রাঙামাটি । বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ , ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৭:৫৭, ২৫ মে ২০২২

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে: প্রাণিসম্পদমন্ত্রী

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে: প্রাণিসম্পদমন্ত্রী

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি-বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে প্রাণিসম্পদ খাতে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সহযোগিতার ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) এ সেমিনারটির আয়োজন করে।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, বর্তমান বাংলাদেশ বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত উপযোগী ও সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। দেশি ও বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ১০০ এর বেশি অর্থনৈতিক অঞ্চল করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানাবে।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ, অভিজ্ঞতা বিনিময় ও যৌথভাবে কাজ করছে। তৈরি পোশাক ছাড়াও বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কৃষির বিভিন্ন খাত, বিশেষ করে প্রাণিসম্পদ খাতে দীর্ঘ সম্পর্ক রয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে দৃঢ় ও গতিশীলভাবে কাজ করছে। এরই মধ্যে আমরা প্রাণিসম্পদ খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি।

মন্ত্রী বলেন, বিশ্ব এখন গ্লোবাল ভিলেজে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই পৃথিবী ও মানবজাতির উন্নয়নের জন্য আমাদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি-বেসরকারি খাতের অভিজ্ঞতা বিনিময় ও পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সর্বোত্তম পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব।

রেজাউল করিম বলেন, যুক্তরাষ্ট্র  বিভিন্ন খাতে আমাদের দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে তাদের গবেষণা উন্নয়ন, অভিজ্ঞতা ও সহযোগিতা সম্প্রসারণ করছে। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ একটি দেশ। এ দেশে প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। এজন্য উন্নত দেশের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আমরা মাছ, মাংস ও ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি এবং শিগগিরই আমরা দুধ উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে যাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, সরকার দেশে গুঁড়ো দুধ আমদানিতে উৎসাহী নয়। এজন্য বেসরকারি খাতকে গুঁড়ো দুধ উৎপাদনের শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত করছে সরকার। গুঁড়ো দুধ, প্রাণি-মৎস্য খাদ্যসহ অন্যান্য খাদ্য আমদানিতে সরকার সন্তুষ্ট নয়। বর্তমানে বৈশ্বিক বৈরী পরিস্থিতির কারণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানি ও পরিবহনে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এজন্য বেসরকারি খাতকে দেশে শিল্প স্থাপনে আহ্বান জানানো হচ্ছে। সরকার এ খাতের উন্নয়নে নীতি নির্ধারণসহ সবধরনের সহযোগিতা দেবে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ও বেসরকারি খাত আমাদের দেশের চাহিদা পূরণ ও তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে এগিয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ও গবেষণার ক্ষেত্র বৃদ্ধিতে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা উন্মুক্ত থাকবে।

প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, এখন বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উন্নয়নের ম্যাজিশিয়ান। উন্নয়নের এ অর্জন সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এজন্য দেশের বেসরকারি খাত এবং যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি-বেসরকারি খাতের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমাদের সরকার প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে সবসময় উদার মানসিকতাপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ। এ খাতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার ক্ষেত্র সীমিত বা প্রতীকী না হয়ে বিস্তৃত হতে পারে। দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে দুই দেশ পারস্পরিকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ না হলে এটা সম্ভব নয়। 

প্রাণিসম্পদ খাত বিগত ৫০ বছর ধরে দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রাণিসম্পদ খাতের বিজ্ঞানীরা শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও অবদান রাখছেন। আমরা অভিজ্ঞতা, উন্নয়ন জ্ঞান ও গবেষণা বিনিময় করতে পারি। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ দুই দেশের মধ্যে একসঙ্গে কাজের ক্ষেত্র বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করতে পারে। এটা হতে পারে দুই দেশের মধ্যে প্রশিক্ষণ, শিক্ষা বিনিময়সহ অন্যান্য কর্মসূচি।

মন্ত্রী আরো বলেন, প্রাণিসম্পদ খাত থেকে শুধু দুধ, ডিম ও মাংস উৎপাদন ও ব্যবহারই যথেষ্ট নয়। এ খাত থেকে উৎপাদিত পণ্যের বৈচিত্র্য ও এর বহুমুখী ব্যবহারে বাংলাদেশ সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রাণিসম্পদের রোগ প্রতিরোধও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, মানুষ এ খাত থেকে খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ করছে। তাছাড়া রোগ-জীবাণু প্রাণিসম্পদের উৎপাদনেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এসব বিষয় নিয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে দুই দেশ অভিজ্ঞতা বিনিময় ও পারস্পরিক সহযোগিতা করতে পারে।

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন হেলেন লাফেবের সভাপতিত্বে সেমিনারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী ও যুক্তরাষ্ট্রের লাইভস্টক জেনেটিক্স এক্সপার্টের প্রেসিডেন্ট ড. মার্টিন সিবার। 

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে ইউএসডিএ-এর এগ্রিকালচারাল এটাচে মেগান ফ্রান্সিস। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এস এম ফেরদৌস আলম, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রাণিসম্পদ খাতের অংশীজনরা।