রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ , ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৭:৩৯, ৭ মার্চ ২০২০

ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নেতারা, যাদের উদ্যোগে বদলেছে বিশ্ব

ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নেতারা, যাদের উদ্যোগে বদলেছে বিশ্ব

ছবি: শ্রেষ্ঠ নেতারা


রাষ্ট্রের উন্নতিতে নিরলস কাজ করে যান রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। সরকার এবং রাষ্ট্রনেতাদের উদ্যোগেই একটি দেশের সামগ্রিক উন্নতি ঘটে। এজন্য দরকার সঠিক নেতৃত্বসম্পন্ন যোগ্য ব্যক্তিত্ব। 

যে একটি দেশ বা জাতির উন্নয়ন ঘটাতে নিজের জীবনকেও বলি দিতে পিছুপা হন না। তার প্রকৃত দৃষ্টান্ত হলেন বাঙালির অবিস্মরণীয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। তার কারণেই বাঙালিরা বুকের রক্ত ঢেলে মুক্তিযুদ্ধ করে আজ স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হয়েছে।

সাহস, সহিষ্ণুতা কিংবা হিংস্রতার সমন্বয়ে যুগে যুগে ক্ষমতার শীর্ষস্থানে আরোহণ করেছেন অনেক বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তিত্বরা। বিবিসি ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি ম্যাগাজিনের এক জরিপে উঠে এসেছে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কয়েকজন নেতার নাম। যারা স্ব-স্ব রাজত্বকালে ঘটিয়েছেন নানা পরিবর্তন। ইতিবাচক অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে তাদের প্রাক্কালে। 

ইতিহাসবিদ রানা মিত্তির, মার্গারেট ম্যাকমিলান এবং গাস ক্যাসলি-হাইফোর্ড বিবিসির এক জরিপের মাধ্যমে নির্ধারণ করেছেন ইতিহাসের এসব ব্যক্তিত্বদের। দর্শকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত ভোট অনুসারে তাদেরকে বিশ্বনেতাদের তালিকায় প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

মহারাজা রঞ্জিত সিং

 

মহারাজা রঞ্জিত সিং

রঞ্জিত সিং এর জন্ম ১৭৮০ সালে। পাঞ্জাবের অর্থনৈতিক, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝেই তিনি বড় হন। তখন বিভিন্ন উপনিবেশিক শক্তি দ্বারা ভারতবর্ষ শাসিত ছিল। মহারাজা রঞ্জিত সিংয়ের শাসন কাল ছিল ১৮০১ থেকে ১৮৩৯ সাল পর্যন্ত। তিনি ১৯ শতকের গোড়ার দিকে শিখ খালসা বাহিনীর আধুনিকায়ন, একতাবদ্ধ করণ, আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত সুবিধা স্থাপন, ব্রিটিশদের সঙ্গে সমঝোতা সব মিলিয়ে পাঞ্জাবের সুসময় ফিরিয়ে আনেন। ইতিহাসবিদ ম্যথু লকউডের মতে, সিং পাঞ্জাব এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছিলেন জাতিকে একতাবদ্ধ করে আধুনিকতার ছোঁয়ায়।

 

আমিলকার কাব্রাল

 

আমিলকার কাব্রাল

বিশ শতকের আফ্রিকান স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন তিনি। তার মুক্তির আদর্শে আনুপ্রাণিত হয়ে অন্যান্য দেশেও সংগ্রাম ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৬০ এর দশকে বেশিরভাগ আফ্রিকান দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। তবে পর্তুগালের স্বৈর শাসক তাদের শাসিত অ্যাংগোলা, মোজাম্বিক, কেপ ভার্দে এবং পর্তুগিজ গিনির স্বাধীনতা প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। কাব্রাল গিনির স্বাধীনতা সংগ্রামের নের্তৃত্ব প্রদান করেন। তাকে অনুসরণ করে পর্তুগালেও গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু হয়। 

তার জীবনাদর্শ শিক্ষা দেয় সব বাধা অতিক্রম করে কীভাবে মুক্তির পথে অগ্রসর হতে হয়। বিবিসির জরিপে ২৫ শতাংশ ভোট পেয়ে এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন আফ্রিকার স্বাধীনকামী নেতা আমিলকার কাব্রাল। তিনি গিনির দশ লাখ মুক্তিকামী জনগণকে একতাবদ্ধ করে পর্তুগিজ উপনিবেশ থেকে মুক্ত করেছিলেন। তাকে অনুসরণ করে আফ্রিকার অন্যান্য দেশও উপনিবেশ বিরোধী সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হয়। 

 

উইনস্টন চার্চিল 

 

উইনস্টন চার্চিল 

বিবিসির জরিপে, তৃতীয় অবস্থানে আছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল। তিনি ১৯৪০ থেকে ১৯৪৫ এবং ১৯৫১ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি একধারে রাজনীতিবিদ এবং লেখক ছিলেন। তাকে বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষের কাছে জার্মান বাহিনীর পরাজয়ের ক্ষেত্রে চার্চিলের সুকৌশলী যুদ্ধনীতি বড় ভূমিকা রাখে।

 

আব্রাহাম লিংকন

 

আব্রাহাম লিংকন

তালিকায় চতুর্থ স্থানে আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। আব্রাহাম লিংকন ১৮৬১ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। দাস প্রথা বিলুপ্তি তার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। আব্রাহাম লিংকনের অসাধারণ দূরদর্শীতা এবং নেতৃত্বসম্পন্ন ব্যাক্তিত্ব ছিলেন। যার কারণে তিনি গৃহযুদ্ধ চলাকালীন সময় বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও সফলতা অর্জন করেন।   

 

প্রথম এলিজাবেথ 

 

প্রথম এলিজাবেথ 

রানি প্রথম এলিজাবেথ ১৫৫৮ থেকে ১৬০৩ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের রানি ছিলেন। তিনি অস্থিরতার মধ্যে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও রাষ্ট্র শক্তিশালীকরণের কারণে তিনি আজো বিখ্যাত হয়ে আছেন। রানি এলিজাবেথ দূরদর্শী এবং সংস্কৃতিমনা ছিলেন। তার সময়ই শিল্প সাহিত্যের স্বর্ণ যুগ ছিল। শেক্সপিয়ার এবং স্পেন্সাররের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিরাও রানির কাছ থেকে পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছন। বিবিসির জরিপে পঞ্চম অবস্থানে উঠে আসে ব্রিটিশ রানি প্রথম এলিজাবেথের নাম। যিনি ৪ শতাংশ ভোট পেয়ে নারী নেত্রীদের মধ্যে প্রথম।

 

রানি ইসাবেলা

 

ক্যাস্টিলের রানি ইসাবেলা  

ইসাবেলা ১৪৭৪ সালে চরম প্রতিকূলতার মধ্যে ক্যাস্টিলের সিংহাসনে আরোহণ করেন। এমন কি তার স্বামী ফার্দিনান্দের কাছ থেকে নিজ প্রচেষ্টায় সামরিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হন তিনি। তাদের যৌথ প্রচেষ্টায় সম্রাজ্যে  আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। ইসাবেলার ইতিবাচক কাজের সঙ্গে কিছু সমালোচিত কার্যক্রমও রয়েছে। পুনর্গঠিত স্পেনে ইহুদীদের কোণঠাসা করে রাখা তাদের সমালোচিত কাজের মধ্যে অন্যতম। তবে ইসাবেলার প্রভাব বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমূল পরিবর্তন এনেছে। ঘরোয়া পরিবেশের বাইরেও তার স্বামীর সঙ্গে তার বোঝাপড়ার বিষয়টি বর্তমান সময়েও উদাহরণযোগ্য।

 

ওদা নবুনাগা

 

ওদা নবুনাগা

১৫৩৪ সালে জাপানে গৃহযুদ্ধ চলাকালীন সময় ওদা নবুনাগা জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে রাজা এবং পরবর্তীতে সামরিক স্বৈর শাসক দ্বারা শাসিত হয়ে জাপান বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। সমুরাই যোদ্ধারা নিজেদের মধ্যে ক্রমাগত যুদ্ধ করে চলেছিল। ওদা প্রায় ত্রিশ বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছেন। তিনি পরার্থবাদী, শান্তিবাদ কিংবা কূটনীতিক উপায় অবলম্বন করেন তিনি।  তিনি জাপানকে  ঐক্যবদ্ধ করতে সরাসরি শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে শাসন করার পথ বেছে নেন। 

ওদা নিজেকে উচ্চমার্গীয় কৌশলবাদী যোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করেন। স্থল পথে যুদ্ধের সঙ্গে নৌ-যুদ্ধেও পারদর্শিতা অর্জন করেন। সম্ভবত বিশ্বে তিনিই প্রথম শত্রুর বিরুদ্ধে আয়রন-ক্লাড জাহাজ প্রেরণ করেছিলেন। ১৫৪০ এর দশকে পর্তুগিজদের আনা আগ্নেয়াস্ত্রের সঙ্গে  তরবারির ব্যবহার করে এবং যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অজেয় বাহিনী গড়ে তোলেন। বর্তমানে জাপানি স্কুলের বাচ্চারাও ওদে সম্পর্কে পড়ে।  

 

বোয়াদিসিয়া


বোয়াদিসিয়া

বোয়াদিসিয়া খ্রিষ্টীয় প্রথম শতকে ইসিনির রানি ছিলেন। কেল্টিক গোত্রের রানি বোয়াদিসিয়া সাম্রাজ্যবাদী রোমানদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ সৈন্য বাহিনী নিয়ে সংগ্রামে লিপ্ত হন। কৌশলী রোমানদের কাছে শেষ পর্যন্ত পরাজিত হলেও তিনি বিশ্ব ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন।

 

তৃতীয় উইলিয়াম 

 

তৃতীয় উইলিয়াম 

তৃতীয় উইলিয়াম ১৬৮৯ থেকে ১৭০২ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড আয়ারল্যান্ডের রাজা ছিলেন। তিনি ইউরোপকে ফ্রান্সের প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত করেন। প্রতিকূল পরিস্থিতে উইলিয়াম ১৬৭২ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে নেদারল্যান্ডের গভর্নর এবং চীফ কমান্ডার নিযুক্ত হন। তিনি শুরু থেকেই প্রভাবশালী এবং ইঙ্গ-ফরাসিদের আক্রমণের শিকার হয়ে আসছিলেন। শত প্রতিকূলতা সাহস এবং অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে মোকাবিলা করে ১৬৮৯ সালে ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের সিংহাসন আরহণ করেন উইলিয়াম। নিজ যোগ্যতা বলে তিনি ইউরোপের একজন সফল শাসক হিসেবে আবির্ভূত হন।

 

হু জেতিয়ান

 

হু জেতিয়ান

৬৯০ থেকে ৭০৫ সাল পর্যন্ত চীনা সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী ছিলেন হু জেতিয়ান। চীনের ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী ছিলেন। জেতিয়ান একাধারে বিপরীতমুখী হিতৈষী এবং হিংস্র চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। জনগণের উপর তার ছিল সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ। সমালোচনা থাকলেও চীনা জনগণের তার প্রতি ইতিবাচক অনুভূতি রয়েছে।  

সূত্র: হিস্টোরিএক্সট্রা

আলোকিত রাঙামাটি

সর্বশেষ