রাঙামাটি । শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ , ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৭:২০, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বিএনপি ভোটে না এলে বিকল্প ভাবনায় আওয়ামী লীগ

বিএনপি ভোটে না এলে বিকল্প ভাবনায় আওয়ামী লীগ

সময় যত ঘনিয়ে আসছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধরন নিয়ে বিভিন্ন মহলের আগ্রহ ততই বাড়ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখনো নির্ধারিত সময়ে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজনের বিকল্প কিছু ভাবছে না। অন্যদিকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হলে নির্বাচনে না যাওয়ার প্রশ্নে অনড় বিএনপি ও তার মিত্ররা। পরিস্থিতি যাই হোক, বিএনপি নির্বাচনে আসবে—এমনটাই মনে করেন সরকারি দলের অনেক নেতারা। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি না এলে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত বাকি দলগুলোকে নিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবছেন তারা।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরই মধ্যে দলের পক্ষ থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ অনেক দূর এগিয়েছে। ইসলামি দলসহ অনিবন্ধিত ও নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়া দলকেও নির্বাচনে আনার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যোগাযোগ চলছে। আলাদা জোট করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটে দলের সংখ্যা বৃদ্ধি করার চিন্তা করছে তারা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিলেও একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি দূতিয়ালিতেও দুই দল তৎপর, চলছে আলাপ-আলোচনা। এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকেও সুষ্ঠু নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা; কিন্তু সেটা সংবিধানের মধ্য থেকে। এদিকে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলের ও ভারতের নতুন পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা একই সময়ে বাংলাদেশ সফর করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে মার্কিন ও ভারতীয় প্রতিনিধিদের বৈঠক রাজনীতিতে নতুন মোড় এনে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশের পূর্ণ সমর্থন ও মার্কিনিদের নরম সুর আওয়ামী লীগের পালে সুবাতাসের ছোঁয়া লেগেছে।

নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ কারও নির্দেশনা শোনে না, সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী চলে দাবি করে গত বৃহস্পতিবার দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আওয়ামী লীগও চায় একটি ভালো, ত্রুটিমুক্ত ও সুষ্ঠু নির্বাচন। রাষ্ট্রদূতরা চান আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দল অংশগ্রহণ করবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, সংবিধান অনুযায়ী আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক কালবেলাকে বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নৈতিক দায়িত্ব। তাদের অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত। কেউ যদি নির্বাচনে না আসে, সেক্ষেত্রে আমাদের করার কিছু নেই। কাউকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে নির্বাচনে আনার চিন্তা আমাদের নেই।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ২০১৪ সালে তৎকালীন জাতিসংঘের বিশেষ দূত তারানকো ফার্নান্দেজ আওয়ামী লীগ-বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। আওয়ামী লীগ বিরোধিতার মধ্যেও সংবিধানের মর্যাদা রক্ষার্থে নির্বাচন সম্পন্ন করে পাঁচ বছর সরকার পরিচালনা করে। এরপর ২০১৮ সালে নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করলেও টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।

এরপর থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি জানায় বিএনপি। গত বছর থেকে এ দাবিতে রাজপথে সক্রিয় হয় দলটি। বিভাগীয় জেলা শহরে সমাবেশ থেকে ইউনিয়ন পর্যায়েও কর্মসূচি বিস্তৃত করেছে তারা। বিএনপি একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে বলে সূত্র জানালেও, শেষমেষ নির্বাচনে না আসারও সম্ভাবনা রয়েছে। এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য হবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত দলের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর এক সদস্য জানান, সম্প্রতি বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার দল নিবন্ধন পেয়েছে। বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে, তাহলে নাজমুল হুদার নেতৃত্বে বেশ কিছু দল নতুন জোটের অধীনে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। এ ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতৃত্বে সমমনা ইসলামি দলগুলোও নির্বাচনে অংশ নেবে। এমনকি নিবন্ধন হারানো যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামীও নির্বাচনে আসতে সরকারি দলের সঙ্গে দেনদরবার করছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল কালবেলাকে বলেন, এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যাতে একতরফা নির্বাচন করতে না পারে, সেজন্যই আমরা আন্দোলন করছি। জনগণ আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছে। এবার জনগণের জয় হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, অতীতেও সরকার একতরফা নির্বাচন করেছে। কিন্তু সেগুলো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। আবারও তারা একতরফা নির্বাচন করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১৭টি অংশ নেয়। বিএনপিসহ বাকি দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় সেই নির্বাচন দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়। সেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই ১৫৩ আসনে জয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। এ কালিমা দূর করতেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের সংখ্যার বৃদ্ধি করার দিকে মনোযোগী ক্ষমতাসীন দলটি।

এ লক্ষ্যে নির্বাচনের আগে আরও কিছু নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেওয়া হতে পারে। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ৯৮টি দলের যোগ্যতা যাচাইবাছাই করছে। গত বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পায় নাজমুল হুদার তৃণমূল বিএনপি। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটি বলছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না, সেই হিসেবে বিএনপি না থাকলে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হবে জাতীয় পার্টি।

গত ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভায় জোটের শরিকদের বঞ্চিত করলে অসন্তোষ তৈরি হয় ১৪ দলীয় জোটে। এ ক্ষোভ কাটাতে গত বছর গণভবনে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর জোটের দেখভালের দায়িত্ব পান দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু। তিনি জোটকে নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সক্রিয় করার চেষ্টা করছেন। অসন্তোষ মেটাতে সম্প্রতি বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসনের দুটি ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এমনকি সংরক্ষিত নারী আসনে জাসদকে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে আওয়ামী লীগ। জেলায় জেলায় সমন্বয় কমিটিও করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। করা হবে বিভাগীয় সমাবেশ। এদিকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সংসদ সদস্যদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতেও নির্দেশ দিয়েছেন।

গতকাল এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব শুধু সরকারি দলের নয়। বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হচ্ছে একটি অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য অবাধ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা। কেউ যদি নির্বাচন বর্জন করে কিংবা প্রতিহতের অপচেষ্টা চালায়, তাহলে দায়দায়িত্ব তাদের। তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা চাই, একটি অংশগ্রহণমূলক, অবাধ-সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী দিনের সরকার নির্বাচিত হোক। আমরাও চাই, দেশে আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক।