রাঙামাটি । শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ , ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ১১:১৩, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২

স্কুল-কলেজের নতুন এমপিওভুক্তি শিগগিরই

স্কুল-কলেজের নতুন এমপিওভুক্তি শিগগিরই

নতুন অর্থবছরে বেসরকারি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে আবেদন প্রক্রিয়া। এখন চলছে আবেদনগুলার শেষ পর্যায়ের যাচাই-বাছাই এবং জেলা পর্যায় থেকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট সংগ্রহের কাজ। তবে কবে নাগাদ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার ঘোষণা দেয়া হবে, এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি সরকার।

চলতি মাসের শেষে অথবা আগামী মাসে নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এমপিও হলো মান্থলি পে-অর্ডার বা মাসিক বেতন আদেশ, যার মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন ওই প্রতিষ্ঠানের বদলে পরিশোধ করে সরকার।

জানতে চাইলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফৌজিয়া জাফরীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নতুন এমপিওভুক্তির কাজ অনেকখানি হয়ে গেছে। কিছু রিপোর্ট এখনও হাতে পাইনি। রিপোর্টগুলো পেলে খুব শিগগিরই নতুন এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়া হবে।’

কবে নাগাদ এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়া হতে পারে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজটি শেষ করতে চাই। সম্ভব হলে মার্চে অবশ্যই ঘোষণা দেয়া হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির যাচাই-বাছাই কমিটির এক সদস্য নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নতুন এমপিওভুক্তির কাজ অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। নতুন শিক্ষাসচিব যোগদান করায় কাজ কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আশা করছি, খুব শিগগিরই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়া হতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের ওপর। গতবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী নতুন এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিতে পারেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সব মিলিয়ে এমপিওভুক্তির জন্য প্রায় ৬ হাজার আবেদন জমা হয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং ডিগ্রি স্তরের ৩ হাজার এবং কারিগরি, ভোকেশনাল ও মাদ্রাসা স্তরের ৩ হাজার।

এর আগে গত ৭ নভেম্বর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে এই কমিটিকে সহায়তা করতে আরও চার সদস্যের একটি উপকমিটিও গঠন করা হয়।

এ কমিটিকে সহায়তা করবে ব্যানবেইসের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. আবু তাহের খানের নেতৃত্বে চার সদস্যের কমিটি।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) এমপিওভুক্ত করতে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তিতে ১০ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করতে বলা হয়।

২০১৯ সালে ২ হাজার ৬২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার পর গত বছর আর তা করা হয়নি।

নতুন অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দের যে প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়েছে, তাতে নতুন প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির জন্য ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ২০০ কোটি টাকা এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৫০ কোটি টাকা।

২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর ২ হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে চূড়ান্ত বাছাইয়ে ২ হাজার ৬১৫টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ছাড়পত্র পায়। এরপর আবার ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর ছয়টি এবং ১৪ নভেম্বর একটি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়।

দেশে এ পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হয়েছে এমন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৩৩ হাজার। আর এমপিওভুক্ত হয়নি এখনও প্রায় ৭ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার জন্য গত ২৯ মে সংশোধিত এমপিও নীতিমালা প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে এমপিওভুক্তির জন্য তিনটি শর্ত দেয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার - এই তিন বিষয়ে মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যায় ৩০, পরীক্ষার্থীর সংখ্যায় ৩০ এবং পাসের হারে ৪০ নম্বর রাখা হয়েছে। আগের নীতিমালায় প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতির মেয়াদের ওপর ২৫ নম্বর ছিল, যা সংশোধিত নীতিমালায় বাদ দেয়া হয়েছে।

২০২১ সালের নীতিমালায় কোন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম কতজন শিক্ষার্থী থাকতে হবে, তা বেঁধে দেয়া হয়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী, নিম্ন মাধ্যমিকে শহরে ১২০ ও মফস্বলে ৯০, মাধ্যমিকে শহরে ২০০ ও মফস্বলে ১৫০, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহরে ৪২০ ও মফস্বলে ৩২০, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে শহরে ২৫০ ও মফস্বলে ২২০ এবং ডিগ্রি কলেজে স্নাতকে শহরে ৪৯০ ও মফস্বলে ৪২৫ শিক্ষার্থী থাকতে হবে। পাসের হার স্তরভেদে ৪৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ করা হয়েছে।

গত ৩ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে যে বাজেট উপস্থাপন করেন, তাতে শিক্ষা খাতে ৭১ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে। বরাদ্দ বাড়ানো হয় ৫ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা।