রাঙামাটি । বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ , ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ১১:৫১, ৩১ অক্টোবর ২০২১

আইসিটি খাতে বিশ্বে আস্থার জায়গা বাংলাদেশ

আইসিটি খাতে বিশ্বে আস্থার জায়গা বাংলাদেশ

ফেসবুক, উবার, এয়ার-বিএনবি, টুইটার, লিংকড-ইন, টেসলা বা ড্রপবক্সের মতো আমেরিকান প্রযুক্তি সংস্থাগুলো যাত্রা শুরুর মাত্র কয়েক বছরে শত শত বিলিয়ন, এমনকি ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। এসব কোম্পানির তরুণ উদ্যোক্তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্ভাবনী শক্তির কাছে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী অনেক কোম্পানিই এখন ধরাশায়ী বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফ কামাল।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের উদ্যোক্তা, উদ্ভাবক ও স্টার্টআপগুলোকেও সে পর্যায়ে যেতে হবে। আশার কথা হলো প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও; বরং অল্প দিনেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে একটি বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছে।

‘বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট (ওয়ান বিগ উইনার) ২০২১’ নামের প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে শনিবার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে দেশি-বিদেশি তরুণ উদ্যোক্তা বা স্টার্টআপগুলোকে অনুপ্রাণিত করতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়ামে আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।

আইসিটি বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অধীনে উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্পের (আইডিইএ) উদ্যোগে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট ২০২১’ আয়োজনের প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৫৭টি দেশ থেকে ৭ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা, উদ্ভাবক ও স্টার্টআপ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়।

প্রতিযোগিতার ফাইনালে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ফেসবুক, উবার, এয়ার-বিএনবি, টুইটার, লিঙ্কড-ইন, টেসলা বা ড্রপবক্সের মতো আমেরিকান প্রধান প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর কোনটিই ২০ বছর আগে ছিল না। এমনকি গুগল মাত্র ২১ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু এসব কোম্পানি মাত্র কয়েক বছরে শত শত বিলিয়ন, এমনকি ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। ই-কমার্স জগতের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান শুধু অ্যামাজনই ঘণ্টায় আড়াই মিলিয়ন ডলার নিট প্রফিট করে, যা সত্যি অবিশ্বাস্য।

‘বিশ্বের বৃহত্তম মিডিয়া সংস্থা ফেসবুক। তাদের বেতনভুক্ত কোনো সাংবাদিক বা কন্টেন্ট নির্মাতা নেই। বিশ্বের বৃহত্তম হোটেল চেইন এয়ার বিএনবির কোনো হোটেল নেই। বিশ্বের বৃহত্তম ট্যাক্সি কোম্পানি উবার একটিও ট্যাক্সির মালিক নয়। এই প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো সার্ভিস সেক্টরে বিপ্লব ঘটিয়েছে। ঐতিহ্যবাহী অনেক কোম্পানির বাজার দখল করে নিয়েছে শুধু তারুণ্যের বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে।’

মুস্তফা কামাল আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ওয়ান বিগ উইনার ২০২১ আয়োজন এমন একটি উদ্যোগ যা স্টার্টআপ সংস্কৃতি গঠন ও উন্নয়নে বর্তমান সরকারের অঙ্গীকারের একটি সুস্পষ্ট প্রতিফলন। আশা করা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই তারুণ্যের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে আবির্ভূত হবে।

‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তরুণরা একদিন সফল এবং সার্থক মানুষ হিসেবে রূপান্তরিত হয়ে আমাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে প্রিয় মাতৃভূমিকে সারা বিশ্বে তুলে ধরবে। আজ সময় এসেছে তরুণদের স্বপ্ন দেখার এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নের। দেশি ও বিদেশি স্টার্টআপদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নতুন উদ্ভাবন বা উদ্ভাবনী স্টার্টআপ খুঁজে বের করতে, আইডিয়া প্রকল্প তরুণ উদ্যোক্তা, অর্থাৎ স্টার্টআপদের নতুন উদ্ভাবনী ধারণাকে উৎসাহিত করে দেশে একটি সঠিক স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়তে নিশ্চয়ই বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, “আরও বিশ্বাস করি ‘বঙ্গবন্ধু ইননোভেশন গ্র্যান্ট ২০২১’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরাই একদিন গুগল, টেসলা, অ্যামাজনের মতো বিশাল কোম্পানিতে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ।”

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব ড. মো. আব্দুল মান্নান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আইডিয়া প্রকল্পের পরিচালক ও যুগ্ম সচিব আব্দুর রাকিব।

স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের উন্মেষ

অর্থমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সাল থেকে। বর্তমানে বাংলাদেশে ২ হাজার ৫০০টির বেশি স্টার্টআপ কাজ করছে। এগুলো অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

তিনি বলেন, ‘দেশে বর্তমানে ৪০টিরও বেশি এক্সেলেরেটর এবং ইনকিউবেটর প্রোগ্রাম তাদের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু স্টার্টআপ দেশে প্রচুর বিনিয়োগ নিয়ে এসেছে যা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। স্টার্টআপদের মাধ্যমে ১৫ লাখের বেশি মানুষের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।’

তরুণদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের তরুণরা দেশের মহান মুক্তিযোদ্ধাদের গর্বিত রক্তের উত্তরাধিকার। তারা প্রতিভাবান এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ। জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ যুবসমাজ। তাদের পক্ষেই সম্ভব সমস্যাকে সম্ভাবনায় পরিণত করা। বাংলাদেশের সামনে জনমিতিক লভ্যাংশের পূর্ণ সম্ভাবনাকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। তরুণদের মধ্যে সব ধরনের ব্যবসায় উদ্যোগ বা স্টার্টআপ সৃষ্টিতে সহায়তার লক্ষ্যে আমরা আমাদের ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিলাম।

‘সেই ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরের বাজেটেও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। অচিরেই আইসিটি বিভাগ থেকে তরুণ সমাজ স্টার্টআপ গঠনে এই তহবিল সুবিধা লাভ করতে পারবে। যুবসমাজকে সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল এবং উৎপাদনমুখী শক্তিতে রূপান্তরে সরকারের এ কার্যকর পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।’

আলোকিত রাঙামাটি