রাঙামাটি । বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ , ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাঙামাটি (সদর) প্রতিনিধিঃ-

প্রকাশিত: ২২:০০, ৬ মে ২০২০

করোনা ভাইরাসঃ পরিবহন সংকটে রাঙামাটির মৌসুমী পণ্যে ব্যবসায় ধস

করোনা ভাইরাসঃ পরিবহন সংকটে রাঙামাটির মৌসুমী পণ্যে ব্যবসায় ধস

করোনা ভাইরাসের কারণে পরিবহন সংকট থাকায় রাঙামাটির মৌসুমী পণ্যে ব্যবসায় ধস নেমেছে। বুধবার (০৬ মে) সকালে রাঙামাটি সাপ্তাহিক হাট বাজারে শত শত বোট আনারস ও কাঠাল নিয়ে বিপাকে পড়েছে চাষীরা। বুধবার রাঙামাটির বনরূপা বাজার সমতা ঘাট এলাকায় ক্রেতারা মৌসুমী পণ্য ক্রয় না করায় বিক্রি করতে আসা চাষীদের মাথায় হাত পড়েছে।

বাজার এলাকায় আসা চাষীরা বলেন, বর্তমান করোনা যুদ্ধে রাঙামাটির কাচা পণ্যে ব্যবসায় ধস নামলেও আজ হঠাৎ করে ব্যবসায়ীরা মালামাল ক্রয় না করায় আমাদের মাঝে হতাশা নেমে এসেছে। এই অবস্থায় কাচা মাল গুলো বিক্রি করতে না পারলে বউ ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমরা বিপাকে পড়ে যাবো। তারা বলেন, এই মালামাল বিক্রি করে বাড়ীতে বাজার করে নিয়ে যেতে হবে। তা না হলে বাড়ীর সবায় উপোষ করতে হবে।

বাজারের কাঠাল নিয়ে আসা এক চাষী বলেন, নিজের বাগানের কাঠাল প্রতিবছর কয়েক লক্ষ টাকা বিক্রি করি। কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কাঠালের তেমন দাম পাওয়া না গেলেও গাছের বাত্তি কাঁঠাল গুলো বাজারে নিয়ে গিয়ে কিছুটা কম দামে হলেও বিক্রি করতে পেরেছি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে কোন পণ্য ক্রয় করছে না। তাই ভোর ৫ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত বসে আছি। কোন ক্রেতা কাঠাল ক্রয় করছে না। তিনি বলেন, ব্যবাসয়ীরা বলছে কাঠাল নিয়ে রাঙামাটির বাইরে যেতে পারছে না বলে তাই ক্রয় করছে না।

এদিকে এক ব্যবসায়ী মোঃ আব্দুল হামিদ জানান, গতকাল আমরা প্রায় ২ লক্ষ টাকার কাঁঠাল ক্রয় করেছি। কিন্তু গতকাল হঠাৎ করে রাঙামাটি প্রশাসন থেকে পণ্য পরিবহন চট্টগ্রামে বাইরে বন্ধ করে দেয়ায় আমি এই কাঠাল গুলো নিয়ে বিপাকে পড়েছি। তিনি বলেন, কাঠাল গুলো আর এক দিন যদি এই ভাবে বোটে থাকে তাহলে সব কাঁঠাল পেকে যাবে। তিনি প্রশাসনের কাছে কাঠাল গুলো চট্টগ্রামে বাইরে পরিবহনের অনুমতি প্রদান করতে জেলা প্রশাসনের কাছে জোর দাবী জানান।

এদিকে রাঙামাটি মৌসুমী পণ্য ব্যবসায়ী মোঃ সোহেল জানান, রাঙামাটির মৌসুমী পণ্য কাঠাল, আনারস ও কলা সহ বিভিন্ন পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদা গুলো রাঙামাটির পণ্য ব্যবসায়ীরা পুরণ করে। তারা রাঙামাটির বিভিন্ন বাজার থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে রাঙামাটির চাহিদা মিটিয়ে পুরো বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বিতরণ করে। প্রতিদিন রাঙামাটির বাজার থেকে ৬০ থেকে ৭০ ট্রাক মৌসুমী পণ্য রাঙামাটির বাইরে রপ্তানী করে। কিন্তু গতকাল রাঙামাটি জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন থেকে চট্টগ্রামের বাইরে মালামাল পবিরহন করতে নিষেধ করে দেয়ায় আমরা মালামাল ক্রয় করছি না। কারণ চট্টগ্রামে মাত্র আমরা ৫ থেকে ১০ গাড়ী মালামাল বিক্রি করতে পারবো। অন্য পন্য গুলো আমরা বিক্রি করতে না পারলে আমাদের আর্থিক ক্ষতি হবে। তাই আমরা নিজেদের ক্ষতি কাটাতে বাধ্য হচ্ছি।

এই দিকে মৌসুমী পণ্য ব্যবসায়ীর সভাপতি মোঃ রহিম বলেন, রাঙামাটির মানুষের কথা চিন্তা করে আমরা পণ্য ব্যবসা করছি। নিজেদের লাভ ক্ষতির কথা চিন্তা করেও আমরা দিনের পর দিন রাঙামাটিতে ব্যবসা করে আসছি। রাঙামাটি জেলায় প্রতিটি বাজারে থেকে আমরা ৫০/৬০ ট্রাক আনারস, কাঁঠাল, কলা সহ বিভিন্ন পণ্য সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানী করছি। কিন্তু গতকাল হঠাৎ করে প্রশাসন থেকে পণ্যে পরিবহনের বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা জারী করায় আমরা পণ্য ক্রয় করছি না। এই খবর পেয়ে প্রশাসন থেকে আমাদেরকে আজকে পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু কাল থেকে আমরা কি করবো না। যদি অনুমতি না পায় তাহলে আমরা মালামাল ক্রয় করবো না। ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য থাকবো।

এই বিষয়ে রাঙামাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সুফি উল্লাহ বলেন, দেশের করোনা আতংকের কারণে যানবাহন চলাচলে আমরা কিছুটা শিথিলতা নিয়ে এসেছি। চট্টগ্রামের বাইরে কোন যানবাহন আমরা অনুমতি দিচ্ছি না। তাই এই অবস্থায় তারা পণ্য নিয়ে চট্টগ্রামের বাইরে যেতে পারছে না। সকলের মঙ্গলের জন্য আমরা এই ব্যবস্থা নিয়েছি।

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়