রাঙামাটি । মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ , ২ বৈশাখ ১৪৩১

কাপ্তাই প্রতিনিধিঃ-

প্রকাশিত: ১২:০৩, ১০ এপ্রিল ২০২২

ওয়াগ্গার সংগ্রামী নারী উসাং মারমার এগিয়ে চলার গল্প

ওয়াগ্গার সংগ্রামী নারী উসাং মারমার এগিয়ে চলার গল্প
​​​​​​​উসাং মারমার সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কাজ শিখছেন নারীরা।

কাপ্তাই উপজেলাধীন ওয়াগ্গা ইউনিয়নের কুকিমারায় সংগ্রামী নারী উসাং মারমা নানা প্রতিবন্ধকতা দূর করে আজ আত্মনির্ভরশীল একজন নারী। ক্ষুদ্র থেকে আজ তার কাজের পরিধি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিভাবে তিনি এগিয়ে গেছেন তা নিয়েই আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের জনবহুল কুকিমারা মারমা পাড়ায় প্রায় ১৮৫টি পরিবারের বসবাস। জনসংখ্যা প্রায় হাজারের কাছাকাছি।

গত শনিবার (৯ এপ্রিল) ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য অংচাপ্রু মারমাকে সাথে নিয়ে সরেজমিন পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট একটি বেড়ার ঘরে মেয়েদের সেলাই প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ওই এলাকার বাসিন্দা উসাং মারমা। তিনি দূর্গম পাহাড়ী জনপদে গড়ে তুলছেন নিজস্ব ছোট্ট একটি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কারখানা। ২০১১ সালে মাত্র ২ জন প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে তিনি এই সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র শুরু করেন। ইতিমধ্যে ৩০ জন মেয়ে তার এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তারা একেকজন একেক জায়গায় দোকান দিয়ে সেলাই কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। 

উসাং মারমা (৩৭) জানান, তার স্বামী থোয়াইচিং মারমা একজন দিনমজুর। তাদের প্রথম কন্যা সন্তান এলিপ্রু মারমা পড়ে তৃতীয় শ্রেনীতে এবং ২য় সন্তান এলিচিং মারমা প্রথম শ্রেনীতে পড়ে। স্বামীর সবসময় কাজ থাকতো না, এতে সংসারের খরচ চালাতে হিমসিম খেতে হতো। তাই আমিও ঘরের অর্থনৈতিক সচ্ছলতার জন্য পরের জমি এবং জুমে   দৈনিক ১শ’ ৫০ টাকা মজুরিতে কঠোর পরিশ্রম করতাম। যেন একটু সংসারে সুখ আসে।

তিনি আরো জানান, মাঝে মাঝে কাজ থাকে না, তাই অন্য কিছু করার চিন্তা সবসময় মাথায় ঘুরপাক খেত। বিয়ের আগেই তিনি সেলাই কাজ শিখলেও একটি সেলাই মেশিনের অভাবে সেলাইয়ের কোন কাজ করতে পারেননি এতোদিন। তাই নিজস্ব পরিশ্রমের টাকা জমা করে, প্রথমে একটা সেলাই মেশিন ক্রয় করি।

উসাং মারমা জানান, পরে ২০১১ সালে কুকিমারা পাড়ায় ৫শ’ টাকা ভাড়ায় একটি বেড়ার ঘর ভাড়া নিয়ে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করি। প্রথমে ২ জন প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে পথ চলা শুরু করি।

প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে মাসিক ৫শ’ টাকা করে নিতাম। ইতিমধ্যে ৩০ জনের মতো আমার এই সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। বর্তমানে ৮ জন তার এই কেন্দ্রে কাজ শিখছেন। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন পোশাকের সেলাইয়ের অর্ডার নিয়ে বাড়তি উপার্জন করছেন বলে জানান। এ পথে আসতে তিনি কোন সরকারি সহায়তা পাননি বলে জানান। যদি সরকারি সহায়তা পাই, তাহলে আমি আরো অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবো বলে মন্তব্য করেন।

তার এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মোটামুটি স্বাবলম্বী হয়েছেন কুকিমারা পাড়ার হলাসুইউ মারমা ও হ্লায়েচিং মারমা।

তারা জানান, তার কাছ থেকে আমরা প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন নিজেরা সেলাই কাজ করছি। আমাদের সংসারের সচ্ছলতা এসেছে।


কুকিমারা ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য অংচাপ্রু মারমা জানান, আমি বছরের পর বছর এই মহিলার সংগ্রামের চিত্র দেখে আসছি। একটি মাত্র সেলাই মেশিন দিয়ে তিনি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র শুরু করলেও বর্তমানে তিনটি সেলাই মেশিন তার। এই সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এলাকার অনেক বেকার নারীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছে।

কাপ্তাই উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাজমুল হাসান জানান, সরকার প্রান্তিক পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের সহায়তা এবং উৎসাহ প্রদান করে আসছে। ওই মহিলা যদি সমাজসেবা বিভাগে ঋণের জন্য আবেদন করেন তাহলে আমরা তাকে ঋণ দিয়ে তার কাজের পরিধিকে আরো বিস্তৃত করার চেষ্টা করবো।

প্রান্তিক পাহাড়ী জনপদে অবহেলিত উদ্যােমী নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বেকারত্ব দূরীকরণে উসাং মারমার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

সম্পর্কিত বিষয়: