রাঙামাটি । বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ , ১৩ চৈত্র ১৪৩০

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৫:০১, ১৬ মার্চ ২০২০

হিমালয়সম বুক ।। অজয় রায়

হিমালয়সম বুক ।। অজয় রায়

ছবি: ইন্টারনেট


কবরে ফুলটা রাখতে গিয়ে প্রথমেই মনে হলো—
কার বুকে হাতটা রাখতে যাচ্ছি!  
পদ্মা, মেঘনা, যমুনার বুকে!
নাকি বিশ্বময় ছড়িয়ে যাওয়া সংগ্রামী গণতন্ত্রের বুকে!
নাকি চিরনিদ্রায় শায়িত বজ্রকণ্ঠ সিংহের বুকে!

বাংলার কোনদিকে তার দৃষ্টি পড়েনি; কোনদিকে?
কোনদিকে তার রক্ত ঝরেনি; কোনদিকে?
কোনদিকে তার স্বপ্ন শুভ্র কপোত হয়ে ভোরের আলোয় উড়ে ওঠেনি!
যার বুকের জমিনে প্রস্ফুটিত হয়েছিল সাতই মার্চের
সংগ্রামী কুসুম—

গোটা দেশটার উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম
ছিল যার অস্থি মাংস ও পাঁজরের হাড়,
সে বুক ছুঁতে গিয়ে তাই সম্ভ্রমে কিছুক্ষণ থেমে গেল হাত।
হাতটা দিয়ে ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল ছুঁতে ছুঁতে ফের মনে হলো—কার যেন প্রগাঢ় নিঃশ্বাস চারদিকে।
সবুজ বৃক্ষে লাল হ'য়ে ওঠা এ এক অপূর্ব পতাকা; অপূর্ব অস্তরাগ। মনে হলো— যেখানে রেখেছি হাত
এ বুক মানুষের নয়— মানচিত্রের।
এ বুক মানুষের নয়— স্বাধীনতার।
এ বুক মানুষের নয়— মাতৃভূমির।

ভাষা আন্দোলনের পুঞ্জীভূত ফোঁটা
ফোঁটা রক্তের দাগ
যাঁর বুকের পাঠশালায় অ, আ, ক, খ হ'য়ে লাল অক্ষরে জমা হয়েছিল- এ সেই বুক।

যেখানে মৌন মিছিলের মতো লোকালয়
আর একটি কৃষকের সংসার-
শ্বেত বর্ণের তার কয়েকটি গাভী
লাঙল জোয়াল নিয়ে হেঁটে আসা কিষাণের দুপুর,
পুকুরের জলে পালক ভেজানো কয়েকটি হাঁস
সাঁঝের কিশোরীর জলছোঁয়া পা-
আপামর বাংলার এইসব ছবি নোঙর করা ছিলো যেখানে-
এ সেই বুক।

গঙ্গোত্রীর মতো পবিত্র স্নেহের জলধারা বহমান
সেই বুকটিই খুনীদের নির্মম গুলিতে ঝাঁঝরা হলো!

কবরে ফুলটা রাখতে গিয়ে তাই শেষবার মনে হলো—
এ বুক লেলিনের চেয়েও মহান
এ বুক লিঙ্কনের চেয়েও পবিত্র
এ রক্ত গান্ধীর চেয়েও শোকাবহ
এ বুক একাই একটি দেশ; একাই একটি হিমালয়।
এ ভাবে যে সত্যটি সেদিন বিশ্বময় ইতিহাস হলো
তারই নাম পনেরই আগস্ট।

আলোকিত রাঙামাটি

সর্বশেষ