রাঙামাটি । শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ , ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ১০:৪০, ২৮ জুলাই ২০২১

বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস আজ

বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস আজ

বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস আজ। ছবি: সংগৃহীত


বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস আজ। ২০০৮ সালের ২৮ জুলাই বিশ্ববাসীকে সচেতন করতে হেপাটাইটিস দিবস পালনের উদ্যোগ নেয় ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স’। ২০১১ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসটিকে স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকে প্রতিবছর ২৮ জুলাই দিবসটি পালন করা হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হবে।

হেপাটাইটিস দিবস ২০২১ -এর থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ' হেপাটাইটিস কান্ট ওয়েট '। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাইরাস ঘটিত হেপাটাইটিস নির্মূলকরণের লক্ষ্য কর্মসূচিকে (২০৩০) সফল করতে এই দিবসের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে (যে কর্মসূচির ফলে নতুন সংক্রমণ ৯০% ও মৃত্যু ৬৫% কমে গিয়েছে)।

নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী বারুচ স্যামুয়েল ব্লুমবার্গ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের আবিষ্কার করেন, এই রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করেন এবং টিকাকরণ শুরু করেন। চিকিৎসাবিদ্যায় তার এই অবদানকে স্বীকৃতি জানাতে ২৮ জুলাই তার জন্মদিনে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালন করা হয়।

হেপাটাইটিস এক নীরব ঘাতক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে প্রায় ১ কোটি মানুষ আক্রান্ত। বেসরকারি হিসাবে হেপাটাইটিসে প্রতি বছর ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় দেশে। হেপাটাইটিস নিয়ে উদ্বেগের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে সারা বিশ্বে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে সংক্রমিত ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই জানেন না যে তার শরীরে এই ভাইরাস আছে।

লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ হেপাটোলজি সোসাইটির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জন্ডিস নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের শতকরা ৭৬ ভাগ হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দূষিত রক্ত, সিরিঞ্জ, মা থেকে সন্তানের দেহে এবং অনৈতিক মেলামেশার কারণে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ছে। সাবধানতা অবলম্বনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তারা।

হেপাটাইটিস কি?

হেপাটাইটিস হলো যকৃতের এক প্রকার প্রদাহ। দু’প্রকারের হেপাটাইটিস রয়েছে- তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী। দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বেড়ে গেলে, পরবর্তীকালে তা থেকে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সার হতে পারে। পাঁচ প্রকারের হেপাটাইটিস ভাইরাস হয়- হেপাটাইটিস এ ভাইরাস (এইচএভি), হেপাটাইটিস বি ভাইরাস (এইচবিভি), হেপাটাইটিস সি ভাইরাস (এইচসিভি), হেপাটাইটিস ডি ভাইরাস (এইচডিভি) এবং হেপাটাইটিস ই ভাইরাস (এইচইভি), সারা বিশ্ব জুড়ে হেপাটাইটিসের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো এই ভাইরাসগুলো।

এই হেপাটাইটিস বি এবং সি দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ তৈরি করে, দীর্ঘ সময় কখনো কখনো বছর বা দশক ধরে এর কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় না এবং তারপরে এটাই লিভার ক্যান্সারের মূল কারণে পরিণত হয়। সর্বজনীন স্বাস্থ্য অন্তর্ভুক্তির প্রেক্ষাপটে বলা যেতে পারে, হেপাটাইটিস প্রতিরোধ ও চিকিৎসার ফলে হেপাটাইটিস বি এবং সি’র কারণে সংক্রমণ ও মৃত্যু হ্রাস পাবে।

হেপাটাইটিস বি এবং সি একসঙ্গে মৃত্যুর সর্বাধিক সাধারণ কারণ হিসাবে পরিচিত, প্রতি বছর ১.৩ মিলিয়ন মানুষের প্রাণহানি ঘটে। কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন সময়ে, ভাইরাল হেপাটাইটিসের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০৩০ সালের মধ্যে ভাইরাল হেপাটাইটিস নির্মূল করার জন্য সব দেশকে একত্রে কাজ করার জন্য নিম্নলিখিত পরামর্শ দিয়েছে- 

প্রতিরোধ-নবজাতকের মধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধ। সব নবজাতকের জন্মের সময় হেপাটাইটিস বি-এর টিকা দেওয়া উচিৎ, তারপরে কমপক্ষে দুটি অতিরিক্ত মাত্রা বা ডোজ দিতে হবে।

সংক্রমণ রোধ-মায়ের থেকে সন্তানের মধ্যে সংক্রমণ রোধ করতে হবে। সব অন্তঃসত্ত্বা নারীদের নিয়মিত হেপাটাইটিস বি, এইচআইভি এবং সিফিলিসের জন্য পরীক্ষা করতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। কেউ যেন পিছিয়ে না থাকে। মাদক সেবনকারী, বন্দী, অভিবাসী প্রত্যেকের হেপাটাইটিস প্রতিরোধ, পরীক্ষা ও চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া উচিৎ।

সম্প্রসারণ- পরীক্ষা এবং চিকিৎসার প্রাপ্যতা প্রসারিত করতে হবে। সময় মতো ভাইরাল হেপাটাইটিসের পরীক্ষা ও চিকিৎসা করালে যকৃতের ক্যান্সার এবং লিভারের অন্যান্য গুরুতর রোগ প্রতিরোধ করা যাবে।

বজায়- কোভিড-১৯ চলাকালীন সময়েও প্রয়োজনীয় হেপাটাইটিস পরিষেবাগুলো বহাল রাখতে হবে। মহামারির মধ্যেও হেপাটাইটিস প্রতিরোধ ও যত্ন পরিষেবাগুলো প্রয়োজনীয়, যেমন- শিশু টিকাদান, ক্ষতি হ্রাসকরণ পরিষেবা এবং দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি-এর চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

আলোকিত রাঙামাটি

সর্বশেষ