রাঙামাটি । শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ , ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ম ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১০:০৮, ৭ অক্টোবর ২০২২

জুমার নামাজের আগে যে কাজগুলোই ইবাদত

জুমার নামাজের আগে যে কাজগুলোই ইবাদত
ফাইল ছবি

সপ্তাহের সেরা মহিমান্বিত দিন জুমা। এদিনকে বলা হয় ‘ইয়াওমুল জুমা’। কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন ব্যাখ্যা দ্বারা এই দিনের মর্যাদার কথা জানা যায়। জুমার অন্যতম প্রধান ইবাদতের মধ্যে একটি হলো জুমার নামাজের আগে খুতবাহ শোনা। অতঃপর নামাজ আদায় করা।

সে কারণেই জুমার নামাজের আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মহান প্রভু। মসজিদে গিয়ে খুতবাহ শোনা প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ নসিহত পেশ করেছেন বিশ্বনবী। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনাগুলো কী?

দ্রুত মসজিদে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ

হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত (মসজিদে যাওয়ার কাজ) কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ।’ (সুরা জুমআ :আয়াত ৯)

জুমর গুরুত্বপূর্ণ এ খুতবাহ শোনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত চুপচাপ, মনোযোগ, একাগ্রতা, আসক্তি, আবেগ ও আগ্রহের সঙ্গে শোনা জরুরি। আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকনির্দেশনাগুলো সর্বান্তকরণে আমল করার জন্য বিশৃঙ্খলা না করে নিরবে মনোযোগ দিয়ে ভালোভাবে জুমার খুতবাহ শোনার দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন বিশ্বনবী (সা.)। হাদিসে পাকে এসেছে-

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গোসল করে জুমার নামাজ পড়তে এসে নির্ধারিত (সুন্নাত) নামাজ পড়ল; তারপর নিরবে (বসে অত্যন্ত মনোযোগ ও একাগ্রতার সঙ্গে খুতবা শুনতে) থাকল, দ্বিতীয় খুতবা থেকে অবসর হওয়ার পর ইমামের সঙ্গে ফরজ নামাজ আদায় করল; তার গত এক জুমা থেকে অন্য জুমা (এক সপ্তাহ) বরং আরও অতিরিক্তি তিন দিনের অর্থাৎ গত ১০ দিনের গোনাহ মাফ করে দেয়া হলো।’ (মুসলিম)

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, (খুতবার গুরুত্ব এত বেশি যে,) খতিব খুতবা দেয়ার জন্য বের হয়ে (মিম্বারে) এলে তখন (মসজিদে উপস্থিত মুসল্লিদের জন্য) কোনো নামাজ পড়া এবং কথা বলাও জায়িজ নেই।’ (ইবনে মাজাহ)

মনে রাখতে হবে জুমার দিন নামাজের আগে প্রত্যেক মসজিদে ঈমাম গুরুত্বপূর্ণ বয়ান পেশ করেন। যা মানুষের ঈমানি খোরাক। সপ্তাহজুড়ে ইবাদত-বন্দেগি করার অনুপ্রেরণা। এ দিন দ্রুত মসজিদে আসায় যেন কারো জীবিকা বা উপর্জনে ঘাটতি দেখা না দেয় সে জন্য পরবর্তী করণীয় জানিয়ে মহান আল্লাহ বলেন-

فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيراً لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

‘অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা-উপার্জন) তালাশ কর ও আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমআ :আয়াত ১০)

শুধু তা-ই নয়, মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় কল্যাণ-অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে এভাবে দোয়া করে বের হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্বনবী-
اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَسْئَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে উত্তম জীবিকা প্রার্থনা করছি।’

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমার দিন মসজিদে এসেই নির্ধারিত নামাজ আদায় করে সামনের (প্রথম) কাতার থেকে সারি পূরণ করে বসে যাওয়া এবং জুমার দিন খুতবাহ শোনার জন্য অপেক্ষা করাও এদিনের ইবাদত-বন্দগির অন্যতম আদব।

যেহেতু জুমার খুতবাহ হচ্ছে মুমিন মুসলমানের জন্য হেদায়েত ও কল্যাণের নসিহত। জীবন পরিচালনার পথনির্দেশিকা। যা ভালোভাবে একাগ্রতার সঙ্গে শোনে সে অনুযায়ী আমল করাই মুমিনের একান্ত কাজ। সে কারণেই জুমার দিন মসজিদে এসে- 

১. কোলাহল-বিশৃঙ্খলা এবং কথাবার্তা-শোরগোল করা যাবে না।

২. নির্ধারিত সুন্নাত নামাজ পড়ে মনোযোগের সঙ্গে খুতবাহ শোনার জন্য অপেক্ষা করা।

৩. খুতবাহ শুরু হলে তা একাগ্রতার সঙ্গে আমলের নিয়েতে ইমামের বয়ান শোনাই মুমিন মুসলমানের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিন একাগ্রতার সঙ্গে কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী জুমার খুতবাহ শোনার তাওফিক দান করুন। খুতবাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা ও আমল করার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।