রাঙামাটি । মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪ , ৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১৪:১৩, ১৮ অক্টোবর ২০২১

ছাত্রলীগ থেকে ‘সাম্প্রদায়িক’ ১০ নেতা বহিষ্কার

ছাত্রলীগ থেকে ‘সাম্প্রদায়িক’ ১০ নেতা বহিষ্কার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের মিছিল। ফাইল ছবি


কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ঘটনায় ফেসবুক পেজে সাম্প্রদায়িক মনোভাবের প্রমাণ পেয়ে ১০ জনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ।

বহিষ্কৃত হওয়ার পর এক নেতা বলেছেন, তার দুঃখ নেই। তিনি ফেসবুকে যা লিখেছেন, সেটিই তার বক্তব্য। তবে এক নেতা দুঃখ প্রকাশ করে আবার স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তবে ছাত্রলীগ তার সিদ্ধান্ত পাল্টায়নি।

সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনটির কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি বহিষ্কারের বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।

বহিষ্কার হওয়া নেতাদের মধ্যে পাঁচ জনের পরিচয় জানা গেছে। এরা হলেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের নিউ মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক আশিক আহমেদ, কাফরুল থানা ছাত্রলীগের ৯৪ নং ওয়ার্ডের জিহাদ হাসান রাজ, শরীয়তপুর সদর উপজেলা শাখার ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ঢালী, লক্ষ্মীপুর জেলার ১৪নং মান্দারি ইউনিয়ন শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সাইমুন এবং ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহসভাপতি মিরাজ মিঠু।

এদের মধ্যে ঢালীকে গত বৃহস্পতিবার আর বাকি চার জনকে শনিবার অব্যাহতি দেয়া হয়। বাকি পাঁচজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।

শরীয়তপুর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সই করা অন্য একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উসকানিমূলক পোস্ট দেয়ায় শহিদুল ইসলাম ঢালীকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ঢালী বলেন, ‘ছাত্রলীগের সংগঠন থেকে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে, আমি জেনেছি এবং এটা সত্য। কোরআন অবমাননা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছি। এটা যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে আর সেই অপরাধে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় তাতে আমার কোনো দুঃখ নেই।’

যশোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাউদ্দিন কবির পিয়াস ও সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লব স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মিরাজ মিঠুকে অব্যাহতির বিষয়টি জানানো হয়।

মেরাজ হোসেন মিঠু শুক্রবার রাতে উসকানিমূলক পোস্টটি দেন। এরপর পদ হারিয়ে শনিবার ফেসবুকে আরেকটি স্ট্যাটাসে ক্ষমা চান তিনি। না বুঝে পোস্টটি দিয়েছিলেন দাবি করে মিঠু লিখেছেন, ‘এমন ভুল আর কখনও হবে না। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান- আমরা সকলে ভাই।’

বহিষ্কার হওয়া বাকি নেতাদের বক্তব্য জানা যায়নি।

সংগঠনে সন্তোষ

এ ধরনের নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টরা।

অর্ক শাহা নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক কর্মী ফেসবুকে লেখেন, ‘ছাত্রলীগের ভেতরে থাকা মামুনুল-ছানাদের বিতাড়িত করবার জন্য ধন্যবাদ ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ। এভাবেই একে একে সব ধর্মান্ধ জানোয়ারের দল ছাত্রলীগ থেকে বিতাড়িত হবে এটাই প্রত্যাশা।’

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ক্ষমতাসীন দলের পাশাপাশি ছাত্রলীগেও ব্যাপকভাবে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে।

সাম্প্রদায়িক সহিংসতাসহ নানা বিতর্কিত ঘটনায় ফেসবুকে প্রায়শই সংগঠনের পদধারীদের এমন প্রতিক্রিয়া আসে, যা এই সংগঠনটির অতীত ঐতিহ্যের সঙ্গে বেমানান।

বহিষ্কারের সংখ্যা বাড়তে পারে

দপ্তর সেলের কর্মীরা জানান, এ ধরনের কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন ইউনিটের আরও অনেক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে। যাচাই বাছাই করে তাদেরকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যাদেরকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তাদের ছাড়াও আরও অনেকের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে অভিযোগ আসছে। কেউ যেন গ্রুপিংয়ের শিকার হয়ে অন্যায়ভাবে বাদ না পড়েন সেজন্য আমরা কেন্দ্রীয় ভাবেও এটির মনিটরিং করছি।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগর থেকে একটা অভিযোগ এসেছে। নোয়াখালী থেকে একটা, মানিকগঞ্জ থেকে, যশোরের একটা উপজেলার আহ্বায়কের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে। এছাড়া ঝিনাইদহ এবং সাতক্ষীরার কয়েকজনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আসছে। এগুলো আমরা যাচাই বাছাই করছি।

‘সভাপতি সাধারণ সম্পাদক নির্দেশ দিয়েছেন, কাউকে আমরা ছাড় দেবো না।’

সার্বিক বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তারা ফোন রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।

দুর্গাপূজার ন্যাক্কারজনক ঘটনা

গত বুধবার কুমিল্লা নগরীর নানুয়ার দীঘির উত্তরপাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ পাওয়ার অভিযোগ তোলার পর সকাল থেকে শহরে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। ভাঙচুর করা হয় বিভিন্ন পূজামণ্ডপ।

কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে নোয়াখালীর চৌমুহনীতেও বিভিন্ন মণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় যতন সাহা নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এর বাইরেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের মন্দির, ঘরবাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে।

এসব ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে বিভিন্ন কলেজ-উপজেলা ছাত্রলীগ থেকে পদ হারিয়েছেন একাধিক ছাত্রলীগ নেতা।

আলোকিত রাঙামাটি

সর্বশেষ

জনপ্রিয়