াতে লাগল। যতক্ষণ পর্যন্ত না তার  শরীর কঙ্কালে রূপান্তরিত হয়। চিৎকার করার চেষ্টার বাইরেও আমার কিছু করা উচিৎ বলে আমার মনে হলো। পরের মুহূর্তেই আমি অবাক হয়ে গেলাম দেখে যে, দুধ ও মাংসের অনুসন্ধান বাদ দিয়ে শিশুরা নিজেদের মধ্যে মারামারি-কাটাকাটি শুরু করে দিলো। পশুদের মতো। শরীরের মাংস ছিড়ে যাবার পর তাদের শরীর থেকে রক্ত ঝরতে লাগল।

এই সময়ে তাদের কয়েকজন আমাকে দেখতে পেল এবং আমার দিকে এগোতে লাগল। সীমাহীন ভয়ের ভেতরে আমি বুঝতে পারলাম তারা আমার সাথেও অকল্পনীয় কিছু করার জন্যে এগিয়ে আসছে।