রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ , ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাঙামাটি প্রতিনিধিঃ-

প্রকাশিত: ১০:০৭, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

৯৯৯-এ ফোন, কাপ্তাই লেক থেকে ৮ পর্যটককে উদ্ধার

৯৯৯-এ ফোন, কাপ্তাই লেক থেকে ৮ পর্যটককে উদ্ধার
ছবিঃ আলোকিত রাঙ্গামাটি

রাঙামাটি (সদর) প্রতিনিধিঃ- ৭ সেপ্টেম্বর রাতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর রাঙামাটি জেলা সকল পর্যটকদের ভ্রমণে সবসময় কাছে টানে। রাঙামাটি  জেলার আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থেকে এস.এম. রিয়াদ জিলানী সহ আট জনের একটি দল সকালে রাঙামাটি জেলায় ভ্রমণে আসে। শুরুতে রাঙামাটিতে এসে সদর থেকে বোট ভাড়া করে শুভলং ঝর্ণা উদ্দেশ্য রওনা করে। কাপ্তাই লেকের অনিন্দ্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে শুভলং ঝর্ণায় পৌঁছায় পর্যটক দল। শুভলং ঝর্ণার অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করে নিজ গন্তব্যে পৌঁছানোর উদ্দেশ্য দুপুর ১২টায় শুভলং থেকে সদরের উদ্দেশ্য রওনা করে পর্যটক দল। কিন্তু পথেই ঘটে বিপত্তি, এরই মধ্যে কাপ্তাই লেকে সুবিশাল কচুরিপানার একটি ঝাঁক পর্যটকদের বোটকে আটকে ধরে। শত চেষ্টা করেও বোট চালক এই কচুরিপানার ঝাঁক অতিক্রম করতে পারে না। বোট চালকের প্রাণপণ চেষ্টার একপর্যায়ে বোটের পাখা নষ্ট হয়ে যায়। এরপর, বোটচালক ও আটকে পড়া পর্যটকরা নিজেদের উদ্ধারে কচুরিপানা পরিষ্কার করতে প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকে। দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত কচুরিপানা পরিষ্কার করে নিজেদের উদ্ধারে চেষ্টা করে পর্যটক দল। দীর্ঘ ভ্রমণ করে রাঙামাটিতে এসে সারাদিন কিছু না খাওয়ার ফলে সবারই ক্রান্তি চলে আসে এবং সবাই শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যায়। এ সময়ে পাশ দিয়ে যাওয়া মানুষজনের কাছে খাবারের জন্য আকুল হয়ে পড়ে পর্যটকদল। খাবারের আকুলতা বুঝাতে গিয়ে পাশ দিয়ে যাওয়া এক পর্যটককে মিনতি করে বলে, আপনার হাতের এক লিটার পানির বোতল টা আমাকে দিন, আমি আপনাকে ৫০০ টাকা দিব কিন্তু ৫০০ টাকার বিনিময়েও পানির বোতল পাওয়া যায় নাই।

এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে দেখে পর্যটকদের মনে ভয় জাগতে শুরু করে, এখন কি হবে? আমরা কিভাবে এ স্থান থেকে উদ্ধার হব? এরূপ নানাবিধ চিন্তা নিজেদের মধ্যে ঝেঁকে বসে। এরূপ নানাবিধ চিন্তা থেকে উদ্ধারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে পর্যটক দল। উপায়ন্তর না দেখে, বাংলাদেশ পুলিশের জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯- এ কল দেয় তাদেরই একজন। ৯৯৯ থেকে রাঙামাটি জেলা পুলিশ কন্ট্রোল রুম কল পেয়ে পুলিশ সুপার মীর মোদ্‌দাছ্ছের হোসেনের নির্দেশনায় ঘটনাস্থলের কাছে পুলিশ ক্যাম্পে খবর পৌঁছায় পুলিশ কন্ট্রোল রুম এবং পর্যটকদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে। পুলিশ কন্ট্রোল রুমের নির্দেশনা পেয়ে জারুলছড়ি থানার চৌকস পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে নেমে পড়ে। পুলিশ সদস্যরা নিজেদের জীবনের মায়া তুচ্ছজ্ঞান করে কাপ্তাই লেকে সাঁতার কেটে কচুরিপানার ঝাঁকের কাছে পৌঁছায়। কচুরিপানার কাছাকাছি গিয়ে দা, শাবাল দিয়ে কচুরিপানা কাটতে কাটতে সামনের দিকে এগুতে থাকে। দীর্ঘ ০১ ঘন্টা কচুরিপানা পরিষ্কার করে পর্যটকদলের কাছে পৌঁছে পুলিশ সদস্যরা। পর্যটকদের উদ্ধার করে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের খাওয়ার বিস্কুট, পানি প্রভৃতি দিয়ে পর্যটকদের ক্ষুধা নিবারণ করে। জারুলছড়ি জেলা পুলিশের এ সহমর্মিতা দেখে পর্যটকরা আপ্লুত হয়ে পড়ে। এতদিন পুলিশ সম্পর্কে মানুষের কাছে নেতিবাচক কথা শুনে এসেছে, বাস্তবে এসে আজকে আসল পুলিশ সদস্যকে দেখেছে। এতদিন ধরে যে ধারণা ছিল তাদের কাছে এটা আজকে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

​​​​​​

পর্যটকদের মানসিক প্রশান্তি এনে জারুলছড়ি পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা রাত ৯টার সময় রাঙামাটি জেলা পুলিশের পলওয়েল পার্কে পর্যটকদের নিয়ে এসে। পলওয়েল পার্কে পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে পর্যটকরা এসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। বাংলাদেশ পুলিশের জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯- এ এরকম তরিৎ গতিতে ব্যবস্থা নিতে পারে, তার স্বাক্ষী হতে পেরে নিজেদেরকে ধন্য মনে করে পর্যটকরা।

এ সময় বাংলাদেশ পুলিশ, জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ ও রাঙামাটি জেলা পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলে, “চারদিকে যখন ঘোর অন্ধকার দেখতে ছিলাম তখনই আলোর পথ দেখিয়ে নিজেদের নতুন জীবন দান করলো বাংলাদেশ পুলিশ। তাই বাংলাদেশ পুলিশ তথা রাঙামাটি জেলা পুলিশের প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ।”

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়