রাঙামাটি । বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ , ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সালাহ উদ্দীন মাহমুদ আরিফ

প্রকাশিত: ১০:১৭, ৭ ডিসেম্বর ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩০ নভেম্বর ১৯৯৯

কেনো এই আত্মহত্যা?

কেনো এই আত্মহত্যা?

কিশোর কিশোরীদের শরীর মৌন সম্মতিতে যখন যৌবন আসে তখন প্রেমও উপলব্দি শুরু করে। যখন প্রেম আসে তখন কাউকে না কাউকে ভালো লাগতে শুরু করে। একচ্যুয়াল সেটা মৌন চাহিদা মনে হলেও প্রকৃত অর্থে তা শরীরের চাহিদা। আবার অপরদিক থেকে বিপরীত লিঙ্গের মানুষটিও ভালো লাগাতে শুরু করে। এমন বয়সন্ধিকালে অভিভাবক যদি তাদের আচরন আমলে না নিয়ে তাদের মনের বিরুদ্ধাচরণ করে তখনও আত্মহত্যা করতে খুব সাহস জেগে যায়। এ অবস্থায় কিন্তু আত্মহত্যার জন্য দারুন ইচ্ছে জাগে। কারণ মৃত্যুর পর তার জন্য সবাই কাঁদবে। ভূল বুঝতে পারবে। প্রেমিক বা প্রেমিকার প্রতি কতটুকু ভালোবাসা ছিল এ ভেবে কাঁদবে আহাজারী করবে। একটা সময় সে আত্মহত্যার জন্য দারুন সিদ্ধান্তে উপনিত হয়ে পরে। ঠিক তখন পেচন থেকে কেউ তাকে উৎসাহ দিতে থাকে। হয় বাঁচে নয় গেছে।

আত্মহত্যার নজির নেই এমন কোন দেশ নেই। আত্মহত্যা নিয়ে গবেষকদের চুলছেড়া বিচার বিশ্লেষন শেষেও এর পেছনে রয়ে যায় অজানা রহস্য। আমার উপজেলা কাউখালীর বেতবুনিয়ায় বেশ কটি সংগঠিত আত্মহত্যা খুব কাছ থেকে অনুভব করেছি। তম্মধ্যে মেয়েদেরই বেশি লাশ দেখেছি। ব্যপারগুলো নিয়ে আমি বেশ লেখালেখিও করেছি। সেখানে কয়েকটি আত্মহত্যার কারণ হিসেবে আমি কিছু ব্যাপার নিশ্চিত করেছি। যার মধ্যে সংসারে বোঝাপড়ার সংকীর্ণতা বেশি হয়। বাঙ্গালী মূলত আবেগপ্রবন। গ্রামের মানুষগুলো আরো বেশি আবেগ বহন করে চলে। সংসারে যখন আবেগ নিয়ে খেলা চলে তখনই কেউ না কেউ হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেয় আত্মহত্যার। যেখানে বেশিরভাগ মানুষ আত্মহত্যা করতে সাহস করে না বা নিজের থেকে সাহস পায় না। একটা সময় যখন মাত্রাতিরিক্ত স্নায়ুচাপ হয়। তখন চোখে আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন পথ দেখা যায় না। যেমন ধরুন; গ্রামের অধিকাংশ মানুষ ঋণের বোঝা বহন করে চলে। তম্মধ্যে এনজিও সংস্থাগুলোর চাপ। এনজিও সংস্থার অবস্থা কিছুটা আমি জানি। মনে হয় যেন বৃটিশ এক শোষন করে গেল আর এনজিও রা আরেক শোষন করে যাচ্ছে। তাদের কর্মীদের বলার ধরণ বা চাপ সৃষ্টির ধরণ খুব কঠিন। এ কঠিনত্ব গ্রামের মানুষ সহ্য করতে পারে না। মানুষগুলো কঠিনত্ব বোঝে না। টাকা নেই, আয় নেই, কোন পথও নেই। ব্যস একটাই পথ আত্মহত্যা। এখানে আত্মহত্যা কিন্তু একজন করেনি। সাথে সাথে মানুষের মানবিক মূল্যবোধও আত্মহত্যা করে।

আমার এলাকায় এমনও দেখেছি মেয়ে শশুরবাড়ীতেও আত্মহত্যা করেছে। এখানে কোন সন্দেহ নেই সে শশুরবাড়ীতে কারো না কারো দ্বারা মানসিক চাপে ছিলো। এখানে একটি বিষয় হচ্ছে শাশুরি বৌটাকে কাজের মেয়ে ছাড়া নিজের মেয়ে ভাবতে পারে না। বৌটাও শাশুড়িকে মা হিসেবে মেনে নিতে পারে না। যারা মেনে নিতে পেরেছে তাদের সংসার সোনায় সোহাগা হয়েছে।

কিছুদিন আগেও বেতবুনিয়া মাষ্টারঘোনায় রাউজানের একটি মেয়ের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গিয়েছে। যেটি আত্মহত্যা বলে ডায়েরী করা হয়েছে। তবে আমার সেটা মনে হয়নি। এভাবে অনেক আত্মহত্যা কিন্তু ইচ্ছের বিরুদ্ধেও হয়। কিছু কিছু ধরন আত্মহত্যা বলে ধারনা করা হলেও সেটি মূলত আত্মহত্যা ছিল না।

শুধু মানুষ আত্মহত্যা করে তা নয়। পাখিরাও আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যা করে মাছ। এভাবে অনেক নজির আছে মানুষ ছাড়াও অনেক প্রাণি আত্মহত্যা করেছে। অবাক হবার কিছু নেই। প্রতিনিয়ত প্রানি আত্মহত্যা করে। পাখিরা যখন তুমুল ঝগড়া করে তখন তাদের পাশে মানুষ থাকলেও ভয় পায় না। আমিও একবার দুটি চড়ুই ধরেছিলাম ঝগড়া করার সময়। এত রাগ!

জাপানের আওকিগাহারা জঙ্গলে বছরে ২৪৬জন পর্যন্ত মানুষ আত্মহত্যা করেছে। ওখানে ভেবে চিন্তে আত্মহত্যা করা যায় বলে এটি আত্মহত্যা জঙ্গল নামে পরিচিত। তবে শেষ কথা হচ্ছে-যে মানুষটি আত্মহত্যা করছে সে যখন আত্মহত্যার সংগঠিত করেছে ঠিক তখনও সে বাঁচতে চেষ্টা করে। শেষ নিশ্বাসের আগেও সে বাঁচতে চেষ্টা করে এই ভেবে যে; সে তখনই বুঝতে পারে সে ভূল করেছে।

আমার কথা হলো বেঁচে থাকুন। নিজের জন্য হলেও। আপনার এখন একটি নাম আছে। মারা গেলে আপনার নাম হবে লাশ। মৃত লাশ কিছুই করতে পারে না। না কিছু উপলব্দি বা না নিতে পারে কোন প্রতিশোধ। বেঁচে থাকুন। প্রাণ ভরে সবুজের নিশ্বাস নিন।

লেখাঃ- সালাহ উদ্দীন মাহমুদ আরিফ

আলোকিত রাঙামাটি