রাঙামাটি । বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ , ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাঘাইছড়ি প্রতিনিধিঃ-

প্রকাশিত: ১১:০৩, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১

বাঘাইছড়ির পাহাড়ে পাহাড়ে জুমের হাসি

বাঘাইছড়ির পাহাড়ে পাহাড়ে জুমের হাসি

ওমর ফারুক সুমন, বাঘাইছড়ি প্রতিনিধিঃ- রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে উঁচু পাহাড় ও টিলা মিলিয়ে শতশত একর পাহাড়ে এবার জুম চাষ হয়েছে। পাহাড়ের যেদিকে চোখ যায় চোখে পড়ে জুম ফসল ও ছোট ছোট মাচাংঘর স্থানীয়দের ভাষায় জুমঘর। এসব মাচাং ঘরে থেকেই গত ৩ থেকে ৬ মাস পাহাড়ের চূড়া ও পাদদেশে জুমের ফসল ফলিয়েছেন স্থানীয় জুম চাষী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন। পাহাড়ে এবার প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি পাত হওয়ায় জুমের ফসল উৎপাদন খুব ভালো হয়েছে। ধানের পাশাপাশি এবার জুম ফসল মারফা, চিনাল, বেগুন, সিমাই আলু, কাঁচা মরিচ, তিল, সিম, আমিলা গোটা, কচু, সাবারাং (এক প্রকার সুগন্ধি যুক্ত পাতা), লাউ, চাল কুমড়া, কলা, আদা, হলুদের ব্যাপক মিশ্র চাষাবাদ হয়েছে।

উপজেলার চারকিলো নওআদামের বাসিন্দা জীবন চাকমা বলেন, পাহাড়ে এবার জুমের প্রচুর ফলন হয়েছে চার কিলো নওআদাম ছাড়াও আশপাশের প্রায় আট থেকে দশ গ্রামের কথাও সে তুলে ধরেন, হাজা ছড়া, পানছড়ি, বাদল ছড়ি, কালা মুড়া, পাকুইজ্জাছড়ি, জুম্মবি আদাম, ডাঙ্গা ছড়া, খেদারাক ছড়ায় এবার জুমের ব্যাপক ফলন হয়েছে। এরই মধ্যে বাজারে জুমের ফসল মারফা, চিনাল, বেগুন, পেপে, আদা, সাবারাং, কচু, বিভিন্ন ধরনের লাউ, কুমড়ার বাজার জাত শুরু হয়েছে।

হাজাছড়া গ্রামের জুম চাষী পূর্ণজয় চাকমা বলেন, এবার পাহাড়ে জুমচাষ খুব ভালো হয়েছে। প্রতি হাটবারে বাজারে লক্ষাধিক টাকার জুম ফসল বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে সাজেক, দোসর, নবছড়া, পেরা ছড়া, কচুছড়ি, ঘবঘোনা, অঞ্চল থেকেও ব্যাপক হারে বাজারে জুমের ফসল আসতে শুরু করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, নদীতে ভরা যৌবন থাকায় টলার ও ছোট নৌকায় করে জুমের ফসল খুব সহজেই বাজার জাত করা যাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, পাহাড়ে অনেক আগে থেকেই সনাতন পদ্ধতিতে। জুমচাষ হয় তবে অনেক চাষীই কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে এখন আধুনিক চাষাবাদ প্রক্রিয়া রপ্ত করেছে তাই আগের তুলনায় অনেক বেশি ফলন পাচ্ছে। তবে জুম চাষের লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণও কম নয় চাষাবাদ শুরুর আগে পাহাড়ের গাছপালা কেটে আগুন দিতে হয় এতে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি হয়, তাই উপজেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর থেকে অনেক চাষীকেই মিশ্রফল বাগানের প্রশিক্ষণ ও চারা এবং প্রয়োজনীয় সার কিটনাশক দিয়ে সহায়তা করছি যাহাতে জুমচাষ থেকে ফিরে আসেন। ধীরে ধীরে জুম চাষ সিমিত হয়ে আসছে।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ের আবহাওয়া খুব বৈচিত্র্যময় সারাদিন রোদ, রাত হলেই বজ্রসহ ভারী বৃষ্টি। বাঘাইছড়িতে আমার চাকরিকাল এক বছর হল, শুরু থেকে এমনটাই দেখছি, বৈচিত্র্যগত ভাবেই পাহাড়ের  মাটিরও ভিন্ন রুপ। এই মাটিতে আপনি যা রোপন করেন না কেন খুবই চমৎকার ফলন হয়। হাটের দিন বাজারে জুমের নানা ধরনের ফসল দেখতে খুবই চমৎকার লাগে। এসব ফল সমতলে খুব একটা হয়না। খোঁজ নিয়ে জানলাম এবার বাঘাইছড়িতে জুমের ব্যাপক ফলন হয়েছে। তবে উপজেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকেও জুমচাষে নিরুৎসাহিত করে মিশ্রফল বাগানে চাষীদের উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে।

আলোকিত রাঙামাটি