রাঙামাটি । শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ , ৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্য ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১০:২৩, ২৮ জুলাই ২০২২

হেপাটাইটিস কি, জেনে নিন এর ধরন ও লক্ষণ

হেপাটাইটিস কি, জেনে নিন এর ধরন ও লক্ষণ
ফাইল ছবি

আজ বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। এ বছরের হেপাটাইটিস দিবসের ‘হেপাটাইটিস ক্যান নট ওয়েট অর্থাৎ হেপাটাইটিস নির্মূলের এখনই সময়’। প্রতিপাদ্যে হেপাটাইটিস নির্ণয় ও এর চিকিৎসার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ দশমিক ৫ ভাগ মানুষ হেপাটাইটিস বি এবং শতকরা শূন্য দশমিক ৬ ভাগ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের বাহক। তাদের মধ্যে অনেকে দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশনে নানা জটিল লিভার রোগে আক্রান্ত। বর্তমানে দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত। হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসকে ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য লক্ষণ দেখা যায় না।

হেপাটাইটিস কি? 

সহজ ভাষায়, হেপাটাইটিস হলো লিভারের প্রদাহ। সাধারণত দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। রোগের বিস্তার না ঘটা পর্যন্ত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো নির্দিষ্ট লক্ষণ ধরা পরে না। হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হলে শরীর দুর্বল, বমি বমি ভাব, পেটব্যথা, শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করা এবং হলুদ প্রস্রাবের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। 

হেপাটাইটিস লিভারের কার্যক্ষমতা আস্তে আস্তে কময়ে দিতে শুরু করে। জানেন কি, প্রতি বছর লিভারের এই রোগে বিশ্বব্যাপী এক কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। তবে এই রোগ ছোঁয়াচে নয়।

বর্ষার এ সময় ডেঙ্গুসহ নানা রোগের পাশাপাশি করোনা সংক্রমণও ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। তবে এই সময় হেপাটাইটিস রোগেরও প্রাদুর্ভাবও ঘটে থাকে। তাই সতর্ক থাকা জরুরি। সাধারণত দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে এই রোগ শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

শরীরে রোগের বিস্তার না ঘটলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট লক্ষণ ধরা পরে না। তবে দীর্ঘদিন শরীরে হেপাটাইটিস বাসা বাঁধলে যখন তা লিভারে আক্রমণ করে, তখন নানা লক্ষণ প্রকাশ পায়।

যেমন- শরীর দুর্বল, বমি বমি ভাব, পেটব্যথা, শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করা এবং হলুদ প্রস্রাবের মতো উপসর্গ ইত্যাদি। শরীরে এই রোগের বিস্তার ঘটলে পেটে জল আসা, রক্ত পায়খানা ও রক্তবমি হতে পারে।

হেপাটাইটিসের বিভিন্ন ধরন ও লক্ষণসমূহ

হেপাটাইটিসের ৫টি ভাইরাস হলো এ, বি, সি, ডি এবং ই। এর মধ্যে টাইপ-বি এবং সি মারাত্মক রূপ নেয় এবং লিভার সিরোসিস এবং ক্যান্সারের মতো মারাত্মক আকার ধারণ করে। প্রাথমিক অবস্থায় তা চিকিত্সা না করলে গুরুতর হয়ে ওঠে এবং লিভার সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।

হেপাটাইটিস এ

দূষিত খাবার এবং জলের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। এ রোগের ক্ষেত্রে, লিভার ফুলে যাওয়া, ক্ষিদে কমে যাওয়া, জ্বর, বমি এবং জয়েন্টে ব্যথা মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এসব লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে।

হেপাটাইটিস বি

এই ভাইরাসটি রক্ত, ঘাম, লালা, বীর্যসহ বিভিন্ন দেহনিঃসৃত তরলের মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণত রক্তে অবস্থিত ভাইরাস এবং এর বিরুদ্ধে অবস্থিত অ্যান্টিবডি থেকে এ রোগ নির্ণয় করা হয়।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস লিভারে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এ কারণে রোগীর বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, কোলিক, ত্বকের হলুদ রঙের মতো সমস্যা দেখা দেয়।

এটি সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী লিভার রোগ যা লিভার সিরোসিস এবং ক্যান্সারের রূপ নেয়। যদি কোনো গর্ভবতী নারী এতে আক্রান্ত হন; তবে তার গর্ভস্থ শিশুও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

হেপাটাইটিস সি

হেপাটাইটিস এ এবং বি এর চেয়েও বেশি বিপজ্জনক এই ভাইরাসটি। রক্ত দেওয়া-নেয়া, শিরায় ইনজেকশনের মাধ্যমে বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগের সময় যদি জীবাণুযুক্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়, সেখান থেকে হেপাটাইটিস সি এর সংক্রমণ হয়। পৃথিবী জুড়ে আনুমানিক ১৩০-১৭০ মিলিয়ন লোক হেপাটাইটিস সি রোগে আক্রান্ত।

হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত ব্যক্তির তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না। তবে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের ফলে লিভারের ক্ষত এবং বেশ কয়েক বছর পর সিরোসিস সৃষ্টি করে।

আবার অনেক সময় সিরোসিস আক্রান্ত ব্যক্তির লিভার অকার্যকর, যকৃতের ক্যান্সার, বা খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর শিরা স্ফীত হতে পারে। যার ফলে রক্তক্ষরণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়াও ত্বকে চর্মরোগ দেখা দিতে পারে।

হেপাটাইটিস ডি

হেপাটাইটিস বি এবং সি রোগীদের ঝুঁকি থেকে বেশি থাকে এই ভাইরাসে। এটি দূষিত রক্তের সংক্রমণ, সংক্রামিত সূঁচ ব্যবহার বা শেভিংয়ের অন্যান্য কিটগুলির ব্যবহারের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। লিভারের সংক্রমণের ফলে বমি ও হালকা জ্বর হয়।

হেপাটাইটিস ই

এই ভাইরাস দূষিত খাবার দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগে আক্রান্ত হলে রোগী ক্লান্তি, ওজন হ্রাস, ত্বকের হলুদ হওয়া এবং হালকা জ্বর অনুভব করে। এ সংক্রমণের ফলে রোগী ক্লান্তি, ওজন হ্রাস, ফ্যাকাশে ত্বক ও চেহারা এবং জ্বরের মতো লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।

হেপাটাইটিসের বিভিন্ন ধরন ও লক্ষণ যদি আপনার শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে মিলে যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে।

সূত্র: হেলথলাইন