শেষ বাঁশি বাজতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মেসি
কাঁদছেন মেসি, জড়িয়ে ধরছেন সতীর্থরা
ক্যারিয়ারে ব্যক্তিগত অর্জনের সবকিছুই পেয়েছেন। শুধু আক্ষেপ ছিল একটি আন্তর্জাতিক শিরোপার। জীবনের সবকিছুর বিনিময়ে হলেও আর্জেন্টিনার জার্সিতে একটি শিরোপা ছিল মেসির চাওয়া। সেটি পাওয়ার পর আর আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তিনি। মাঠেই ভেঙে পড়েন কান্নায়।
সবশেষ ১৯৯৩ সালে কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর সীর্ঘ ২৮ বছরের অপেক্ষা। পেশাদার ক্যারিয়ারে দেড় দশকের বেশি সময় খেললেও জাতীয় দলের হয়ে এতদিন কোনো শিরোপা জেতেননি মেসি। অবশেষে ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে সমাপ্তি হলো সেই শিরোপাখরার।
আর এ কারণেই হয়তো রেফারি শেষ বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়েন লিওনেল মেসি। যে কান্না ছিল সুখের, আক্ষেপ ঘোচানোর আনন্দের।
সবশেষ ১৯৮৬ দিয়েগো ম্যারাডোনার হাত ধরে বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর ১৯৯১ ও ১৯৯৩ সালের কোপা আমেরিকাও জিতেছে আলবিসেলেস্তেরা। এরপর আর নিজের জীবদ্দশায় আর্জেন্টিনার আন্তর্জাতিক শিরোপা দেখতে পারেননি দিয়েগো ম্যারাডোনা।
২০০৪, ২০০৭, ২০১৫ ও ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকা ও ২০১৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা। কিন্তু ট্রফি নিজেদের করতে পারেননি মেসি। এবার আর ভুল করলেন না সময়ের সেরা ফুটবলার। ব্রাজিল থেকেই ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরলো আলবিসেলেস্তেরা।
রোববার ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচটিতে আধিপত্য বিস্তার করেই খেলছিল স্বাগতিক ব্রাজিল। ম্যাচের শুরু থেকে বারবার আর্জেন্টিনার রক্ষণে হানা দেয় তারা। তবে আর্জেন্টিনা জমাট রক্ষণ ভেঙে সাফল্যের দেখা পায়নি সেলেসাওরা।
খেলা শুরু না হতেই ৩ মিনিটের মাথায় ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখলেন ব্রাজিলের ফ্রেড। সাইডলাইনে মন্টিলকে ফাউল করায় ফ্রেড এই শাস্তি পান।
উল্টো ম্যাচের ২২ মিনিটের মাথায় রদ্রিগো ডি পলের দুর্দান্ত থ্রু বলে রেনান লোদির ভুলে এডারসনকে ফাঁকি দিয়ে ব্রাজিলের জালে বল জড়ান ডি মারিয়া।
ব্রাজিল ডিফেন্সের ওপর দিয়ে ডি পলের শট প্রথম সুযোগেই নিজের আয়ত্বে নেন ডি মারিয়া; লোদি থাকলেও তিনি রক্ষা করতে পারেননি। একা এডারসনকে ফাঁকি দিতে সমস্যা হয়নি অভিজ্ঞ ডি মারিয়ার। শুরুতেই দলকে এগিয়ে দেন এ তারকা ফরোয়ার্ড।
অফফর্মে থাকা নিকোলাস গনজালেজকে বসিয়ে ফাইনালের শুরুর একাদশে ডি মারিয়াকে জায়গা দিয়েছেন আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি। সেই ডি মারিয়াই দলকে এনে দিলেন প্রথম সাফল্য।
১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যান লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা।
দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেই ডিফেন্সিভ খেলা শুরু করে আর্জেন্টিনা। তবে আক্রমণত্মক ছিল ব্রাজিল। ৫১ মিনিটে নেইমারকে মাঝমাঠে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন লো সেলসো।
একের পর এক জোরাল আক্রমণ করতে থাকে পেলের উত্তরসূরীরা। যার সুবাদে ম্যাচের ৫২ মিনিটেই পেয়ে যায় গোলের দুর্দান্ত সুযোগ। ডি-বক্সের মধ্য থেকে সেটি কাজেও লাগিয়েছিলেন রিচার্লিসন। কিন্তু আক্রমণের শুরুতে তিনি অফসাইডে থাকায় বাতিল করা হয় গোল।
৫৫ মিনিটে মার্টিনিজের দারুণ সেভে রক্ষা পায় আর্জেন্টিনা। ডান দিক থেকে নেইমারের বাড়ানো বলে শট নিয়েছিলেন রিচার্লিসন। কিন্তু মার্টিনেজকে ফাঁকি দিতে পারেনি বল।
এরপর আঘাত পালটা আঘাত চললেও আর কোন গোলের দেখা পায়নি দুই দল। এতেই ৭১ বছর পর মারকানায় হার নিয়ে মাঠা ছাড়ল তিতের শিষ্যরা।
ফাইনালে ম্যাচে খেলা নিয়ে অনেক অনিশ্চয়তা ছিল আর্জেন্টিনা দলের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোর। অবশেষে তাকে নিয়েই সাজানো হয়েছিল একাদশ। লাউতারো মার্টিনেজকে মাঝে রেখে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে একাদশ সাজিয়েছিলেন স্কালোনি।
অন্যদিকে সেমিফাইনালের মতো এ ম্যাচেও ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে একাদশ সাজিয়েছিলেন ব্রাজিল কোচ তিতে। তবে সেমিফাইনালে স্ট্রাইকার পজিশনে ছিলেন রিচার্লিসন। ফাইনালে নেইমারকে স্ট্রাইকার পজিশনে দিয়ে একই ফর্মেশনে দল সাজিয়েছিলেন ব্রাজিল কোচ।
আলোকিত রাঙামাটি