রাঙামাটি । বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪ , ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৫:১১, ১২ মে ২০২০

করোনাযুদ্ধে জয়ী বাংলার কৃষক

করোনাযুদ্ধে জয়ী বাংলার কৃষক

মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রায় বিশ্বজুড়েই চলছে লকডাউন। ঘরবন্দি মানুষ। স্থবির হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও অর্থনীতির চাকা। প্রতিদিনই দেশে দেশে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। এর মধ্যেই শুরু হয় বোরো ধানের মৌসুম। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েন বাংলার কৃষক। বিশেষ করে হাওরাঞ্চলের সাত জেলায় একদিকে শ্রমিক সংকট, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে অকাল বন্যার শঙ্কা। দেশের ক্রান্তিকালে সময়মতো গোলায় ধান তোলা নিয়েই ছিল দুশ্চিন্তা। কিন্তু সব ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত হাওরসহ সারাদেশে বোরো ধান কাটা যেন উৎসবে পরিণত হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে সরকারের পুরো প্রশাসন এসে দাঁড়ায় কৃষকের পাশে। সেই সঙ্গে এক ধরনের উদ্দীপনা সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষও ঝাঁপিয়ে পড়েন বছরের সবচেয়ে বড় ফসল বোরো ধান ঘরে তুলতে। এবার সরকারের যান্ত্রিক সহযোগিতা হাওরসহ সারাদেশের ধান কাটায় যোগ করে এক নতুন মাত্রা। কম্বাইন্ড হার্ভেস্টর ও রিপার দিয়ে মহাধুমধামেই কৃষকরা এখন

ঘরে তুলছেন তাদের মাঠের সোনালি ফসল।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, দেশের মোট চাল উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশই আসে বোরো মৌসুম থেকে। চলতি মৌসুমে প্রায় ৪৫ লাখ হেক্টর জমিতে ২ কোটি ৪ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। এর মধ্যে ২০ ভাগের জোগান দেয় হাওরাঞ্চলের সাত জেলা নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া; প্রায় ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। তাই সময়মতো ধান কাটা না গেলে করোনাকালে যা হবে বিরাট বিপর্যয়ের কারণ। এর মধ্যে ভাইরাসটি মহামারীর আকার ধারণ করায় বিশ্বে খাদ্য সঙ্কট সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা। আর এ সঙ্কট এড়ানোর জন্য সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পাহাড়ি ঢল বা ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট অকাল বন্যার আগেই হাওরের ধান কেটে কৃষকের গোলায় তোলা। সে যুদ্ধে কৃষকদের জয়ী করতে অনেকটাই সফল কৃষি মন্ত্রণালয়।

জানা যায়, হাওরের ধান কাটার ব্যাপারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নানা পদক্ষেপ নেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক। এর মধ্যে ছিল বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকদের হাওরাঞ্চলে পাঠানো এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধান কাটায় উৎসাহ দেওয়া। সেই সঙ্গে করোনা ভাইরাসের প্রভাব এড়িয়ে দ্রুত ধান কাটার জন্য কৃষিযন্ত্র সরবরাহ করা। তাই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ১০০ কোটি টাকা ভর্তুকিসহ মোট ২০০ কোটি টাকা মূল্যের হারভেস্টার ও রিপারসহ কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হয় কৃষকদের মাঝে। প্রথম পর্যায়ে ১০০ কোটি টাকা জরুরি বরাদ্দ দিয়ে ৮০৩টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৪০০টি রিপার এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে একই টাকায় ৫১৯টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৫০৮টি রিপার দেওয়া হয়। এর মধ্যে হাওরাঞ্চলে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩৭০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৪৫৫টি রিপার।

বোরো ধান ঘরে তোলার বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের সারা বছরের মোট চাল উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি জোগান আসে এ মৌসুমে। হাওরের প্রায় শেষ এবং সারাদেশের ৪০ ভাগের মতো বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে এরই মধ্যে। শুধু সুষ্ঠুভাবে ধান কাটা নয়, কৃষকেরা যাতে এর ন্যায্যমূল্য পান সে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। করোনাকালে নিম্নআয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান, দেড় লাখ টন আতপ চাল, ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল এবং ৭৫ হাজার মেট্রিক টন গমসহ মোট ২০ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’ এ বিষয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এ কার্যক্রমকে সুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসারের তত্ত্বাবধানে সারাদেশে ধান বিক্রিকারী কৃষকের তালিকা তৈরি করে তা খাদ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলমান। কৃষকের ধান বিক্রিতে যাতে সুবিধা হয় এ জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে ২ হাজার ২৩২টি আর্দ্রতামাপক যন্ত্রও সরবরাহ করা হয়েছে।’ হুশিয়ারি উচ্চারণ করে মন্ত্রী বলেন, ‘কৃষকের কষ্টার্জিত ধান নিয়ে যদি কেউ কোনোরকমের অনিয়ম করে, তবে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। খাদ্য সংকট বা দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাও করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে বারবার কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দিচ্ছেন। কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আশাবাদী করোনাযুদ্ধে বাংলার কৃষক জয়ী হবেই হবে।’

সূত্রঃ dainikamadershomoy.com

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়