রাঙামাটি । বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ , ১৩ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ৪ ডিসেম্বর ২০২১

কক্সবাজারে কীটনাশক ও লবণ ছাড়াই উৎপাদন হবে শুঁটকি

কক্সবাজারে কীটনাশক ও লবণ ছাড়াই উৎপাদন হবে শুঁটকি

গবেষণাগারে উৎপাদিত বন্ধ্যা মাছি দিয়েই দমন করা হবে শুঁটকির জন্য ক্ষতিকারক বন্য মাছি। ক্ষতিকর মাছির উপদ্রব কমিয়ে কীটনাশকমুক্ত ও স্বাস্থ্যকর শুঁটকি উৎপাদন করা সম্ভব। এ বন্ধ্যাকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করেই মাছি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কক্সবাজারে শুঁটকির উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে ছাড়া হয়েছে ২ লাখ বন্ধ্যা মাছি। আগামী সপ্তাহে দেশের বৃহত্তম শুঁটকিপল্লি শহরের নাজিরারটেকে আরো বড় পরিসরে এ বন্ধ্যা মাছি অবমুক্ত করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের উদ্ভাবিত এই পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিবছর শুঁটকির উৎপাদন প্রায় এক তৃতীয়াংশ বাড়ানো সম্ভব। পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান খাদ্য ও বিকিরণ জীববিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের বিকিরণ কীটতত্ত্ব ও মাকড়তত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. এটিএম ফয়েজুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী বুধবার দুপুরে সোনাদিয়া দ্বীপে দুই লাখ বন্ধ্যা মাছি অবমুক্ত করেন। এ সময় বিএফআরআই’র সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান ড. শফিকুর রহমান, বিকিরণ কীটতত্ত্ব ও মাকড়তত্ত্ব বিভাগের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুহসিনা ইয়াসমিন ও শাহিনুর ইসলাম, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন এবং বৈজ্ঞানিক সহকারী আবুল কালাম আজাদসহ স্থানীয় শুঁটকি উৎপাদকরা উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় শুঁটকি উৎপাদক আমানউল্লাহ জানান, ২০০৭ সালেও সোনাদিয়া দ্বীপে ক্ষতিকর মাছির উপদ্রব কমাতে বন্ধ্যা মাছি ছাড়া হয়েছিল। এরপর ক্ষতিকর মাছির উপদ্রব একদম কমে যায় এবং শুঁটকির উৎপাদন ও গুণগতমানও বৃদ্ধি পায়। সংশ্লিষ্টরা জানায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১২ লাখ টন (১.২মিলিয়ন টন) সামুদ্রিক ও স্বাদু পানির মাছ উৎপাদিত হয়। যার মধ্যে প্রায় ১৫% মাছকে সূর্যের তাপে শুকিয়ে শুঁটকিতে রূপান্তর করা হয়। তবে মাছ রোদে শুকানোর সময় লিওসিনিয়া কাপ্রিয়া নামের এক প্রজাতির ক্ষতিকারক মাছির আক্রমণে প্রায় ৩০% শুঁটকিই নষ্ট হয়ে যায়। দেশের বৃহত্তম শুঁটকি মহাল নাজিরারটেকেই নষ্ট হয়ে যায় বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার শুঁটকি। আর এই মাছির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য শুঁটকি উৎপাদকরা মাছে বিষ প্রয়োগ করছে, অতিরিক্ত লবণ প্রয়োগ করছে। ফলে ভোক্তা ও উৎপাদক উভয়েরই স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এ কারণে শুঁটকির গুণগত মানও কমে যাচ্ছে, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে, বাজার মূল্য কমে যাচ্ছে এবং শুঁটকি মাছ বিদেশে রফতানি করা যাচ্ছে না।

ড. ফয়েজুল বলেন, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি হলো এক ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে কোন এলাকায় বন্যমাছির কয়েকগুণ বন্ধ্যা মাছি ছাড়া হয়। এরপর বন্ধ্যা মাছির সঙ্গে ক্ষতিকর মাছির মেলামেশায় যে ডিম জন্ম হয়, তা থেকে আর বাচ্চা ফোটে না। এভাবে ধীরে ধীরে সেই মাছির বংশ কমে যায়। তবে ক্ষতিকর মাছির নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতি দুই মাস অন্তর একবার করে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে বলে জানান তিনি।

এই জৈব পদ্ধতিতে মশা নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্যও ইতোমধ্যে ‘দ্য স্পেশাল প্রোগ্রাম ফর রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইন ট্রপিক্যাল ডিজিজ (টিডিআর)’ নামে একটি প্রকল্পের অধীনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি এজেন্সি (আইএইএ)-এর একটি চুক্তি সই হয়েছে। ২০১৯ সালের নভেম্বরে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় এই বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতিতে এডিস মশার বংশ নিয়ন্ত্রণ করে চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গি ও জিকার প্রাদুর্ভাব কমিয়ে আনার আশা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি এজেন্সি (আইএইএ)।

আলোকিত রাঙামাটি

সর্বশেষ