রাঙামাটি । বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ , ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১০:৪২, ৭ মার্চ ২০২৩

আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ: বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় দিন

আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ: বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় দিন

আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ। বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো জনতার সমাবেশে মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তাঁর মাত্র ১৯ মিনিটের ভাষণটি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছিল মানুষ। সেই সংক্ষিপ্ত ভাষণে দেশের মানুষ পেয়েছিল তাদের বহু আকাঙ্ক্ষিত প্রতিটি শব্দ। পেয়েছিল সব দিকনির্দেশনা। ভাষণের পরপরই বারুদের মতো জ্বলে উঠেছিল দেশ। ভাষণের প্রতিটি শব্দ ছিল সুনির্বাচিত ও সুচিন্তিত। বাস্তব প্রয়োজন বিবেচনায় জাতির জন্য করণীয় প্রতিটি পদক্ষেপের কথা ছিল সেই শব্দমালায়। কবি নির্মলেন্দু গুণ এই ভাষণটিকে একটি ‘মহাকাব্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, আর যিনি এই ভাষণ দিয়েছেন তাঁকে বলেছেন ‘মহাকবি’। মার্কিন সাময়িকী নিউজউইকের ভাষায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন ‘রাজনীতির কবি’।

আজকের এই দিনে জাতি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে স্মরণ করবে সেই ঐতিহাসিক দিনটিকে, স্মরণ করবে সেই মহাকবিকে এবং উচ্চারণ করবে সেই মহাকাব্যের অমর পঙক্তিমালা।

বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের লক্ষ্যই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বিচক্ষণ নেতৃত্বের মাধ্যমে জাতিকে ক্রমে এগিয়ে নিয়েছিলেন সেই লক্ষ্যের দ্বারপ্রান্তে। পাকিস্তানিদের রক্তচক্ষু ও কূটকৌশল তাঁর অজানা ছিল না। সেই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের জন্যও জাতিকে তৈরি করেছিলেন তিনি। ৭ই মার্চের ভাষণে সেই দিকনির্দেশনাগুলো যথেষ্ট দূরদর্শিতার সঙ্গে তিনি অত্যন্ত স্পষ্ট করে তুলে ধরেছিলেন। দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে তিনি সেই চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায়, প্রত্যেক ইউনিয়নে, প্রত্যেক সাবডিভিশনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল। এবং তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক। মনে রাখবা—রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব; এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লা। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’ এরপর কারো মনে আর কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকেনি। সবারই গন্তব্য স্পষ্ট হয়ে যায়।

ঐতিহাসিক সেই ভাষণ থেকে প্রেরিত শক্তির সূতিকায় স্বাধীনতা অর্জিত হয় যা বাংলাদেশের মানুষদের জন্য আজো প্রেরণার উৎস। বাঙালির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনকের ওই ভাষণের দিকনির্দেশনাই ছিল সে সময় বজ্রকঠিন জাতীয় ঐক্যের মূলমন্ত্র। যুগে যুগে এই ভাষণ বাঙ্গালীর আত্মচেতনা আর জাগরণের শক্তি হয়েই থাকবে। দেশকে উন্নতির শেখড়ে অবতীর্ণ করতে হলে বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণটি চিরকাল স্মরণে রাখতে হবে। যতদিন বাংলাদেশ আর বাঙালী রবে এ পৃথিবীতে ততদিন লাল-সবুজের পতাকা উড়বে বিশ্বজুড়ে।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেসকো বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। অথচ কী নিদারুণ দুঃখ ও লজ্জার বিষয় যে বঙ্গবন্ধুর নিজ দেশেই দীর্ঘদিন ধরে এই ভাষণটি নিষিদ্ধ ছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর একটা দীর্ঘ সময় ধরে এমন অপচেষ্টা চালানো হয়। উদ্দেশ্য ছিল নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে না দেওয়া। জাতির জনকের নাম মুছে দেওয়া। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসকে পাল্টে দেওয়া। কিন্তু স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা জানত না যে ইতিহাস পাল্টানো যায় না। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, যত দিন বাঙালি থাকবে, তত দিন এই মহাকাব্য থাকবে, এই মহাকাব্যের মহাকবি থাকবেন প্রত্যেক বাঙালির হৃদয়ে।

স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরও একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের উত্তরসূরিরা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সেসব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ হোক আমাদের প্রেরণার উৎস।