রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ , ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১

খাদ্যে স্বনির্ভর, ৫ মাসেই ৫৬ কোটি ডলার রপ্তানি

খাদ্যে স্বনির্ভর, ৫ মাসেই ৫৬ কোটি ডলার রপ্তানি

বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এবং এর পরবর্তী সংকট মোকাবিলায় কৃষি খাতে নানা উদ্যোগ নেয় সরকার। তারই অংশ হিসেবে ২০২১-২২ বাজেটে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয় কৃষি খাতে। ফলশ্রæতিতে খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলা করে বিদেশে রপ্তানিতেও অনবদ্য নিদর্শন রাখে কৃষি।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সময়ে ৫৫ কোটি ৬৫ লাখ মার্কিন ডলারের কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানি হয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের ওই সময়ে এসব পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ৪৪ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ১০০ কোটি ডলারের কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির মাইলফলক অর্জন করে। সে ধারাবাহিকতায় চলতি বছরে আয় আরো বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।

২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন ফসলের উচ্চফলনশীল এবং প্রতিকূলতা সহনশীল ৯টি জাত উদ্ভাবন ও অবমুক্ত করা হয় এবং ৫০টি জাত নিবন্ধন করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৯৭, ব্রি ধান-৯৮, ব্রি ধান-৯৯, এবং বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)-এর মাধ্যমে ২০২০-২১ মৌসুমে ১.৪৮ লাখ মেট্রিক টন বিভিন্ন ফসলের বীজ উৎপাদন করা হয়। উৎপাদিত বীজ থেকে ১.৩৮ লাখ মেট্রিক টন বীজ কৃষকদের সুলভ মূল্যে বিতরণ করা হয়। সেচ অবকাঠামো নির্মাণ করে সারাদেশে ৩০,১৪৫ হেক্টর সেচ এলাকা সম্প্রসারণ করা হয়। বিএডিসি’র মাধ্যমে ৮৫০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন, ১,৮১,৭৬০ কিলোমিটার ভূপরিস্ত ও ভূগর্ভস্ত সেচনালা নির্মাণ এবং ৪১৩টি সেচ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়।

২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪.৬৩ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া, ৫.২২ লাখ মেট্রিক টন টিএসপি, ৭.৯৮ লাখ মেট্রিক টন এমওপি এবং ১৪.২৪ লাখ মেট্রিক টন টিএপি সার সাশ্রয়ী মূল্যে কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। কৃষি উৎপাদনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার সার, বিদ্যুৎ, ইক্ষু খাতে উন্নয়ন সহায়তা (ভর্তুকি) অব্যাহত রেখেছে। ভর্তুকি বা উন্নয়ন সহায়তা চালু রাখার ফলে একদিকে কৃষক সুষম সার ব্যবহার করতে পারছে এবং অপরদিকে কৃষকের উৎপাদন ব্যয়ও হ্রাস পাচ্ছে।

বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং বিশেষ বিশেষ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি জন্য কৃষককে উদ্বুদ্ধ করতে প্রণোদনা/পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় সর্বমোট ৪৫৮.৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কৃষককে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ (বীজ ও সার) প্রদান করা হয়। এতে ৭৪.৫০ লাখ জন কৃষক উপকৃত হয়। হাওরভুক্ত জেলাসমূহে ২০২০-২১ অর্থবছরে বোরো আবাদের পরিমাণ ৪ লাখ

৫১ হাজার ৭৭০ হেক্টর। করোনা অভিঘাতসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও শতভাগ ধান কর্তন করে কৃষকের ঘরে আনা হয়।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে ৪৩৮.৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় দেশের ৪,৫৫৪ ইউনিয়ন এবং ৩৩০টি পৌরসভায় ১০০টি মোট ৪,৮৮,৪০০টি পারিবারিক সবজি পুষ্টি বাগানের প্রদর্শনী স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফল উৎপাদনে দেশে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। দেশি ফলের উন্নতজাত সম্প্রসারণের পাশাপাশি দেশে চাষ উপযোগী বিদেশি ফল যেমন : ড্রাগন, এভ্যোকাডো, আরবি খেজুর, রামবুটান, পার্সিমনের চাষ বেড়েছে। পাহাড়ি এলাকায় কফি ও কাজুবাদাম চাষ সম্প্রসারণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের জমির আইলে উচ্চমূল্যের গ্রীষ্মকালীন টমেটো, অসময়ের শিম ও তরমুজ চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করতে ভাসমান কৃষির পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তিতে ছাদ কৃষি, হাইড্রোপনিক ও অ্যারোপনিক কৃষি, মাশরুম ও অন্যান্য উচ্চমূল্য ফসল চাষ, সামুদ্রিক শৈবাল চাষ, স্মার্ট কৃষি ইত্যাদি কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশের ১ কোটি ৬০ লাখ কৃষক পরিবার সবজি চাষে জড়িত। বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে ১ কোটি ৬২ লাখ টন সবজি উৎপাদন হয়। কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের ১ কোটি ৩০ লাখ পরিবার প্রতি বছর ১ কোটি ৫ লাখ হেক্টর একর জমিতে ধান চাষ করছে। গত ৫০ বছরে ধানের জমি কমলেও উৎপাদন বেড়েছে। ১৯৭১-৭২ সালে ধান উৎপাদন ছিল প্রায় ১ কোটি ৯ লাখ টন। ২০০৯-১০ সালে দেশে ধান উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৩৮ লাখ টন, সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩ কোটি ৮৭ লাখ টনে পৌঁছেছে। করোনার মধ্যেও বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে উঠে আসে। এ ছাড়া ডাল, তেলজাতীয় শস্য, শাকসবজি ও ফলমূলের উৎপাদনও বাড়ে উল্লেখযোগ্য হারে। ২০০৬ সালে দেশে ২ কোটি ৬১ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়েছিল- যা ২০১৯-২০ সালে বৃদ্ধি পেয়ে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৩ হাজারে উন্নীত হয়।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার খুবই দ্রুত অনুধাবন করে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে কৃষিই পারে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে। যেখানে করোনার শুরুতে ধারণা করা হচ্ছিল যে দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে, সে সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলায় রাখছে অনবদ্য নিদর্শন। কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরবর্তী সময়ের সরকারের নেয়া সব পদক্ষেপ সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হওয়ায় দেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন হয়ে বিদেশেও রপ্তানি করছে।

আলোকিত রাঙামাটি

সর্বশেষ