রাঙামাটি । বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ , ৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ২৬ নভেম্বর ২০২১

যে কারণে জুমার দিন মুসলিম উম্মাহর সৌভাগ্যের প্রতীক

যে কারণে জুমার দিন মুসলিম উম্মাহর সৌভাগ্যের প্রতীক

শুক্রবার বা জুমার দিন মুসলিমদের জন্য সেরা একটি দুন। মহিমান্বিত এই দিনটি সপ্তাহে একদিন আসে। এই দিনটি মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদ। জুমার দিনের অনেক ফজিলত ও গুরুত্বের কথা একাধিকবার হাদিসে এসেছে। পবিত্র আল-কোরআনে জুমা নামে একটি সুরা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, জুমার দিন দিবসসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং তা আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১০৮৪)

জুমা দিনের নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়া ফরজ। দিনটি মুসলিম উম্মাহর জন্য সৌভাগ্যেরও প্রতীক। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি হাদিসে বিষয়টি সুস্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন। চলুন জেনে নেয়া যাক কী সেই কারণ?

জুমার দিন প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক জ্ঞানবান পুরুষের জন্য জামাতের সঙ্গে জোহরের ওয়াক্তে ২ রাকাত নামাজ আদায় করা ফরজ। এ নামাজকে জুমার নামাজ বলে। কোরআনে এ নামাজ পড়ার নির্দেশ এসেছে এভাবে-

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلاَةِ مِنْ يَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ، ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ

‘হে ঈমানদারগণ! যখন জুমার দিন নামাজের জন্য (আজান) আহবান করা হবে, তখন তোমরা দ্রুত আল্লাহর স্মরণের জন্য (মসজিদে) উপস্থিত হও এবং (নামাজের সময়টিতে) ক্রয়-বিক্রয় বর্জন কর। এটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা উপলব্ধি কর।’ (সুরা জুমা : আয়াত ৯)

কোরআনুল কারিমের এ নির্দেশ মেনেই মুসলিম উম্মাহ জুমার দিন নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে আগে আগে মসজিদে এসে উপস্থিত হয়। মনযোগের সঙ্গে ইমামের খুতবাহ শোনে। এরপর নামাজ পড়ে। কিন্তু জুমার দিন কীভাবে মুসলিম উম্মাহর জন্য সৌভাগ্যের? 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বর্ণনায় বিষয়টি সুস্পষ্ট। এ দিনটির কারণে অন্যদের সঙ্গে উম্মতে মুহাম্মাদির আলাদা বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে। হাদিসে পাকে এসেছে-

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দুনিয়াতে আমাদের আসার সময় সব জাতির পরে। কিন্তু কেয়ামতের দিন আমরা সবার আগে (অগ্রবর্তী) থাকবো (সবার আগে আমাদের হিসাব-নিকাশ হবে)। অবশ্য আমাদের আগে ওদেরকে (ইয়াহুদি ও নাসারাকে আসমানি) কিতাব দেওয়া হয়েছে। আর আমরা (আসমানি) কিতাব (কোরআন) পেয়েছি ওদের পরে।

এই (জুমার) দিনের তাজিম ওদের ওপরই ফরজ করা হয়েছিল। কিন্তু ওরা তাতে মতভেদ করে বসে (দিনটিকে তারা ইবাদত-বন্দেগির দিন হিসেবে গ্রহণ করেনি)।

পক্ষান্তরে আল্লাহ আমাদেরকে তাতে (জুমার দিনের ব্যাপারে) একমত হওয়ার তওফিক দান করেছেন। সুতরাং সব মানুষ আমাদের থেকে পেছনে। ইয়াহুদি আগামী দিনকে (শনিবার) তাজিম (ইবাদতের দিন জুমা হিসেবে সম্মান) করে  এবং নাসারা করে তার পরের দিনকে (রোববার ইবাদতের দিন জুমা হিসেবে সম্মান) মানে ‘ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

সুতরাং এ দিনের সম্মানে আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে গমন করাও সৌভাগ্যের বিষয। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম উম্মতের উদ্দেশ্যে বলেছেন-

‘প্রত্যেক সাবালক পুরুষের জন্য জুমায় উপস্থিত হওয়া আবশ্যক।’ (নাসাঈ)

জুমার দিনের ইবাদত-বন্দেগির গুরুত্ব বোঝাতে তিনি কঠোর দিকনির্দেশনা দেন। এসব দিকনির্দেশনা থেকে জুমার দিনের ইবাদত-বন্দেগির গুরুত্বও প্রকাশ পায়। হাদিসে এসেছে-

** হজরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘আমি ইচ্ছা করেছি যে, এক ব্যক্তিকে লোকেদের ইমামতি করতে আদেশ করি। এরপর ওই সব শ্রেণির লোকেদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দিই, যারা জুমাতে অনুপস্থিত থাকে।’ (মুসলিম)

** হজরত আবু হুরায়রা ও ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেছেন, তাঁরা শুনেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মিম্বরের কাঠের উপর বলেছেন যে, ‘কিছু সম্প্রদায় তাদের জুমা ত্যাগ করা থেকে বিরত হোক, নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে অবশ্যই মোহর মেরে দেবেন। এরপর তারা অবশ্যই অবহেলাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’ (মুসলিম, ইবনে মাজাহ)

** হজরত আবুল জাদ যামরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা ওজরে ৩ জুমা ত্যাগ করবে; সে ব্যক্তি মুনাফিক।’ (ইবনে খুজাইমা, ইবনে হিব্বান)

** হজরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, এক দিন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার দিন দাঁড়িয়ে খুতবা দেওয়ার সময় বললেন, ‘সম্ভবত এখনো এমন লোক আছে, যার কাছে জুমা উপস্থিত হয়; অথচ সে মদিনা থেকে মাত্র এক মাইল দূরে থাকে এবং জুমায় উপস্থিত হয় না।’

দ্বিতীয় বার তিনি বললেন, ‘সম্ভবত এখনো এমন লোক আছে যার কাছে জুমুআহ উপস্থিত হয়; অথচ সে মদিনা থেকে মাত্র ২ মাইল দূরে থাকে এবং জুমায় হাজির হয় না।’

এরপর তিনি তৃতীয়বারও বললেন, ‘সম্ভবত এমন লোকও আছে যে মদিনা থেকে মাত্র তিন মাইল দূরে থাকে এবং জুমায় হাজির হয় না; তার হৃদয়ে আল্লাহ মোহর মেরে দেন।’ (আবু ইয়ালা, তারগিব)

** হজরত  ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পরপর ৩ জুমা ত্যাগ করলো, সে অবশ্যই ইসলামকে নিজের পেছনে ফেলে দিল।’ (তারগিব)

মনে রাখা জরুরি

জুমা মুসলিম উম্মাহর জন্য সৌভাগ্যের প্রতীক। জুমার দিনটি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষ দান। মুসলিম জাতি জুমার দিনকে ইবাদতের জন্য গ্রহণ করায় মহান আল্লাহ উম্মতে মুসলিমাহকে সবার আগে পরকালের হিসাব-নিকাশ ও অগ্রগামী দল হিসেবে সম্মান দেবেন।

মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও ফজিলতের উপর গুরুত্ব দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রস্ততি নিয়ে জুমার নামাজ পড়তে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। জুমার দিনের বিশেষ সৌভাগ্য পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আলোকিত রাঙামাটি