রাঙামাটি । মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ , ৯ বৈশাখ ১৪৩১

জুরাছড়ি প্রতিনিধিঃ-

প্রকাশিত: ১৬:২৬, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ১৬:৫৩, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

জুরাছড়িতে সৌরবিদ্যুতের আলোয় আলোকিত দূর্গম পাহাড়ি গ্রাম

জুরাছড়িতে সৌরবিদ্যুতের আলোয় আলোকিত দূর্গম পাহাড়ি গ্রাম
ছবি:- আলোকিত রাঙ্গামাটি 

রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলার দুমদুম্যা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে ৩শ’ ৯৬ পরিবারের বসতি। সন্ধ্যা নামতেই ঘরে ঘরে জ্বলে উঠে সৌরবিদ্যুতের আলো। আর ভেসে আসে শিশুদের সমস্বরে পাঠাভ্যাসের আওয়াজ। নিভু নিভু চেরাগ কিংবা হারিকেনের আলো আর নেই। সৌরবিদ্যুতে চলছে টেলিভিশনও। অথচ গেল বছর ডিসেম্বরেরও এই দৃশ্যের কথা ভাবতে পারেনি কেউ। সৌরবিদ্যুতের কল্যাণে দ্রুত বদলে যাবে পাহাড়ের দৃশ্যপট।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা যায়, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ বাস্তবায়নে তিন পার্বত্য জেলার বিদ্যুৎ সংযোগ বিহীন এলাকায় বিনামূল্যে সৌর প্যানেল বিতরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। এর আওতায় প্রতিটি সুবিধা ভোগী একটি ১শ’ ওয়ার্ড ক্ষমতা সম্পন্ন সৌর প্যানেল, ব্যাটারী, লাইটসহ স্থাপন করে দিচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ২য় পর্যায়ে “পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় জুরাছড়ি ইউনিয়নে ২৩৩ পরিবার, মৈদং ইউনিয়নে ৪১৪ পরিবার এবং দুমদুম্যায় ৫১৯ পরিবারকে হোম সোলার স্থাপন করে দেয়া হচ্ছে।”


বামে সুবলং গ্রামের লালডিং পাংখোয়া, সাংজির পাংখোয়া, দারদী পাংখোয়া সোলার পেয়ে সরকার প্রধানের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আমরা জুম চাষী, যা পাই কোন রকমে বছর চলে যায়। সোলার কিনে স্থাপন করা কল্পনা করতে পারিনা। বিনামূল্যে সোলার পেয়ে আমাদের উপকার হয়েছে। উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমার কাছেও কৃতজ্ঞতা জানাই।’

বালুছড়া গ্রামের সান্তনা চাকমা, দুদুকছড়ার রঞ্জন মুখী চাকমা, তুংকুলি চাকমা বলেন, ‘তাদের স্বামী বছর চারেক আগে মারা গেছে। তখন থেকে অন্যের জমিতে কিংবা দিনমজুর করে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা চালাচ্ছে। কেরোসিন কেনার টাকা থাকত না বলে প্রায়ই সন্ধ্যা নামলেই ঘুমিয়ে যেতে হতো তাদের। এখন আর সেই সমস্যা নেই, নেই কেরোসিন কেনার চিন্তা। ছেলেমেয়েরা অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারে।’

স্থানীয় হেডম্যান সম্রাট চাকমা বলেন, ‘পাহাড়ে কখনও ভাবতে পারেনি সৌর বিদ্যুতের আলোর নিচে রাতে সময় কাটাবে, দেখবে টেলিভিশন। এখন পাহাড়ের বসবাসরত মানুষের কাছে এটা স্বপ্নের মতো মনে হয়।’

জুরাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ইমন চাকমা বলেন, ‘ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে সকল পরিবারকে সোলার স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসী খুবই খুশি হয়েছে। উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমার এমন মহৎ উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।’

মৈদং ইউপি চেয়ারম্যান সাধনা নন্দ চাকমা ও দুমদুম্যা ইউপি চেয়ারম্যান সাধন কুমার চাকমা বলেন, এলাকাবাসীরা একসময় সন্ধ্যা নামলেই ঘুমিয়ে পড়ত। এখন রাত জেগে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা আওয়াজ, টেলিভিশন দেখছে পাড়াবাসী। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা জানান।

প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ৪০ হাজার পরিবারকে বিনামূল্যে সোলার প্যানেল স্থাপন করে দেওয়া হচ্ছে।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেন, ‘তিন পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক এলাকায় যেখানে জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুৎ সংযোগ আগামী বিশ বছরেও পৌঁছানো সম্ভব হবেনা- সেসব গ্রামে আলোকিত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আন্তরিকতা বিনামূল্যে সোলার স্থাপন করে দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘পাহাড়ি অঞ্চলে আরো সোলার প্রয়োজন রয়েছে। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হবে।’

সম্পর্কিত বিষয়: