রাঙামাটি । বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ , ৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ১৪:৩৭, ৩০ মে ২০২৩

আপডেট: ১৪:৪০, ৩০ মে ২০২৩

অস্ত্র ছাড়ার শর্তে কেএনএফের সঙ্গে আলোচনা শুরু হতে পারে

বান্দরবানে শান্তি ফেরাতে উদ্যোগ

অস্ত্র ছাড়ার শর্তে কেএনএফের সঙ্গে আলোচনা শুরু হতে পারে

পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) অস্ত্রধারীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা বলেন, “পাহাড়ে সকলেই যেনো মিলেমিশে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারি, এজন্য সবাইকে এক কাতারে আনার চেষ্টা করছি। যেহেতু সমস্যা সৃষ্টি হয়ে গেছে সেটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার সম্ভব। তাই সকলের মতামত নিয়ে কিভাবে আগের মত সম্প্রীতির বান্দরবানকে শান্তিতে আনা যায় সেই দিকে আগাচ্ছি।”

গত সোমবার (২৯ মে) বান্দরবান শহরের অরুণ সারকী টাউন হলে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সামাজিক নেতাদের সঙ্গে দিনভর এক মতবিনিময় সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা এই মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন।

বান্দরবানে বসবাসরত ১২টি জনগোষ্ঠীর সোশ্যাল কাউন্সিলের প্রতিনিধি, স্থানীয় বাঙালি নেতা, বিভিন্ন পেশাজীবী সাংগঠনের প্রতিনিধিরা এই মতবিনিময়সভায় বক্তব্য দেন।

সভায় একটি সংলাপ কমিটির মাধ্যমে কেএনএফ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা এই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন। সভায় সংলাপ শুরুর জন্য বম সোশ্যাল কাউন্সিলকে উদ্যোগ নিতে বলা হয়।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বান্দরবান রিজিয়নের নবাগত কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম মহিউদ্দিন গত রবিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বলেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের নিরাপত্তাবিধানে সেনাবাহিনীর সব ধরনের সক্ষমতা রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামও বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই অংশে কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা বরদাশত করা হবে না।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, সংকট নিরসনে অস্ত্রের শক্তির চেয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উপায় খুঁজে নেওয়া উত্তম পন্থা। তবে আলোচনা করতে হবে সরকারের সঙ্গে। সরকার যেভাবে চাইবে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সেভাবে কাজ করবে। আলোচনা করতে হলে কেএনএফকে অস্ত্র ত্যাগ করে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ, প্রথাগত জনপ্রতিনিধি প্রতিষ্ঠান হেডম্যান-কার্বারি অ্যাসোসিয়েশন বা নিজেদের সামাজিক নেতাদের (বম সোশ্যাল কাউন্সিল) মাধ্যমে তারা তাদের দাবিদাওয়াসংবলিত আলোচনার প্রস্তাব দিতে পারে।’

অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, কেএনএফও আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের একটি উপায় নির্ধারণে একমত হয়েছে। তারা জানিয়েছে, আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বম সোশ্যাল কাউন্সিলকে দায়িত্ব দিতে হবে।

গতকালের সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বান্দরবান জেলা শাখার সহসভাপতি আবদুর রহিম চৌধুরী, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য সত্যহা পাঞ্জে ত্রিপুরা, মারমা ভাষাবিদ ক্যশৈপ্রু খোকা এবং খেয়াং সম্প্রদায়ের নেতা ম্রা চা খেয়াং।

উল্লেখ্য, বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলার ৯টি উপজেলা নিয়ে একটি ‘কুকি-চিন অঞ্চল’ গঠন এবং সব ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের দাবিতে গত বছর থেকে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করে কেএনএফ। বর্তমানে কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি বা কেএনএ নামে একটি সামরিক শাখা খুলে তারা সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে। তাদের হাতে নিহত হয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তিনজন সদস্য। আহত হয়েছেন দুজন সেনা কর্মকর্তা। কেএনএফের সঙ্গে ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক দলের সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছে আরো কয়েকজন।

অশান্ত পরিস্থিতির কারণে বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার ২০ থেকে ২৫টি গ্রামের মানুষ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।

সূত্র: কালের কণ্ঠ