রাঙামাটি । মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ , ২ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৮:৪৮, ৯ অক্টোবর ২০১৯

লক্ষ্য করেছেন কি? আজকের তারিখটি ব্যতিক্রম...

লক্ষ্য করেছেন কি? আজকের তারিখটি ব্যতিক্রম...

ছবি- সংগৃহীত


রায়মনি ময়রা, নিধুরাম রাধুনি, সুবললাল বসু, হারান রাহা, দেবী দে, এবং সর্বোপরি রামাকান্ত কামার – এদের মধ্যে মিল কোথায় বলুন তো?  সবাই মানুষ! ভাগ্যিস বললেন। যাহোক মজা ছাড়ুন, নামগুলোকে খুঁটিয়ে দেখলেই খুঁজে পাবেন একটা চমকপ্রদ ব্যাপার। ডান-বাম যেদিক থেকেই পড়ুন নামগুলো একই থাকে, বদলায় না। ডান-বাম জোট বলতে পারেন। এমন শব্দ, সংখ্যা বা বাক্যবন্ধকে ইংরেজিতে বলা হয় প্যালিনড্রোম (palindrome)। মূলে আছে গ্রিক শব্দ ‘প্যালিনড্ৰোমাস’। ইংরেজিতে অর্থ করলে দাঁড়ায় 'Running back again'।

আজকের দিনটিও কিন্তু একটি প্যালিনড্রোম দিবস। তারিখ তাই বলে। ৯-১০-২০১৯। এই তারিখটি উল্টো করে লিখুন। সেই ৯১০২০১৯! ম্যাজিক।

প্যালিনড্রোম কি?

যদি শব্দ নিয়ে বিভিন্ন শব্দের খেলা খেলে থাকেন তবে প্যালিনড্রোম নামটি শুনে থাকবেন। প্যালিনড্রোম মানে হলো যে শব্দকে সামনে থেকে বা পিছন থেকে পড়লে শব্দের উচ্চারণ আর অৰ্থের কোনো বদল হয় না। যেমন: সরস, লরেল ইত্যাদি। 

বাংলা ভাষায় প্যালিনড্রোম-

বিভিন্ন ভাষায় প্যালিনড্রোমের উদাহরণ নেহাত কম নয়। বাংলাভাষাতেই প্রচুর আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুরুতেই নাম নিতে হয় প্রবাদপ্রতিম শরৎচন্দ্র বসুর। যাকে আমরা ভালোবেসে দাদাঠাকুর বলেই ডেকে এসেছি। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি বাংলাভাষায় প্ল্যালিনড্রোম নিয়ে গভীর চর্চা করেছেন। সেই সময়ের বিখ্যাত পত্রিকা ‘বিদূষক’-এর সম্পাদক ছিলেন তিনি। সেই পত্রিকাতেও প্যালিনড্রোম সংক্রান্ত নানা লেখা লিখেছেন। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো একটি লেখার নিম্নলিখিত অংশটি, যার প্রত্যেকটি লাইনই এক-একটি প্যালিনড্রোম–

“রাধা নাচে অচেনা ধারা
রাজন্যগণ তরঙ্গরত, নগণ্য জরা
কীলক-সঙ্গ নয়নঙ্গ সকল কী? 
কীর্তন মঞ্চ ‘পরে পঞ্চম নর্তকী”

বাঙালিকে অনেক প্যালিনড্রোম উপহার দিয়েছেন শরৎচন্দ্র বসু। যেমন- ‘চেনা সে ছেলে বলেছে সে নাচে, কেবল ভুল বকে, দাস কথা থাকো সদা, থাক রবি কবির কথা ইত্যাদি। এমনকি, তার জন্মসাল ১৮৮১-ও একটি প্যালিনড্রোমিক বছর। 

শরৎচন্দ্র বসুই প্রথম জানান, ইংরেজিতে ‘eye’ শব্দটি একটি প্যালিনড্রোম এবং তার বাংলা প্রতিশব্দ ‘নয়ন’ও একটি প্যালিনড্রোম।

অন্যান্য ভাষার মধ্যে ইংরেজিতে সবচেয়ে বেশি প্যালিনড্রোম শব্দের সংখ্যা আছে। বাক্যও আছে বেশ কিছু। ‘Madam’, ‘Level’, ‘Race car’, ‘Civic’, প্রমুখ শব্দগুলো খুব সরল কয়েকটি প্যালিনড্রোমের উদাহরণ। খ্রিষ্টমতে মানবমুখ-সঞ্জাত প্রথম বাক্যটিই নাকি একটা প্যালিনড্রোম– Madam, I’m Adam.

গণিতেও প্যালিনড্রোমের ভুরি-ভুরি উদাহরণ। ১ দিয়ে তৈরি সমসংখ্যক অঙ্কের দুটি সংখ্যার গুণফল সবসময় প্যালিনড্রোমিক হবে- ১১x১১=১২১, ১১১x১১১=১২৩২১, ১১১১x১১১১=১২৩৪৩২১... এই ক্রমে। এমন অনেক সংখ্যা আছে, যেগুলোর বর্গ প্যালিনড্রোম। যেমন ১১-এর বর্গ ১২১, ২২-এর বর্গ ৪৮৪, ১২১-এর বর্গ ১৮৬৪১ ইত্যাদি।

ভাষা থেকে গণিত থেকে এমনকি জৈবপ্রযুক্তিতেও প্যালিনড্রোম জগতের পরিধি কম নয়। আজ ৯ অক্টোবর, ২০১৯ দিনও সেই প্যালিনড্রোমিক বিশ্বেরই একটি অংশ।

আর, এই লেখাটার মোট শব্দসংখ্যা কত গুনে দেখেছেন কি? ৩৮৩। ঠিক বলছেন, এটাও প্যালিনড্রোম!

আলোকিত রাঙামাটি