রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ , ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১১:২৬, ৩০ অক্টোবর ২০২১

পার্বত্য চট্টগ্রামে মসলা চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা

পার্বত্য চট্টগ্রামে মসলা চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা

মসলা বাগানে দারুচিনি গাছের পরিচর্যা করছেন চাষি যুদ্ধরাম চাকমা।


রন্ধনশালায় খাবারে তৃপ্ততা আনতে মসলার বিকল্প নেই। সেই আদি থেকেই এর প্রচলন তাই মসলার উৎপাদনে দেশের কোনো কোনো অঞ্চলের সুনামও রয়েছে। দেশের মানুষের চাহিদা পূরণে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের নানান খাতের উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অবদান রেখে চলেছে। 

এবার মানুষের রন্ধনশালার খাবারে তৃপ্ততাকে আরো সহজ করতে পাহাড়ি অঞ্চলে মসলার উৎপাদানে সুন্দর প্রকল্প নিয়েছে উন্নয়ন বোর্ড। 

জানা গেছে, বাংলাদেশের নানান অঞ্চলের মধ্যে এক-দশমাংশ হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এ তিনটি জেলা নিয়ে গঠিত এ বৃহৎ অঞ্চল। এ অঞ্চলে রয়েছে অসংখ্য ছোট, বড় ও মাঝারি ধরনের পাহাড়। সমতল জমির অভাবে এ অঞ্চলে ফসল আবাদ সম্প্রসারণের সুযোগ খুবই সীমিত। 

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে চাষিরা তাদের খাদ্যের চাহিদা মিটাতে পাহাড়ের ঢালে জুমচাষ, আদা ও হলুদ চাষাবাদ করে থাকেন এবং দীর্ঘস্থায়ীভাবে পাহাড়ের ঢালে ঢালে উন্নত জাতের উচ্চ মূল্যের মসলা ফসলাদি যেমন- দারুচিনি, তেজপাতা, আলুবোখারা, গোলমরিচ, জুম মরিচ, ধনিয়া, বিলাতি ধনিয়া ইত্যাদি চাষাবাদ করছেন। 

 

পার্বত্য চট্টগ্রামে মসলা চাষে ঝুঁকছের চাষিরা

 

এছাড়াও স্বল্প সময়ে আয়ের জন্য সাথী ফসল হিসেবে পেঁপে, উন্নত জাতের পেয়ারা ও জলপাই চারা সহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজি চাষাবাদ করছেন প্রান্তিক চাষিরা। এর কারণে নিত্য ভোগ্য ফসলের ফল ফলাদির চাহিদাও মিটিয়ে যাচ্ছেন এসব প্রান্তিক চাষিরা। 

দেখা যায়, পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় প্রান্তিক চাষিদের মধ্যে চাষাবাদে ভালো অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে প্রতিনিয়ত ব্যাপকভাবে পাহাড়ের মাটি ক্ষয় হচ্ছে। তাই প্রান্তিক চাষিরা তাদের পরিশ্রমে ফসল, ফল ফলাদির উৎপাদন করলেও পাশাপাশি বড় ক্ষতি হচ্ছে এসব পাহাড়ের। কিন্তু মানুষের চাহিদা পূরণে আমাদের যেমন ফলন বাড়ানো দরকার তেমন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাহাড় পর্বতের সুরক্ষারও দরকার। তাই বিজ্ঞ মহল বলছেন পাহাড়ি এলাকার চাষাবাদে পাহাড়ের মাটি ক্ষয় হবে কিন্তু সেটি হতে হবে সহনীয়। তাই পাহাড়ের চাষাবাদে বিজ্ঞান সম্মতকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। 

রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউপির মোরঘোনা এলাকার মসলা বাগান সৃজনকারী চাষি রতন চাকমা ও যুদ্ধরাম চাকমা জানান, আগে তারা জুমচাষ করতেন। বর্তমানে জুমচাষ ছেড়ে তারা মসলা চাষ করছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড থেকে মসলা বাগান সৃজনের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে এবং আগামী দুই বছরের মধ্যে সৃজিত মসলা বাগান থেকে ফলন সংগ্রহ করা যাবে। 

তারা আরো জানান, পাহাড়ের প্রান্তিক চাষিরা আগে বনজ বৃক্ষ রোপণে আগ্রহী ছিল না। বর্তমানে তাদের সৃজিত বাগান দেখে এলাকার অনেকেই মসলা চাষের দিকে ঝুঁকছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের এ ধারা অব্যাহত থাকলে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাষিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। মসলার আমদানি হ্রাস পাবে এবং মানসম্পন্ন মসলার উৎপাদনের মাধ্যমে দেশীয় চাহিদা পূরণ হবে। 

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় উচ্চ মূল্যের মসলা চাষ’ প্রকল্পটি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে আসছে।

 

জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় উচ্চ মূল্যের মসলা চাষ’ প্রকল্পটি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে আসছে। প্রকল্পটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় তিন পার্বত্য জেলায় ২ হাজার ৬০০ জন চাষি নির্বাচন করা হয়। 

নির্বাচিত চাষিদের বিনামূল্যে আলুবোখরা, দারুচিনি, তেজপাতা, গোলমরিচ ইত্যাদি মসলার চারা-কলম প্রদান করা হয়। তাদেরকে প্রয়োজনীয় সকল কৃষি যন্ত্রপাতি, সার ও রোপন কৌশল সম্পর্কে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এছাড়াও, স্বল্প সময়ে আয়ের জন্য চাষিদের সাথী ফসল হিসাবে পেঁপে চারা, উন্নত জাতের পেয়ারা ও জলপাই চারা এবং বিভিন্ন প্রজাতির সবজির বীজ প্রদান করা হয়। জৈব সার ব্যবহারে উৎসাহিত করার জন্য জৈব সারের পিট তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। 

পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় উচ্চ মূল্যের মসলা চাষ’ প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুর ইসলাম জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক চাষিরা মসলা চাষ করতে খুবই উৎসাহি ও উদ্যমী। প্রকল্পের আওয়তায় রয়েছে, রাঙামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের চাষিরা। এ তিন জেলার চাষিরা সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক চাষিরা ইতিমধ্যে আলুবোখরা চারা কলম করে নিজেরাই বিক্রি করছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড যাদেরকে এ প্রকল্পের আওয়তায় আনতে পারেনি। তারাই অন্য চাষিদের থেকে চারা কলম ক্রয় করে চাষাবাদ করছেন। 

এছাড়াও সাথী ফসল হিসেবে পেঁপে, পেয়ারা ও জলপাই চারাসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজি বীজ প্রদান করা হয়েছে। যাতে ৬ মাসের মধ্যে ফলন আসে। এতে চাষিরা লাভবান হবে। কারণ, মসলার ফলন আসতে প্রায় দুই বছর সময় লাগবে। 

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এক সময় শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন করলেও বর্তমানে বোর্ড আর্থ-সামজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় উচ্চ মূল্যের মসলা চাষ প্রকল্প তেমনই একটি পাইলট প্রকল্প। প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ৬০০ চাষিকে মসলা চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আশা কর যায়, এর মাধ্যমে কৃষকগণ আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবেন এবং এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তিতে তিন পার্বত্য জেলায় ব্যপকভাবে মসলা চাষে অধিক সংখ্যক চাষিকে সম্পৃক্ত করা হবে। 

আলোকিত রাঙামাটি

সর্বশেষ