রাঙামাটি । বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ , ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

‘জিয়া কারাগারে কত মানুষ হত্যা করেছেন, তা খুঁজে বের করুন’

‘জিয়া কারাগারে কত মানুষ হত্যা করেছেন, তা খুঁজে বের করুন’

সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে দেশে ‘সামরিক ক্যু’র ওজর তুলে বিভিন্ন কারাগারে কি পরিমাণ মানুষ হত্যা করা হয়েছে তা খুঁজে বের করার জন্য এমপিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এ আহ্বান জানান। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি আমাদের এমপিদের উচিত উদ্যোগ নিয়ে জিয়ার আমলে দেশের প্রত্যেকটা কারাগারে, বিশেষ করে ঢাকা, বগুড়া, রাজশাহী, খুলনা এবং কুমিল্লা কারাগারে ফাঁসি দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, তা খুঁজে বের করা। এই কারাগারগুলোতে প্রতিটি ক্যু এর পর শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর কয়েক শত সৈনিক-কর্মকর্তা এবং সদস্যদের সেই সময় হত্যা করা হয়। এগুলোর তো (রেকর্ড) রয়ে গেছে। এই রেকর্ডগুলো একটু খুঁজে বের করে দেখেন। শুধু তাই নয়, প্রতিরাতে ফাঁসি দিতে দিতেও অনেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল। এই ধরণের লোক এখনও আছে।

তিনি বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, এদের কাছ থেকে মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়। এদের কাছে জ্ঞানের কথা, আইনের শাসনের কথা শুনতে হয়। অথচ আমি আমার বাবা-মা হত্যার জন্য মামলা করতে পারিনি। আমার কোনো অধিকার ছিল না।

দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব এবং বাংলাদেশকে নিয়ে জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করবো। কারণ, আওয়ামী লীগ সরকারে আসলে জনগণেরই কল্যাণ হয়।

তিনি এ সময় কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সকলের টিকার ব্যবস্থা করতে যত টিকা লাগে তার ব্যবস্থা সরকার করবে উল্লেখ করে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেন।

জিয়াউর রহমান ’৭৫ সনে জাতির পিতার হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, সেই অভিযোগ পুনরায় উত্থাপন করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, তিনি যে, ’৭৫ এর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যে জড়িত ছিলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমি তাকে আসামি করতে চেয়েছিলাম। তখন হোম সেক্রেটারি ছিলেন রেজাউল হায়াত। তিনি বললেন, মৃত মানুষকে তো আসামি করা যায় না। কিন্তু আমার মনে হয় তার নামটা থাকা উচিত ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া যে ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন, সেটা তো ফারুক-রশিদ নিজেরাই বলেছেন বিবিসির ইন্টারভিউতে। এ্যন্থনি ম্যাসকারহানস-এর বইতে আছে। লরেন্স লিফশুলজ এর বইতেও আছে। কীভাবে তারা এগুলো অস্বীকার করবেন? আর তাই যদি তিনি নাই করে থাকেন, তাহলে স্বাধীনতার পর যে সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছিল, তাদেরকে তিনি ছেড়ে দিয়েছিলেন কেনো? এমনকি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের সাত খুনের আসামিকেও মুক্ত করে দিয়েছিলেন। এমন বহু ঘটনা তিনি ঘটিয়েছিলেন। সেই সব খুনিদের নিয়েই পরে তিনি নিজের রাজনৈতিক দলও গঠন করেছিলেন।

তিনি বলেন, যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে এক হয়ে এদেশে অগ্নিসংযোগ হত্যা, খুন ধর্ষণ করেছিল, তাদেরকে তিনি মন্ত্রী, উপদেষ্টা করে সংসদে বসিয়েছিলেন। জাতির পিতার খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন। আর তার থেকে একধাপ উপরে গিয়ে তার স্ত্রী খালেদা জিয়া কর্নেল রশিদ এবং হুদাকে এমপি বানিয়ে সংসদে বসিয়েছিলেন। এইতো তাদের চরিত্র। খুনি, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদ, যুদ্ধাপরাধী, ধর্ষণকারী এদেরকে নিয়েই তাদের চলাফেরা। গোলাম আজম পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে চলে গিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান তাকে ফেরত নিয়ে এসেছিলেন। বহুদলীয় গণতন্ত্র, জিয়ার নির্বাচন, ’৭৭ এর হ্যাঁ, না ভোট, ’৭৯ এর নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচিত্রা তখন সরকারি পত্রিকা। সেখানে উঠেছিল যে, আওয়ামী লীগ ৪০টি সিট পাবে। অথচ তখন দল বলতে বাংলাদেশে একটাই ছিল আওয়ামী লীগ।

মানুষের ভোট ধ্বংস করে ভোটের ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্টটা জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশে করেছেন। ব্যাংকের থেকে টাকা নিয়ে লোন শোধ না করার কালচার তার শুরু করা। মানুষকে দুর্নীতিবাজে পরিণত করেছেন। মেধাবী ছাত্রদের একহাতে পুরস্কার দিয়েছেন, অন্যহাতে তাদের অস্ত্র ও অর্থ তুলে দিয়ে বিপথে পাঠিয়েছেন। জিয়া আসলে বহুদলীয় নয়, দেশে কারফিউ গণতন্ত্র দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে জিয়ার কবর (সংসদের সীমানায় থাকা) নিয়ে কথা উঠেছে। জিয়ার মৃত্যু সংবাদের পর তার লাশ পাওয়া যায়নি। গায়েবানা জানাজা হয়েছিল। আর কয়েকদিন পরে একটা বাক্স আনা হয়েছিল।

তিনি জেনারেল এরশাদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, কারো পরামর্শে এটি করা হয়েছিল। সাজিয়ে গুছিয়ে একটা বাক্স নিয়ে এসে দেখানো হয়েছিল। তখন এ সংসদে বার বার প্রশ্ন এসেছে। যদি লাশ পাওয়া গিয়ে থাকে, তবে লাশের ছবি থাকবে না কেন?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মীর শওকত (মীর শওকত আলী বীরউত্তম) সেই লাশ শনাক্ত করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে চেনার কারণে প্রধানমন্ত্রী একদিন তাকে যে প্রশ্ন করেছিলেন তার উদ্ধৃতি তুলে ধরেন তিনি। ‘সত্যি কথা বলেন তো।’ তিনি বলেছিলেন ‘লাশ কোথায় পাব।’ এমনকি জেনারেল এরশাদকে বারবার এবং মৃত্যুর কিছুদিন আগেও তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনি যে একটা বাক্স নিয়ে আসলেন, লাশটা কোথায় পেলেন?’ এরশাদ বলেছিলেন, ‘বোন লাশ পাব কোথায়?’ আর কি বলবো? কাজেই আজকে যে কথাটা উঠেছে তখন সেটা আমরা বার বার জানতে চেয়েছি। তখন যে বিএনপির নেতারা ছিলেন, তারা কি করে গেছেন, সেটা আপনারাই দেখেছেন।

বিএনপির এমপি রুমিন ফারহানার বক্তব্যের সঙ্গে তিনি একমত পোষণ করে বলেন, ইতিহাস ফিরে আসে। জাতির পিতার একদিন নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল, ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা হয়েছিল, এমনকি ৭ মার্চের ভাষণটি পর্যন্ত এদেশে বাজাতে দেওয়া হতো না।

তিনি বলেন, ২৫ মার্চ যখন সারাদেশে রাস্তায় বেরিকেড দেওয়া হচ্ছিল, চট্টগ্রামেও বেরিকেড দেওয়া হচ্ছিল, জিয়াউর রহমান তখন পাকিস্তানি সেনাদের হয়ে বেরিকেড দানকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছিলেন। এরপর তিনি গিয়েছিলেন সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে। সেখানে পাবলিক ঘেরাও দিয়ে তাকে তাকে আটকিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার যে স্বাধীনতার ঘোষণা সেটা তৎকালীন ইপিআর ওয়্যারলেস এবং পুলিশ স্টেশনের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। যে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়েছিল, সেই নেতারাই সেটা সংগ্রহ করে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান যে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন, সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সে কারণে সবথেকে বেশি মানুষ মারা গেছে সেখানে। এখনও ভাটিয়ারীতে সেই গণকবর রয়ে গেছে। তিনি যদি সঠিক সিদ্ধান্ত দিতেন, আমাদের সোলজাররা ব্যবস্থা নিতে পারতো। কিন্তু সেটা তিনি করেন নাই।

সরকারপ্রধান বলেন, ২৭ তারিখ সন্ধ্যায় জিয়াউর রহমান কেবল স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি পাঠ করেছিলেন। আর এ সংসদে যখন প্রশ্ন উঠলো স্বাধীনতা দিবস ২৬ তারিখ আর জিয়া ঘোষণা দিয়েছিলেন ২৭ তারিখ, তখন ইতিহাস বিকৃতিকারীরা সেই ২৭ তারিখকে ২৬ তারিখ বানিয়ে ফেলেছিল। অথচ ২৬ তারিখে জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এ দেশের সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার সব ব্যবস্থা করে দেশ স্বাধীন করেছেন সেখানে একজন মেজরের কথায় সবাই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং দেশ স্বাধীন করে ফেলেছিল, তাও কি কখনো হয়?

অথচ বঙ্গবন্ধুই জিয়াকে প্রমোশন দিয়ে যে মেজর জেনারেল করেছিলেন। দেশ স্বাধীন না হলে জিয়া কখনো তা হতে পারতেন না, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়ার মা-বাবা পাকিস্তানে মাইগ্রেট করেছিলেন। জিয়া সেখানেই আর্মিতে ঢুকেছিলেন। কিন্তু তার পোস্টিং হয়েছিল আমাদের বাংলাদেশে।

আলোকিত রাঙামাটি