আল্লামা শফীকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন মামুনুল-বাবুনগরী
মামুনুল হকের এমন বক্তব্য প্রমাণ করে তিনিসহ হেফাজতে ইসলামের বর্তমান নেতারা ক্ষমতা লোভী ছিলেন।
গোপন বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টার সময় মাদ্রাসার কিছু ছাত্র মাদ্রাসার অভ্যন্তরে মাঠে মাওলানা আনাস মাদানীকে বহিষ্কারের জন্য বিক্ষোভ ও স্লোগান দেয়া শুরু করে। সে সময় বহিরাগত ব্যক্তি আহসান উল্লাহ (সেক্রেটারি, আল আমিন সংস্থা, হাটহাজারী) এবং মাওলানা আজিজুল হক ইসলামবাদী (সাংগঠনিক সম্পাদক, হেফাজত ইসলাম কেন্দ্রীয় কমিটি) এর নেতৃত্বে উচ্ছৃঙ্খল বেশকিছু ছাত্র মাওলানা আনাস মাদানী এবং মাদ্রাসার মুঈনে মুহতামিম আল্লাম শেখ আহমেদ এর কক্ষ ভাংচুর এবং একই সাথে স্থানীয় বহিরাগত মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির, যুগ্ম মহাসচিব, হেফাজত ইসলাম কেন্দ্রীয় কমিটি (ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়, হাটহাজারী) এবং মীর ইদ্রিস (সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, হেফাজত ইসলাম কেন্দ্রীয় কমিটি, শিক্ষক, আল হুদা মহিলা মাদ্রাসা, হাটহাজারী) এর নেতৃত্বে ৭/৮ জন উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রদের অপর একটি গ্রুপ আল্লামা শাহ আহমদ শফির কক্ষে প্রবেশ করে গালিগালাজ শুরু করে।
উক্ত সময় অপর স্থানীয় বহিরাগত মাওলানা হাবিবুল্লাহ (সহকারী মহাসচিব, হেফাজত ইসলাম কেন্দ্রী কমিটি) এর নেতৃত্বে ৪০/৪৫ জনের পৃথক একটি গ্রুপ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং মাওলানা আনাস মাদানীকে হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ এবং জুনায়েদ বাবুনগরীকে পুনর্বহাল করার দাবি জানায়। কিন্তু আল্লামা শাহ আহমদ শফি তাদেরকে পরবর্তী শুরু বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান। এতে বিক্ষোভকারীরা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে এবং তাকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করে ও হত্যার হুমকি দেয় বলে জানা যায়। পরবর্তীতে আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টার দিকে জুনায়েদ বাবুনগরী, শুরা সদস্য মাওলানা নুমান ফয়েজী (উপদেষ্টা হেফাজত ইসলাম কেন্দ্রীয় কমিটি), মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির, মীর ইদ্রিস এবং মাওলানা জাফর আহমেদ (সহকারী মহাসচিব, হেফাজত ইসলাম কেন্দ্রীয় কমিটি, সেক্রেটারি ওলামা পরিষদ, হাটহাজারী শাখা) একত্রিত হয়ে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর কাছে মাদ্রাসার খালি প্যাডে স্বাক্ষরের জন্য বল প্রয়োগ করে। কিন্তু তিনি রাজি না হওয়াতে স্থানীয় বহিরাগত মোঃ নজরুল ইসলাম, আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নাতী আরশাদের গলায় ভাঙা কাঁচের টুকরা ধরে হত্যার হুমকি দেয়। তা সত্ত্বেও আল্লামা শাহ আহমদ শফী রাজী না হলে উক্ত সময়ে এ বিষয়ে মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনিরের সাথে মাওলানা মামুনুল হকের মোবাইল ফোনে কথা বলে জানা যায়। মোবাইলে কথা শেষ হওয়া মাত্র মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর চেয়ারে লাথি মারে এবং নাকের অক্সিজেন লাইন খুলে ফেলে বলে জানা যায়। এতে আল্লামা শাহ আহমদ শফী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। উল্লেখ্য, আল্লামা শাহ আহমদ শফী কোনো আদেশ নামায় স্বাক্ষর না করলেও বিক্ষোভকারীরা মাদ্রাসার মাইকে ঘোষণা দেয় যে, মাওলানা আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং আল্লামা শাহ আহমদ শফি তার দায়িত্ব হতে অব্যাহতি নিয়েছেন।
বিষয়টি বাবুনগরী ও মামুনুল হকেরা কতোটা ক্ষমতা পাগল ছিলো তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
আল্লামা আহমদ শফী অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে অতিসত্বর হাসপাতালে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করা হলেও তাকে সময় মতো নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ আন্দোলনকারী ছাত্ররা আল্লামা শফীকে বহনকারী এ্যাম্বুলেন্সকে মাদ্রাসার মূল গেইট দিয়ে প্রবেশ করতে না দিয়ে মাদ্রাসার কবরস্থানের গেইট সংলগ্ন বাইতুল আতিক মসজিদের সামনে আটকে রাখে। পরবর্তীতে মুমূর্ষু অবস্থায় আল্লামা শাহ আহমদ শফিকে স্ট্রেচারে করে এ্যাম্বুলেন্সের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় আল্লামা শাহ আহমদ শফিকে এ্যাম্বুলেন্সে তোলা হলেও মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির এবং এনামুল হাসান ফারুকীর (জুনায়েদ বাবুনগরীর পিএস) নেতৃত্বে বিক্ষোভকারীরা অ্যাম্বুলেন্স ছাড়তে বাঁধা দেয়। তারা দাবি করে, এ্যাম্বুলেন্সে শুধুমাত্র আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নাতী আরশাদ থাকবে। এছাড়া তারা আরো দাবী করে, স্থানীয় এমপি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ঘটনাস্থালে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারীদের কোন ক্ষতি হবে না মর্মে লিখিত দিতে হবে। একপর্যায়ে হাটহাজারী হানার ওসি মাসুদ আলম এর সাথে আন্দোলনকারীদের বৈঠক হয়। এসকল ঘটনার প্রায় ৪৫/৫০ মিনিট পরে এ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দেয়া হয়। যার কারণে ১৭ সেপ্টেম্বর রাত ২টায় আল্লামা শাহ আহমদ শফী স্ট্রোক করলেও আন্দোলনকারীদের বাঁধার কারণে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে যথেষ্ট বিলম্ব হয়। যার কারণে আহমদ শফী মারা গিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
আলোকিত রাঙামাটি