রাঙামাটি । বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ , ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৬:১২, ৩০ মে ২০২০

কাঁচামাল সংকটে একসপ্তাহ ধরে কেপিএমের উৎপাদন বন্ধ

কাঁচামাল সংকটে একসপ্তাহ ধরে কেপিএমের উৎপাদন বন্ধ

কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধিঃ- কাঁচামাল সংকটসহ সরকারি অর্ডার না থাকায় গত একসপ্তাহ ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড (কেপিএম)। মিল বন্ধ থাকায় আবাসিক এলাকায় বিদ্যুৎ ও পানি সংকট চরমে পৌঁছেছে। 

এছাড়া গত ২৩ মে' মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এর পক্ষে কেপিএমের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোঃ মাজহারুল ইসলাম সাক্ষরিত এক দপ্তর আদেশের মাধ্যমে জানানো হয়, পরবর্তী নিদের্শ না দেওয়া পর্যন্ত গত ২৪ মে' থেকে মিলে কর্মরত কোম্পানি মাষ্টার রোল, অস্থায়ী শ্রমিক-কর্মচারী ও পে- অফ শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। চাকরি না থাকার ফলে দৈনিক মজুরি ভিত্তিক এ সমস্ত শ্রমিকরা বর্তমানে মানবেতর দিনযাপন করছে বলে কয়েকজন অস্থায়ী শ্রমিক জানান ।

এদিকে, কেপিএম আবাসিক এলাকায় বসবাসরত স্থায়ী শ্রমিক কর্মচারীরা অভিযোগ করে বলেন, মিলে উৎপাদন বন্ধ বা চালু রাখার বিষয়টি সম্পূর্ণ কর্তৃপক্ষের এখতিয়ার। কিন্ত মিলের উৎপাদন বন্ধের অজুহাতে কর্তৃপক্ষ আবাসিক এলাকায় বসবাসরত শ্রমিক-কর্মচারীদের বিদ্যৎ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে।

তারা আরো জানান, সারাদিন বন্ধ রাখার পর রাতে কয়েকঘন্টা বিদ্যুৎ দিলেও গত ২ দিন ধরে রাতে এবং দিনে কোন বিদ্যুৎ দেয়নি। এছাড়া সারাদিনে একবার পানি সরবরাহ করা হলেও সরাসরি নদীর ঘোলা পানি দেওয়া হচ্ছে। ময়লা-কাদাযুক্ত  বিশুদ্ধ না করে সাপ্লাই দেওয়া পানি ব্যবহারের অযোগ্য। ফলে করোনা ভাইরাস মোকাবেলা করতে তারা নোংরা এসব পানি ব্যবহার করতে পারছে না। যারা বাধ্য হয়ে এসব পানি ব্যবহার করছে তারা অন্য জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকায় রয়েছে বলে তারা জানায়।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কেপিএম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ) এর সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু জানান, কাঁচামাল সংকট এবং কাগজ বিক্রয় সংকটের ফলে কেপিএমের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তারা আরো জানান, কেপিএম আবাসিক এলাকায় এখন তীব্র বিশুদ্ধ পানীয় জল এবং বিদ্যুৎ সংকটে রয়েছে।

শনিবার কেপিএমের ব্যবস্থাপক (উৎপাদন) গোলাম সরোয়ারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বর্তমানে কিছু কাঁচামাল সংকট আছে। তাছাড়া কেপিএম হতে কাগজ সরবরাহকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল কারিকুলাম ফর টেক্সট বোর্ড( এনসিটিবি) কাগজ না কেনায় গত ২৪ মে' থেকে কেপিএমে  উৎপাদন হচ্ছে না। কেপিএম হতে এনসিটিবি ১ হাজার মেট্রিকটন কাগজ কেনার কথা ছিল। প্রতিষ্ঠানটি কাগজ কিনলে এ সংকট থাকবে না বলে তিনি জানান।

কেপিএম ম্যানেজমেন্ট সুত্রে জানা যায়, এই মিলটি বর্তমানে আমদানিকৃত পাল্প রিসাইকেল পেপার হতে কাগজ উৎপাদন করে আসছে। চলতি অর্থবছরের ৯ মে পর্যন্ত বিসিআইসির এই প্রতিষ্ঠানটি সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৭৮৫ মেট্রিকটন কাগজ উৎপাদন করেছে। তবে সরকারি কাগজ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান এনসিটিবি যদি কেপিএম হতে কাগজ কিনে নেয় তাহলে এই সংকট আর থাকবে বলে তারা জানান।

বিসিআইসির এই প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ হাজার মেট্রিকটন হলেও বর্তমানে বার্ষিক ৫ থেকে ৬ হাজার মেট্রিকটন কাগজ উৎপাদনের ফলে এটি একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে বলে শ্রমিকরা জানান।

মিলে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিক কর্মকর্তারা জানান, যদি দৈনিক ৪৫ থেকে ৫০ মেট্রিকটন কাগজ উৎপাদন করা হয় তাহলে এই মিলের আর লোকসান গুনতে হবে না। তারা আরো জানান, বর্তমানে যে যন্ত্রপাতি আছে তা দিয়ে দৈনিক ৭০ থেকে ৮০ মেট্রিকটন কাগজ উৎপাদন করা যাবে। তবে অনেক ক্ষেত্রে নিন্মমানের কাগজ উৎপাদন এবং সরবরাহের কারণে এনসিটিবিসহ সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান এ মিল হতে কাগজ কিনতে আগ্রহ হারাচ্ছে বলে তারা জানান।

এবিষয়ে সিবিএ নেতৃবৃন্দের মতামত জানতে চাইলে তারা বিষয়গুলোর সত্যতা স্বীকার করেন।

আলোকিত রাঙামাটি

সম্পর্কিত বিষয়: