রাঙামাটি । শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ , ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ম ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১১:১৮, ৬ মে ২০২২

জুমার দিনে যে পাঁচ কাজ করা উচিত নয়

জুমার দিনে যে পাঁচ কাজ করা উচিত নয়
ফাইল ছবি

জুমার দিন অত্যন্ত তাৎপর্যবহ। পবিত্র আল-কোরআনে জুমা নামে একটি সুরা রয়েছে। আল্লাহতায়ালা জগৎ সৃষ্টির পূর্ণতা দান করেছেন এই দিনে। তাই মুসলিম উম্মাহ জুমার দিন শুক্রবার বিশেষ ইবাদতের লক্ষে মসজিদে একত্রিত হয়ে থাকে। জুমার দু’রাকাত ফরজ নামাজকে জোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। 

মুসলমানের সাপ্তাহিক ঈদের দিন হলো জুমার দিন। এ দিনের অনেক ফজিলত ও গুরুত্বের কথা একাধিকবার হাদিসে এসেছে। রাসুলে করীম (সা.) বলেছেন, ‘এটা শুক্রবার, যে দিনের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা আমাদের পূর্ববর্তী জাতি থেকে পৃথক করেছেন। ইহুদিদের জন্য বিশেষ ইবাদতের দিন ছিল শনিবার, খ্রিস্টানদের জন্য ছিল রোববার। যখন আল্লাহতায়ালা আমাদের প্রেরণ করলেন, তখন শুক্রবারকে জুমার দিন হিসেবে পালন করতে নির্দেশ দিলেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৭৯৭)।

কিন্তু এই নামাজের সময় আমরা কিছু ভুল হয়ে যায়। সে রকম পাঁচটি ভুল নিয়ে সংক্ষিপ্ত কথা—

পরিচ্ছন্ন না হয়ে জুমায় যাওয়া

আবু সাইদ খুদ্‌রি (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিন প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য গোসল করা ওয়াজিব (জরুরি)। আর মিসওয়াক করবে এবং সম্ভব হলে সুগন্ধি ব্যবহার করবে। ’ (বুখারি, হাদিস: ৮৮০, মুসলিম, হাদিস: ৮৪৬)

তাই সবার উচিত জুমার দিন গোসল করা এবং মিসওয়াক করা। যদি সামর্থ্য থাকে, সুগন্ধি ব্যবহার করা। এছাড়াও ভাল ও পরিচ্ছন্ন জামা পড়ে মসজিদে যাওয়া। রাসুল (সা.) নিজেও এই দিন ভালো ও পরিচ্ছন্ন পোশাক পরতেন।  

মসজিদে দেরি করে যাওয়া

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবাত (সহবাস পরবর্তীকালে) গোসলের মতো গোসল করে এবং নামাজের জন্য আগমন করে, সে যেন একটি উট কোরবানি করলো। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে, সে যেন একটি গাভী কোরবানি করলো। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে, সে যেন একটি শিং-বিশিষ্ট দুম্বা কোরবানি করলো। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমন করলো সে যেন একটি মুরগি কোরবানি করলো। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করলো, সে যেন একটি ডিম কোরবানি করলো। (বুখারি, হাদিস: ৮৮১)

জুমার নামাজের সময় অন্য কাজ করা

জুমার নামাজের সময় অন্য কাজ করা নিষিদ্ধ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসজিদের দিকে যাওয়া জরুরি। জুমার প্রথম আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায় কিংবা অন্য কাজ বন্ধ করে দেওয়া অথবা নামাজের জন্য বিরতি দেওয়া উচিত।

ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাইদ (রহ.) থেকে বর্ণিত, আয়েশা (রা.) বলেছেন, লোকজন নিজেদের কাজকর্ম নিজেরাই করতেন। যখন তারা দুপুরের পরে জুমার জন্য যেতেন, তখন সে অবস্থায়ই চলে যেতেন। তাই তাদের বলা হলো, যদি তোমরা গোসল করে নিতে ভালো হতো...। (বুখারি, হাদিস: ৯০৩, মুসলিম, হাদিস: ৮৪৭)

মনোযোগ দিয়ে খুতবা না শোনা

আবু হুরায়রাহ্‌ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমভাবে ওজু করে জুমার নামাজে এলো, নীরবে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনলো, তাহলে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি (অহেতুক) কঙ্কর স্পর্শ করলো, সে অনর্থক, বাতিল, ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যানযোগ্য কাজ করলো। (মুসলিম, হাদিস: ১৮৭৩)

খুতবার সময় কথা বলা

খুতবা শোনা ওয়াজিব। রাসুল (সা.) খুতবার সময় কথা বলতে নিষেধ করেছেন। আবু হুরায়রাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিন যখন তোমার পাশের মুসল্লিকে চুপ থাকো বলবে, অথচ ইমাম খুতবা দিচ্ছেন, তা হলে তুমি একটি অনর্থক কথা বললে। (বুখারি, হাদিস: ৯৩৪, মুসলিম, হাদিস: ৮৫১)

খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় সত্ত্বেও অনেকে জুমার নামাজে অবহেলা করে। অযথা ও বিনা কারণে কখনও জুমার নামাজ না পড়া ঠিক নয়। এ ব্যাপারে শরিয়তে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত পর পর তিন জুমা পরিত্যাগ করে, আল্লাহতায়ালা তার অন্তরে মোহর এঁটে দেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১০৫২; তিরমিজি, হাদিস : ৫০২; মুসলিম, হাদিস : ১৯৯৯)