রাঙামাটি । শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ , ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ১৩:১৩, ৭ জুলাই ২০২২

মীনা কার্টুনের নেপথ্যের গল্প

মীনা কার্টুনের নেপথ্যের গল্প
ফাইল ছবি

মীনা ৯ বছর বয়সী একটি উচ্ছল, প্রাণবন্ত ও সাহসী মেয়ে। যে তার গ্রামের সামাজিক সমস্যা পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করে। মীনা কার্টুনের নামটি বললে মনে পরে যায় গোলাপি স্কার্ট পরা একটি মেয়ের কথা। আর কানের কাছে বেজে ওঠে ‘আমি বাবা মায়ের শত আদরের মেয়ে’ গানটি। যা মনে করিয়ে দেয় একটি মেয়ের অনেক স্বপ্ন আর সম্ভাবনার নানা দিক। জেনে নেয়া যাক মীনা কার্টুনের নেপথ্যের গল্প।

৯ বছর বয়সী মেয়ে মীনা


দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মেয়েশিশুদের যেসব সমস্যা রয়েছে, তার সুন্দর সমাধান মীনা কার্টুন সিরিজগুলোর মাধ্যমে সহজভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মীনা কার্টুন দক্ষিণ এশিয়ার মোট ২৯টি ভাষায় নির্মিত একটি জনপ্রিয় টিভি ধারাবাহিক। ১৯৯৩ সালে প্রথম এটি টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। প্রথমে মীনার ১৩টি পর্ব বানানো হয়েছিল। এটি প্রচার করা হয়েছিল সার্কভুক্ত সাতটি দেশের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে।

নব্বইয়ের দশকে সাবেক চেকোস্লোভাকিয়ার সমাজ পরিবর্তনে অ্যানিমেটেড ফিল্ম দারুণ ভূমিকা রেখেছিল। তৎকালীন ইউনিসেফের অনুষ্ঠান ও যোগাযোগ বিভাগের প্রধান নিল ম্যাককির মাথায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্যেও এমন কিছু করার আইডিয়া ঘুরছিল। ম্যাককির নির্দেশনায় ইউনিসেফের যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ শামসুদ্দিন আহমেদ এর পরিকল্পনা করেন। ডেনমার্কের আর্থিক সহায়তায় তৈরি করা হয় অ্যানিমেশন কার্টুন, যার প্রধান চরিত্র হলো মীনা।

মীনা, রাজু ও তাদের দাদি


কেন্দ্রীয় চরিত্রে নাম নির্বাচনেও কম খাটুনি হয়নি। সাতটি দেশে এই কার্টুন প্রচারিত হবে, তাই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নামের দরকার পড়েছিল। সে বিবেচনা থেকে মীনা নামটি গৃহীত হয়। ভারত, শ্রীলংকায় ‘মীনাক্ষী’ নামটি প্রচলিত, আবার ‘আমিনা’ নামের সঙ্গে মিল থাকায় এ নাম নিয়ে আপত্তি ছিল না পাকিস্তানেরও। শামসুদ্দিন আহমেদ মীনা নামটি প্রস্তাব।

রফিকুন নবী প্রথম মীনা, রাজুকে আঁকেন। মুস্তাফা মনোয়ার একটি ল্যান্ডস্কেপ তৈরি করেন। প্রথম পর্বের দোকানদার ও মুরগি চুরি করে নিয়ে যাওয়া চোর ও  দোকানদারের চরিত্র তৈরি করেন শিশির ভট্টাচার্য।

দোকানদার ও মুরগি চুরি করে নিয়ে যাওয়া চোর ও  দোকানদারের চরিত্র তৈরি করেন শিশির ভট্টাচার্য


সিন্ধি ভাষায় মীনা শব্দের অর্থ হচ্ছে আলো। মীনা কার্টুনের মাধ্যমে সমাজে আলো ছড়ানোর কাজটিই করা হয়েছে। এর মাধ্যমে যেসব বিষয়ে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে তার মধ্যে আছে- বাল্যবিবাহ বন্ধ করা, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নির্মাণ ও ব্যবহারে উৎসাহিত করা, মেয়েদের স্কুলে পাঠানো, কমবয়সী মেয়েদের বিয়ে থেকে স্কুলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া, যৌতুক বন্ধ করা, ছেলে-মেয়ে সমান পুষ্টি ও সুযোগ-সুবিধার দাবিদার, প্রয়োজনীয় ও সমঅধিকার পেলে মেয়েরাও অনেক কিছু হতে পারে তা বোঝানো, শহরের বাসায় বাসায় কাজে সাহায্য করে এমন মেয়েদের প্রতি সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা ও তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা নিশ্চিত করা ইত্যাদি। 

মীনা কার্টুনের একটি দৃশ্য


ফিলিপাইনের ম্যানিলাতে অবস্থিত হান্না-বারবারা স্টুডিওতেও মীনার প্রথম দিককার বেশ কিছু পর্ব নির্মিত হয়। পরে ভারতের রাম মোহন স্টুডিওতে মীনার বাকি পর্বগুলো নির্মাণ করা হয়। সিরিজগুলো পরিচালনা করেছিলেন রাম মোহন। রাম মোহনকে বলা হয় ‘ফাদার অফ ইন্ডিয়ান অ্যানিমেশন’। ইন্ডিয়ার অ্যানিমেশন ইন্ডাস্ট্রির একরকম তার হাত ধরেই যাত্রা শুরু। বাংলাদেশের মানুষ তাকে চেনেন তার সৃষ্টি মীনা চরিত্রটি দিয়ে। রাম মোহন প্রতিটি চরিত্রের পোশাক কী হবে, তাদের অবয়ব কী হবে, সেগুলো আঁকেন।

মীনা কার্টুনের প্রথম পর্ব ‘মুরগিগুলো গুণে রাখ’ ফিলিপাইনে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যানিমেশন স্টুডিও হানা বারবারায় তৈরি করা হয়। পরে মীনা কার্টুন মুম্বাইয়ের রাম মোহন স্টুডিওতে তৈরি হয়। প্রথম দিকের পর্বগুলোতে মীনার হয়ে কণ্ঠ দিয়েছিল ভারতের রাজশ্রী নাথ। মিঠুর কণ্ঠটি দিয়েছিলেন চেতন শশীতল। এখন অন্যরা দিচ্ছেন। কার্টুনের থিম গানের গায়িকা বলিউডের সুষমা শ্রেষ্ঠ।

মীনা স্কুলে যায়


এখন বাংলাদেশেই মীনা কার্টুন তৈরি হয়। মীনা কার্টুন তৈরিতে র্যাচেল কার্নেগি ইউনিসেফের মীনা প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। বাংলাদেশে মীনা কার্টুনে মীনার কণ্ঠ প্রমিতা গাঙ্গুলীর। ফারজানা ইসলাম তিথিও মাঝেমধ্যে কণ্ঠ দিয়ে থাকেন। আবরার সাজিদ পাশা দিচ্ছেন রাজুর কণ্ঠ। মিঠুর কণ্ঠ দেন কামাল আহসান বিপুল।