রাঙামাটি । শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ , ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ১১:০০, ৯ জুলাই ২০২১

যেসব কারণে জুমার দিনের মর্যাদা বেশি

যেসব কারণে জুমার দিনের মর্যাদা বেশি

আল্লাহ তায়ালার কাছে জুমার দিন দুই ঈদের দিনের চেয়েও মর্যাদাবান এবং উত্তম। ছবি: সংগৃহীত


জুমার দিন বা শুক্রবার সপ্তাহের সেরা মহিমান্বিত দিন। এদিনকে বলা হয় ‘ইয়াওমুল জুমা’। কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন ব্যাখ্যা দ্বারা এই দিনের মর্যাদার কথা জানা যায়। আল্লাহ তায়ালার কাছে জুমার দিন দুই ঈদের দিনের চেয়েও মর্যাদাবান এবং উত্তম।

হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এ দিনের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টি তুলে ধরেছেন স্বয়ং বিশ্বনবী। এ কারণেই জুমার দিনটি ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করার নির্দেশ এসেছে কোরআন এবং সুন্নায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ - فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيراً لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

‘মুমিনগণ, জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।' (সুরা জুমা: আয়াত ৯-১০)

এ আয়াতে জুমার দিনের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব সুস্পষ্ট। এ দিন আজানের সঙ্গে সঙ্গে দেরি না করে বেচাকেনা বন্ধ করে জুমা আদায় মসজিদে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। আর কেন এ দিন ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করা জরুরি। তা ওঠে এসেছে হাদিসের একাধিক বর্ণনায়। তাহলো-

১. জুমার দিন দুই ঈদের দিনের চেয়েও মর্যাদাবান এবং উত্তম। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে জুমুার দিন সেরা দিন ও আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম দিন। আল্লাহ তায়ালার কাছে তা ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়েও উত্তম।’ (ইবনে মাজাহ)

২. জুমার দিনের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে অন্য হাদিসে প্রিয় নবী (সা.) আরও ঘোষণা করেন, ‘যে সব দিনগুলোতে সূর্য উঠে; তন্মধ্যে সর্বোত্তম হলো জুমার দিন। এই দিনেই আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এই দিনেই জান্নাত থেকে তাকে বের করা হয়েছে।’ (মুসলিম)

৩. জুমার দিন ইসলামের পূর্ণতার ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবী। হজরত ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি যখন এ আয়াতটি তেলাওয়াত করেন-

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا
তখন তার কাছে একজন ইয়াহুদি ছিল। সে বলল, যদি আয়াতটি আমাদের ওপর নাজিল হতো তাহলে আমরা দিনটিকে ঈদের দিন বানিয়ে নিতাম। অতপর ইবন আব্বাস (রা.) বললেন, ‘আয়াতটি ঈদের দিনেই নাজিল হয়েছে (আর তা ছিল) জুমার দিন ও ‘আরাফার দিন।’ (তিরমিজি)

৪. জুমার দিন বান্দার গোনাহ মাফের দিন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'এক জুমা থেকে অপর জুমা- এতদুভয়ের মাঝে (গোনাহের জন্য) কাফ্‌ফারা হয়ে যায়, যদি কবিরাহ (বড়) গোনাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়ে থাকে।’ (মুসলিম)

৫. বছরব্যাপী নামাজ-রোজার সাওয়াব পাওয়ার মাধ্যমও জুমার দিনের ইবাদত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালো করে গোসল করে সকাল সকাল মসজিদে আসবে এবং ইমামের কাছাকাছি হবে এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনবে ও চুপ থাকবে তার জুমার নামাজে আসার প্রত্যেক কদমে এক বছরের নামাজ ও রোজা পালনের সাওয়াব অর্জিত হবে।’ (তিরমিজি, নাসাঈ)

৬. জুমার দিনটিতে বান্দার সব দোয়া কবুল হয়। প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই জুমআর দিনে এমন একটি সময় আছে যে সময়ে কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে কোনো ভালো জিনিসের প্রার্থনা করলে তিনি তাকে তা দান করেন। তিনি বলেন, তা সামান্য সময় মাত্র।’ (বুখারি ও মুসলিম); কেউ কেউ বলেন, এটি আসরের নামাজের পরের সময়। 

৭. জুমার দিনটি উম্মতে মুহাম্মাদির ইবাদতের জন্য নির্ধারিত বিশেষ দিন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জুমা থেকে আল্লাহ আমাদের আগের উম্মতকে বিভ্রান্ত করে রেখেছিলেন। ফলে ইয়াহুদিদের জন্য ছিল রোববার। অতপর আল্লাহ আমাদেরকে নিয়ে এসেছেন এবং আমাদেরকে জুমার দিনের জন্য পথ দেখিয়েছেন অতপর শনি তারপর রবি। এমনিভাবে কেয়ামতের দিনও তারা আমাদের পরে হবে। দুনিয়ার অধিবাসীদের মধ্যে আমরা সবার পরে এবং কেয়ামতের দিন আমাদের ফয়সালা সাবার আগে হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

৮. জুমার দিন কেয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়ার দিন। হাদিসে পাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনেই কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে।’ (মুসলিম)

৯. ফেতনা থেকে মুক্তির দিন জুমা। বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলিম যদি জুমার দিন অথবা জুমার রাতে মৃত্যুবরণ করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে কবরের ফেতনা থেকে রক্ষা করবেন।’ (তিরমিজি)

সুতরাং মুসলিম উম্মাহর জন্য জুমআর দিনের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে যেমন, তেমনি জুমার নামাজও মুমিন মুসলমানের জন্য বিশেষ মর্যাদা লাভের নামাজ। তাই কোনোভাবেই এ নামাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। এ দিনের আমল ও ইবাদতগুলো যথাযথভাবে আদায় করা জরুরি।

আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে এ দিনের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার এবং বিশেষ মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে হাদিসের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আলোকিত রাঙামাটি