রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ , ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রেকিং

পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব : কাপ্তাইয়ে প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাপার্বত্যাঞ্চলের পরিস্থিতি অবনতি ঘটলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে : বীর বাহাদুর ঊশৈসিং এমপিসাজেকে নিহত ৯ জনের ময়নাতদন্ত শেষে হস্তান্তর, আহত ২ শ্রমিককে ঢাকায় প্রেরণকাপ্তাই হ্রদে ৩ মাসের জন্য মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শুরুকেএনএফ প্রধান নাথান বমের স্ত্রী ‘নিখোঁজ’সাজেকে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯, পরিচয় মিলেছে ২ জনের!তীব্র তাপদাহ: জনগণকে সচেতন করতে প্রচারণায় নেমেছে রাঙামাটি স্বাস্থ্য বিভাগকাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫ ইউনিটের ৪টিই বন্ধ, উৎপাদন কমে ৩০ মেগাওয়াট

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৩:০৬, ৭ মার্চ ২০২৩

উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে আমাদের ভুল ধারণাগুলো

উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে আমাদের ভুল ধারণাগুলো
ফাইল ছবি

আমাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে কিছু ভুল ধারণা চালু আছে। এসব ভুল ধারণার জন্য অনেককে অনেক রকম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ভোগান্তি থেকে মুক্তির জন্য এবার চলুন ভুল ধারণাগুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-

(১) কম বয়সে উচ্চরক্তচাপ হয় না : অনেকে মনে করেন উচ্চরক্তচাপ বয়স্কদের রোগ। আসলে তা ঠিক নয়। অল্প বয়সেও উচ্চরক্তচাপ দেখা দিতে পারে। অতি লবণযুক্ত ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ওযন বৃদ্ধি, খেলাধুলা, ব্যায়াম, কায়িক শ্রমের অভাবে অল্প বয়সীদের মধ্যেও উচ্চরক্তচাপের প্রবণতা বাড়ছে। আবার বিভিন্ন ধরনের অসুখ যেমন বংশগত কিডনি রোগ, কিডনির প্রদাহ, ত্রুটিপূর্ণ কিডনি, কিডনির রক্ত নালির সমস্যা বা কিডনিতে টিউমার হ’লে রক্তচাপ বাড়তে পারে। হরমোনজনিত সমস্যা, মস্তিষ্কের টিউমার, রক্তনালির প্রদাহ এবং স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবনের ফলে উচ্চরক্তচাপ কম বয়সেও হ’তে পারে।

(২) বয়স বাড়লে রক্তচাপ বাড়বেই : বয়স হলে রক্তচাপ একটু বেশিই থাকে, এজন্য চিন্তার কিছু নেই। এমন ধারণা সঠিক নয় যে, উচ্চরক্তচাপ যে বয়সেই ধরা পড়ুক তাকে উচ্চরক্তচাপ হিসেবে গণ্য করা উচিত। উচ্চরক্তচাপকে স্বাভাবিক না ভেবে নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা নিলে জটিলতা এড়ানো সহজ হয়।

(৩) উপসর্গ নেই, চিকিৎসা নেব কেন?: আমার কোনো শারীরিক সমস্যা নেই, মাথা ব্যথা বা ঘাড় ব্যথা নেই, মাথাও ঘোরে না। এমনকি মাথা ঝিমঝিমও করে না। আমার উচ্চরক্তচাপ থাকতেই পারে না। এমন ধারণা করা ভুল। কেননা অনেক ক্ষেত্রে উচ্চরক্তচাপের কোনো উপসর্গ থাকে না। তাই নিয়মিত রক্তচাপ মাপা ছাড়া উচ্চরক্তচাপ শনাক্ত করার কোনো উপায় নেই।

(৪) ডিম, দুধ ও গোশত খাওয়া নিষেধ : অনেকের ধারণা উচ্চরক্তচাপ হলে ডিম, দুধ ও গোশত খাওয়া নিষেধ। এসমস্ত খাবার খেলে রক্তচাপ বাড়বে এমন ধারণা ঠিক নয়। লবণ খেলে রক্তচাপ বাড়ে বটে কিন্তু দুধ, ডিমের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তবে উচ্চরক্তচাপ ধরা পড়লে, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে ঘি, মাখন, ডালডা এগুলো দিয়ে রান্নাকৃত খাবার, দুধের সর, ভাজাপোড়া ও লাল গোশত যেমন- গরু বা খাসির গোশত, কোমল পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত। সরবিহীন পাতলা দুধ রোজ খাওয়া যায়। ডিম বা মুরগির গোশত নিয়মিত খেতে কোনো বাধা নেই।

(৫) লবণ ভেজে খাওয়া যাবে এমন ধারণা করা : উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাবারে বাড়তি লবণ নিষেধ। বাড়তি লবণ খাওয়ার ফলে উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি বাড়তে পারে। অনেকের ধারণা করেন ভাজা লবণ খাওয়া যাবে। আসলে লবণ যেভাবেই খান উচ্চরক্তচাপ বাড়বে। এটা অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

(৬) ঘাড়ের ব্যথা মানে রক্তচাপ বেশি : ঘাড়ের ব্যথা হলে কেউ কেউ মনে করেন নিশ্চয়ই রক্তচাপ বেড়েছে। এই ধারণা ঠিক নয়। অধিকাংশ রক্তচাপ বৃদ্ধির কোনো উপসর্গ বোঝা যায় না। তবে রক্তচাপ খুব বেড়ে গেলে (১৮০/১২০ মি.মি. পারদের উপরে উঠলে) দৃষ্টি ঝাপসা দেখা, বুকে ব্যথা, বুকে চাপ ধরা, শ্বাসকষ্ট, লালচে প্রস্রাব, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, বমি হওয়া, মাথা ব্যথা, শরীরের অংশবিশেষ বা একাংশ দুর্বলতা কিংবা অবশ হওয়া এবং অন্তঃসত্ত্বা মায়ের খিচুনি হ’তে পারে।

(৭) রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে ঔষধ বাড়িয়ে খাওয়া : রক্তচাপ মেপে দেখলেন একটু বেশি; ব্যাস! সঙ্গে সঙ্গে নিজে নিজেই ঔষধ বাড়িয়ে নিলেন। এক বেলার জায়গায় দুই বেলা খেয়ে নিলেন বা মাত্রা দ্বিগুণ করে নিলেন। এটাও ভুল। নানা কারণে একদিন রক্তচাপ বাড়তেই পারে, তাই বলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজেই ঔষধ সেবন বা ঔষধের মাত্রা বাড়ানো ঠিক নয়।

(৮) চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ খাওয়া : উচ্চরক্তচাপ ধরা পড়লে অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে বন্ধু, স্বজন কিংবা পরিবারের কারো ব্যবস্থাপত্র দেখে ঔষধ খেয়ে থাকেন। অমুকের ওই ঔষধে নিয়ন্ত্রণ হয় বলে আপনার জন্য এটি প্রযোজ্য নাও হতে পারে। কেননা কোন ঔষধ আপনার জন্য প্রযোজ্য তা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। হাঁপানী, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা অন্য কোনো রোগ থাকলে সে অনুযায়ীই হবে ঔষধের ব্যবস্থাপত্র। সেকারণ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই ঔষধ নির্বাচন করতে হবে।

আমাদের সবার মনে রাখতে হবে যে একটি ভুল ধারণা বা ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে জীবন বিপন্ন হয়ে উঠতে পারে। তাই নিজে সতর্ক হোন এবং অন্যকে সতর্ক হওয়ার জন্য উৎসাহিত করুন।

উচ্চরক্তচাপে করণীয়

> প্রতিমাসে কমপক্ষে একবার রক্তচাপ পরীক্ষা করানো।

> চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা।

> শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানো।

> প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাটার অভ্যাস করা।

> রাতে ৭/৮ ঘণ্টা ঘুমানো।

> সপ্তাহে একদিন পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া।

> নতুন কোনো উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।

> দুশ্চিন্তা যতটা সম্ভব পরিহার করা।

> অতিরিক্ত পরিশ্রম না করা।

> উত্তেজনা পরিহার করা।

> চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবন করা।

> নিজের ইচ্ছামতো ঔষধের ডোজ হ্রাস-বৃদ্ধি না করা।

> ভাত বা অন্য খাবারের সঙ্গে কাঁচা লবণ না খাওয়া।

সূত্র: মাসিক আত-তাহরীক

জনপ্রিয়