রাঙামাটি । শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ , ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ১৪:৪২, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

সৈয়দ মুজতবা আলীর ১১১তম জন্মবার্ষিকী আজ

সৈয়দ মুজতবা আলীর ১১১তম জন্মবার্ষিকী আজ

(ফাইল ছবি)


আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা সৈয়দ মুজতবা আলীর জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেটের করিমগঞ্জে জন্মেছিলেন তিনি। বাবা খান বাহাদুর সৈয়দ সিকান্দার আলী ছিলেন সাব-রেজিস্ট্রার।

তিনি সিলেটের গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। বাবার বদলির চাকরি হওয়ায় মুজতবা আলীর প্রাথমিক শিক্ষাজীবন কাটে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ১৯২১ সালে শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন। ছিলেন বিশ্বভারতীর প্রথমদিকের ছাত্র। এখানেই সংস্কৃত, ইংরেজি, আরবি, ফার্সি, হিন্দি, গুজরাটি, ফরাসি, জার্মান ও ইতালীয় ভাষাশিক্ষা লাভ করেন। 

১৯২৬ সালে এখান থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। তারপর দর্শনশাস্ত্র পড়ার জন্য বৃত্তি নিয়ে জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে গবেষণার জন্য তিনি ডি ফিল লাভ করেন ১৯৩২ সালে। ১৯৩৪-১৯৩৫ সালে তিনি মিশরে কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে ১৯২৭ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত মুজতবা আলী কাবুলের শিক্ষাদফতরে অধ্যাপনা করেন। সেখানে তিনি ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার শিক্ষক ছিলেন। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে বরোদার মহারাজার আমন্ত্রণে তিনি বরোদা কলেজে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এখানে তিনি আট বছর কাটান। এরপর দিল্লির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের খণ্ডকালীন প্রভাষকের দায়িত্ব পালন করেন। 

তিনি পঞ্চাশের দশকে কিছুদিন আকাশবাণীর স্টেশন ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন পাটনা, কটক, কলকাতা এবং দিল্লিতে। ১৯৬১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে প্রত্যাবর্তন করেন। বিশ্বভারতীর ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের রিডার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে অবসরগ্রহণ করেন।

শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় সেখানের বিশ্বভারতী নামের হস্তলিখিত ম্যাগাজিনে মুজতবা আলী লিখতেন। পরবর্তীতে তিনি ‘সত্যপীর’, ‘ওমর খৈয়াম’, ‘টেকচাঁদ’, ‘প্রিয়দর্শী’ প্রভৃতি ছদ্মনামে বিভিন্ন পত্রিকায়, যেমন : দেশ, আনন্দবাজার, বসুমতী, সত্যযুগ, মোহাম্মদী প্রভৃতিতে কলাম লিখেন। তার বহু দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন ভ্রমনকাহিনী। এছাড়াও লিখেছেন ছোটগল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা। বিবিধ ভাষা থেকে শ্লোক ও রূপকের যথার্থ ব্যবহার, হাস্যরস সৃষ্টিতে পারদর্শিতা এবং এর মধ্য দিয়ে গভীর জীবনবোধ ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা তাকে বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। তার একটি বিখ্যাত উক্তি হল, ‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না।’

রচনাবলী: ‘দেশে বিদেশে’ (১৯৪৯), ‘জলে-ডাঙ্গায়’ (১৯৬০), ‘পঞ্চতন্ত্র’ (প্রথম পর্ব, ১৩৫৯, দ্বিতীয় পর্ব, ১৩৭৩), ‘ময়ূরকন্ঠী’ (১৯৫২), ‘চাচাকাহিনী’ (১৯৫৯), ‘পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ (১৩৬৩), ‘ধূপছায়া’ (১৩৬৪), ‘দ্বন্দ্বমধুর’ (১৩৬৫), ‘চতুরঙ্গ’ (১৩৬৭), ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’ (১৩৬৮), ‘ভবঘুরে ও অন্যান্য’ (১৩৬৯), ‘শ্রেষ্ঠ ররম্যরচনা’ (১৩৬৯), ‘টুনিমেম’ (১৩৭০), ‘প্রেম’ (১৩৭২), ‘বড়বাবু’ (১৩৭২), ‘রাজা-উজির’ (১৩৭৬), ‘হিটলার’ (১৩৭৭), ‘কত না অশ্রুজল’ (১৩৭৮), ‘মুশাফির’ (১৩৭৮), 

এছাড়া, তিনি চারটি উপন্যাস লিখেছেন। যথা-‘অবিশ্বাস্য’ (১৯৫৩), ‘শবনম’ (১৯৬১), ‘শহর ইয়ার’ (১৯৬৯) ‘তুলনাহীনা’ (১৯৭৪) ইত্যাদি।

আলোকিত রাঙামাটি

সর্বশেষ