রাঙামাটি । বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ , ১৩ চৈত্র ১৪৩০

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৬:৩৭, ১ জুন ২০২০

আকাশচুম্বী সাফল্য- এসএসসির সব সূচকেই ভাল ফল

আকাশচুম্বী সাফল্য- এসএসসির সব সূচকেই ভাল ফল

ছবি- সংগৃহীত


প্রাণঘাতী করোনার ছোবলে এক উদ্বেগজনক প্রেক্ষাপটে প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় রীতিমতো আকাশচুম্বী সাফল্য অর্জন করেছে শিক্ষার্থীরা। পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তি বৃদ্ধি, ছেলেদের পেছনে ফেলে মেয়েদের সামনে চলে আসা, ঝরে পড়া কমে যাওয়া, শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি ও শতভাগ ফেল করা স্কুল কমে যাওয়া থেকে শুরু করে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে ফলের সকল সূচকে। এবার পাসের হার ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গত বছর ছিল ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। এক বছরেই সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ হাজার ৩০৪ জন বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল এক লাখ পাঁচ হাজার ৫৯৪ জন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এবারের মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ করেন। এরপর সচিবালয় থেকে ফেসবুক লাইভে মাধ্যমিকের ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। এ সময় তার পাশে ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন।

এবার ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৮ জন শিক্ষার্থী মাধ্যমিকের এ চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়, তাদের মধ্যে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন পাস করেছে। নয়টি সাধারণ বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ, মাদ্রাসা বোর্ডের দাখিলে ৮২ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং কারিগরি বোর্ডের এসএসসি ভোকেশনালে ৭১ দশমিক ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এবার পাসের হার এবং জিপিএ-৫ দুদিক দিয়েই সংখ্যায় এগিয়ে আছে মেয়েরা, পিছিয়ে ছেলেরা।

ছাত্রদের পাসের হার যেখানে ৮১ দশমিক ৬৩ শতাংশ, সেখানে ছাত্রীদের মধ্যে ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশ পাস করেছে। এবার ১০ লাখ ২১ হাজার ৪৯০ জন ছাত্র পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৮৯২ জন। আর ১০ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৮ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তাদের মধ্যে পাস করেছে ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৬৩১ জন। পূর্ণাঙ্গ জিপিএ অর্থাৎ পাঁচে পাঁচ পাওয়া এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৫ হাজার ৭৫৪ জন ছাত্র এবং ৭০ হাজার ১৪৪ জন ছাত্রী।

নতুন দৃষ্টান্ত : ভিডিও কনফারেন্সে ফল প্রকাশ ॥ করোনার হানায় সারা বিশ্বেই বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনধারা থেকে শুরু করে অফিস আদালত এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমও। পরিবর্তনের এ ধারা প্রতিফলিত হয়েছে আমাদের দেশেও। এসএসসির ফল প্রকাশের মাধ্যমে নতুন যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ।

সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের অনুলিপি তুলে দেয়া হয়। সেখানে ফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। পুরো বিষয়টি পরিচালিত হয়েছে ভিডিও কনফারেন্সে। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম এই প্রক্রিয়া অনুসরণের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফল হস্তান্তরের পর বেলা ১১টায় ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে ফলের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। করোনার সংক্রমণের ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এবার আগের মতো ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন করে ফল প্রকাশ করা হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও জমায়েত ছিল নিষিদ্ধ।

কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ফল পাঠানো হয়নি। ফল প্রকাশের দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অফিসও বন্ধ রাখতে বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা ফল জানতে পারে মোবাইলে এসএমএস ও স্ব স্ব শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে। মোবাইলে এসএমএসের জন্য আগেই শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ দিয়েছিল সকল মোবাইল অপারেটর।

এক বছরেই জিপিএ-৫ বেড়েছে ৩০ হাজার ৩০৪ জন ॥ পরীক্ষায় এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন পরীক্ষার্থী। গতবারের চেয়ে এবার ৩০ হাজার ৩০৪ জন বেশি পরীক্ষার্থী ফলের সর্বোচ্চ এই সূচক অর্জন করেছে। গতবার মোট এক লাখ পাঁচ হাজার ৫৯৪ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল।

এবার ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৬ হাজার ৪৭ জন। দিনাজপুর বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২ হাজার ৮৬ জন শিক্ষার্থী। বরিশাল বোর্ডে ৪ হাজার ৪৮৩, রাজশাহী বোর্ডে ২৬ হাজার ১৬৭ জন, ময়মনসিংহ বোর্ডে সাত হাজার ৪৩৪ জন, যশোর বোর্ডে ১৩ হাজার ৭৬৪ জন, সিলেট বোর্ডে চার হাজার ২৬৩ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে নয় হাজার ৮ জন ও কুমিল্লা বোর্ডে ১০ হাজার ২৪৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ লাভ করেছে।

পাসের হার কোন বোর্ডে কত ॥ নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এবার ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর গড় পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮২ দশমিক ৩৪ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ৮৭ দশমিক ৩১, কুমিল্লায় ৮৫ দশমিক ২২, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৮০ দশমিক ৩১, বরিশাল বোর্ডে ৭৯ দশমিক ৭০, সিলেট বোর্ডে ৭৮ দশমিক ৭৯, দিনাজপুর বোর্ডে ৮২ দশমিক ৭৩, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৮৪ দশমিক ৭৫।

সাফল্যের পেছনে ॥ শিক্ষার্থীদের আকাশচুম্বী সাফল্য এবারও চমকে দিয়েছে সবাইকে। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরের পাবলিক পরীক্ষার এই সাফল্যের পেছনের কারণ কী? শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, কঠোর মনিটরিংয়ে শ্রেণীকক্ষে নিয়মিত শিক্ষা নিশ্চিত করা, ইংরেজী ও গণিতসহ বিজ্ঞান বিষয়ে ভাল ফল, বিনামূল্যে সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছে দেয়া, শিক্ষার উপকরণ হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার ভাল ফলের পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।

শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলছিলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরেও ফলের সূচকে বেশকিছু ইতিবাচক লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি এর পেছনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

যেমন-বিনামূল্যে সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেয়া, টেলিভিশনে দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের পাঠদান প্রচার, শিক্ষার উপকরণ হিসেবে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার এবং নকল বিরোধী ব্যাপক প্রচার।

মন্ত্রী আরও বলেন, গত বছরের ন্যায় এ বছরও উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অবমূল্যায়ন বা অতিমূল্যায়ন রোধে বোর্ডসমূহ বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রধান পরীক্ষকগণকে উত্তরমালা প্রণয়নের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রণীত নমুনা উত্তরমালার আলোকে উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য পরীক্ষকগণকে প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

পরীক্ষকদের উত্তরপত্র মূল্যায়নের গুণগতমান যাচাইয়ের জন্য একটি প্রশ্নমালা সকল প্রধান পরীক্ষককে সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া, সারাবছর পরীক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনলাইনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চালু রয়েছে।

তিনি বলেন, পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এ তথ্যগুলো খুবই ইতিবাচক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গৃহীত নানা পদক্ষেপ, শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকগণের অক্লান্ত প্রচেষ্টাসহ সমগ্র শিক্ষা পরিবারের সার্বিক সহযোগিতায় এ অবস্থায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। শিক্ষা পরিবারের সকলকে জানাচ্ছি অভিনন্দন।

বিভিন্ন বোর্ডের অকৃতকার্য চিত্র ॥ যশোর শিক্ষা বোর্ডে অকৃতকার্য হয়েছে মোট ২২ দশমিক ৬৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। সেই সঙ্গে বরিশাল বোর্ডে ২০ দশমিক ৩০ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডে ১৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ২১ দশমক ২১ শতাংশ ও ময়মনসিংহ বোর্ডে অকৃতকার্য হয়েছে মোট ১৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। যদিও শিক্ষামন্ত্রী জানান, এবার দেশে শতভাগ ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে। গত বছর শতভাগ ফেল করা বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৭টি হলেও, এবার তা কমে ১০৪টি হয়েছে।

পুনঃনিরীক্ষার আবেদন আজ থেকে ৭ জুনের মধ্যে ॥ পরীক্ষার ফল প্রকাশের ঠিক পরের দিন অর্থাৎ আজ ১ জুন থেকেই শুরু হবে ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন। যারা আশানুরূপ ফল পায়নি তাদের জন্য এই ব্যবস্থা। আজ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে। আগের নিয়মেই ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন গ্রহণ করা হবে। এসএমএসের মাধ্যমে ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। টেলিটক সংযোগ থেকে RSC <স্পেস> বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর <স্পেস> রোল নম্বর <স্পেস> বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে।

একই এসএমএসে একাধিক বিষয়ের জন্য আবেদন করা যাবে, এ ক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে ‘কমা’ দিয়ে লিখতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর (পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) দেয়া হবে। আবেদনে সম্মত থাকলে RSC <স্পেস> YES <স্পেস> পিন নম্বর <স্পেস> যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে।

প্রতিটি বিষয় ও প্রতি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে। যেসব বিষয়ের দুটি পত্র (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) রয়েছে, সেসব বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করলে মোট ২৫০ টাকা ফি কাটা হবে।

আলোকিত রাঙামাটি

সর্বশেষ