রাঙামাটি । বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ , ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১২:৪৫, ২ অক্টোবর ২০২২

দেশে এবার চোখ ওঠার প্রকোপ বেড়েছে

দেশে এবার চোখ ওঠার প্রকোপ বেড়েছে
ফাইল ছবি

দেশে ‘চোখ ওঠা’ রোগ বেড়ে গেছে। অন্য বছরের এ সময়ের তুলনায় এবার রোগী কিছুটা বেশি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী বেড়ে গেছে। এমনও দেখা গেছে, কোনো কোনো পরিবারের সব সদস্যই আক্রান্ত হয়েছেন।

এমন অবস্থায় রোগীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা গণমাধ্যমকে বলেছেন, সাধারণত ৩-৫ দিনেই মধ্যেই চোখ ওঠা রোগ এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে এই সময়ের মধ্যে ভালো না হলে তাকে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। যারা চাকরি করে ও যেসব বাচ্চা স্কুলে যায়, তাদের চোখ ওঠা রোগ হলে অবশ্যই ছুটি নিতে হবে। কারণ এটা সংক্রামক ব্যাধি।

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে এখন যত রোগী, তাদের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ চোখ ওঠা রোগী দেখা যাচ্ছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার একটু বেশিই মনে হচ্ছে। এটা সিজনাল ডিজিজ। সাধারণত এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে বেশি হলে চিকিৎসা লাগে। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ও চোখে ড্রপ দিলে ভালো হয়ে যায়।

একই হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. দীপক কুমার নাগ বলেন, চোখ ওঠা রোগ একদম বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই আমরা চেম্বারে রোগী পাচ্ছি। হাসপাতালেও রোগীদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমাদের প্রত্যেকের চেম্বারে আমরা প্রতিদিন ৪-৫ জন করে রোগী পাচ্ছি। চোখ লাল, চোখ ফুলে গেছে, চোখে আরাম পাচ্ছে না, চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, চুলকাচ্ছে এরকম উপসর্গ নিয়ে রোগীরা আসছে। আমরা ধারণা করছি, এগুলো ভাইরাল ইনফেকশন (ভাইরাসজনিত সংক্রমণ)। সম্ভবত এডিনো ভাইরাস সংক্রমণের মূল কারণ।

এবার কিছুটা ব্যতিক্রম: চোখ ওঠা রোগ সাধারণত এক ধরনের ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ। এডিন নামক এক ধরনের ভাইরাস এই রোগের মূল কারণ। তবে এবার ধরন দেখে চিকিৎসকরা কিছুটা ব্যতিক্রম বলে মনে করছেন। এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, সাধারণত চোখ ওঠা রোগ এক ধরনের ভাইরাসের দ্বারা হয়। তবে এবার ধরন দেখে মনে হচ্ছে, এবারেরটা ব্যাকটেরিয়াজনিত। কারণ এবারের রোগীদের চোখে পিচুটি হচ্ছে। ভাইরাসের দ্বারা হলে পিচুটি হয় না। ভাইরাসজনিত চোখ ওঠাটাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ব্যাকটেরিয়াজনিত চোখ ওঠা অতটা ঝুঁকিপূর্ণ না।

কালো চশমায় সংক্রমণ কম ছড়ায়: এই দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আক্রান্তদের কালো চশমা পরার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, সম্ভব হলে একটা কালো সানগ্লাস ব্যবহার করা যেতে পারে, যাতে চোখের জীবাণু অন্য জায়গায় ছড়িয়ে না পড়ে। এতে ভাইরাস ছড়াবে কম। কালো চশমা পরলে ভালো। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির চোখে রোদ বা আলো পড়লে চোখে অস্বস্তি লাগে।

প্রথম ৩-৫ দিন খুবই সতর্ক থাকতে হবে: অধ্যাপক ডা. দীপক কুমার নাগ বলেন, চোখ ওঠার ৩-৫ দিন রোগীদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে। যেমন চোখে হাত দিয়ে কচলানো যাবে না। কারণ হাত দিয়ে কচলানোর পর ওই হাত দিয়ে যা ধরবে, সেটার মাধ্যমে অন্যরা সংক্রমিত হবে। চোখ চুলকালে সুতির কাপড়ের ছোট ছোট টুকরো ব্যবহার করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাড়ির অন্যদের থেকে একটু দূরত্ব রক্ষা করে চলতে হবে। কাপড়চোপড় অন্যদের কাপড়চোপড় থেকে আলাদা রাখতে হবে। চোখ যাদের ওঠে, তাদের সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে হবে।

রোগীদের প্রতি পরামর্শ: অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, রোগীদের প্রতি আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, এটা যেহেতু ছোঁয়াচে রোগ, তাই যার হয়েছে, তিনি চোখে হাত দেওয়ার পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেললে তার মাধ্যমে অন্যরা আক্রান্ত হবে না। কারণ আক্রান্তরা যদি কোনো জায়গায় হাত দেয়, সেই জায়গায় অন্যরা হাত দিলে বা স্পর্শ করলে তারাও আক্রান্ত হবে। আমরা প্রতিদিন রোগী দেখছি। আমাদের হচ্ছে না। কারণ আমরা সতর্ক আছি। রোগী দেখি, হাত ধুয়ে ফেলি। রোগীও যদি বাসায় সতর্ক থাকে, তার বাসায় অন্যদের হবে না। 

এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরো বলেন, যেসব রোগী বাসায় আছেন, তাদের ব্যবহৃত রুমাল, গামছা, কাপড়চোপড় অন্যরা যাতে ব্যবহার না করে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে।