রাঙামাটি । শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ , ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাপ্তাই প্রতিনিধিঃ-

প্রকাশিত: ১২:২৪, ২২ জুলাই ২০২১

করোনা রোগীদের অকৃত্রিম বন্ধু কাপ্তাইয়ের আব্দুল জলিল

করোনা রোগীদের অকৃত্রিম বন্ধু কাপ্তাইয়ের আব্দুল জলিল

মোঃ নজরুল ইসলাম লাভলু, কাপ্তাইঃ- করোনা রোগীদের অকৃত্রিম বন্ধু হয়ে প্রতিনিয়ত রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনায় বসবাসরত মোহাম্মদ আবদুল জলিল। কল পেলেই নিজের ব্যাক্তিগত সিএনজি চালিত অটোরিক্সা নিয়ে ছুটে যান করোনা রোগীর সেবা দিতে। তাও বিনা পারিশ্রমিকে। লকডাউনে গৃহবন্দী থাকা করোনা রোগীদের বাসায় পৌঁছে দেন খাদ্যদ্রব্য চিকিৎসা সামগ্রীসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য। এছাড়া অনেক সময় রোগীর অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন হলে দ্রুত তা সংগ্রহ করে পৌঁছে দেয় তিনি।

মোহাম্মদ আব্দুল জলিল পেশায় একজন সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালক। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ গাউসিয়া কমিটির কেপিআরসি শাখার প্রচার সম্পাদক।

ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সূত্রে মানুষ জেনেছে দেশে করোনা রোগীদের পাশে থেকে এবং করোনা রোগীদের মৃত্যু পরবর্তী কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে মানবিক কাজ করে যাচ্ছে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ। সে আদর্শে মোহাম্মদ আব্দুল জলিল প্রতিনিয়ত বিপদ আপদে খবর পেলেই ছুটে যায় মানুষের সেবা দিতে।

আলাপকালে জলিল জানায়, মানুষের জন্য কিছু করতে পারলেই তিনি সবচেয়ে বেশী আনন্দ পায়। তিনি বলেন, সম্প্রতি দেশে যেসব ঘটনাগুলো দেখছি তাতে একটু অবাক না হয়ে পারছিনা। করোনার ভয়ে রোগীদের কাছের মানুষরা পালিয়ে যাচ্ছে, সেখানে কিছু ভালো মনের মানুষ যারা করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে ছুটে যাচ্ছে করোনা রোগীদের সেবা দিতে। করোনা রোগীদের তিনি নিরবিছিন্ন সেবা দিয়ে যেতে চান। অনেক সময় সারাদিন পরিশ্রম করার পর যখন রাতে ঘুমোতে যাই, তখন জরুরী সেবা দিতে কল এলেই  সকল কষ্টকে দুর করে বের হয়ে যায় মানুষকে সেবা দিতে। এরকম দিন-রাত মানুষের সেবায় কাজ করে পরিশেষে আনন্দ লাভ করেন। করোনা আক্রান্ত রোগীদের বাড়িতে প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দিতে তিনি কোন পারিশ্রমিক নেয়না।

কেন পারিশ্রমিক নেয়না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আর্থিক দিক বিবেচনা না করে তিনি মানবিক দিক বিবেচনা করেই মানুষের জন্য কাজ করেন। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন, মানুষের সেবা করলেই সবচেয়ে বেশী খুশী হোন মহান সৃষ্টিকর্তা। আর সৃষ্টিকর্তা খুশী হলেই সেটাই তার বড় পাওয়া। এছাড়া তিনি করোনা রোগীদের পাশে থেকে সবসময় মানবিক কাজ করে যাওয়ায় বাংলাদেশ গাউসিয়া কমিটিসহ এর প্রতিটি ইউনিটকে ধন্যবাদ জানান। এবং করোনা পরিস্থিতিতে তার এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

এদিকে, কাপ্তাই বহুমুখী সমবায় সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ও গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জসিম সিকদার জানান, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ, কেপিআরসি শাখার প্রচার সম্পাদক জলিল খুবই আন্তরিক ও ভালো মনের মানুষ। বিপদে আপদে সবসময় সে ছুটে আসে মানুষের সেবা দিতে। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে জলিলের ভুমিকা ছিলো অন্যতম। করোনা ভাইরাসের ভয়কে উপেক্ষা করে সে নিয়মিত সেবা দিয়ে যাচ্ছে। মোহাম্মদ আব্দুল জলিলের এমন মানবিক কাজের জন্য তিনি গাউসিয়া কমিটির পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানান। এবং তার এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকুক সেই কামনাই করেন।

সম্প্রতি করোনা ভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়া কাপ্তাইয়ের বাসিন্দা ওমর ফারুক, মাইনুল হোসেন, সুমন দাশ রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা রেজাউল করিম, সুধীর ধরসহ বেশ কয়েকজন বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর যখন গৃহবন্দী হয়ে জীবন অতিবাহিত করছি, তখন অনেক প্রতিবেশী করোনার ভয়ে খোঁজ-খবর নেয়নি। সে মুহুর্তে মোহাম্মদ আব্দুল জলিল সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়। তাকে কল করার সাথে সাথে সে ছুটে আসতো প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী নিয়ে। এছাড়া কোভিড টেস্ট করার জন্য সে তার সিএনজিতে করোনা রোগীদের যাত্রীসেবা দিতো। তারা সকলেই মোহাম্মদ আব্দুল জলিলের ভুয়সী প্রশংসা করেন। সাম্প্রতিক করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মোহাম্মদ আব্দুল জলিলের মতো যেন সমাজের সহৃদয়বান সকল ব্যক্তিরা বিপদে আপদে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়ে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয় এটাই সকলের প্রত্যাশা।

আলোকিত রাঙামাটি