রাঙামাটি । বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ , ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ৫ মার্চ ২০২১

কাপ্তাইয়ে হার না মানা কৃষক বাচ্চুর সফলতার গল্প

কাপ্তাইয়ে হার না মানা কৃষক বাচ্চুর সফলতার গল্প
ছবি:- আলোকিত রাঙ্গামাটি 

মোঃ নজরুল ইসলাম লাভলু (কাপ্তাই) প্রতিনিধিঃ- কাপ্তাই উপজেলাধীন শীলছড়ি এলাকায় বসবাসরত হার না মানা কৃষক বাচ্চু কৃষিতে অবাক করা সফলতা পেয়েছেন। নিজ জমিতে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে আগামি দু'মাসে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করতে সক্ষম হবে। লিচু ও পেঁপে বিক্রয় করে এই অর্থ আয় হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন কৃষক বাচ্চু।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাঙামাটি পার্বত্য জেলাধীন কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের শীলছড়িতে বসবাসরত মোঃ আব্দুল রাজ্জাকের ছেলে কৃষক মোঃ এনামুল হক বাচ্চু (৪৪)। বাচ্চু দীর্ঘদিন যাবৎ বেকার জীবন যাপন করে হতাশায় ভুগছিলেন। কি করে অভাবের সংসারে সফলতা আনা যায় তা নিয়েই তার ভাবনা। বহু কষ্টে অভাব-অনটনের মধ্যে দিনযাপন করতে থাকেন। অবশেষে দীর্ঘ ৭ বছর পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতায় সামাজিক বনায়ন ও পশু খাদ্য বাগানের কাজ পায় বেকার বাচ্চু। নিজ উদ্যোগে সামাজিক বনায়নের পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর কুলঘেঁষে সীতার পাহাড়ে বন বিভাগের প্রায় সাড়ে ৩ একর পরিত্যাক্ত জায়গায় পশু খাদ্য বাগানসহ বেকার ওই কৃষক তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে খোলা জায়গায় হরেক রকম ফসল উৎপাদন শুরু করেন। বিশেষ করে লিচু, পেঁপে, মাল্টা, কমলা, লেবু, আমড়া, বড়ই, তেঁতুল, আমলকি, লাউ, কলা, তেজপাতাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ শুরু করেন। পাশাপাশি পাহাড়ের ঝরনাার পানির সাহায্যে মাছ চাষের ব্যবস্থা করেন। এছাড়া ১শ' ১১ প্রজাতির ওষুধি গাছের চারাও উৎপাদন করেন এই কৃষক। 

এদিকে, এনামুল হক বাচ্চু জানান, বহুদিন ধরে তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে বেকার ও হতাশায় ভুগছিলেন। কি করবেন তা ভেবে পাচ্ছিলেন না।এমতাবস্থায় বন বিভাগের সহযোগীতায় সামাজিক পশুখাদ্য বাগানের পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে, ব্যাংক এবং এনজিও হতে প্রায় ৪০ লাখ টাকা লোন নিয়ে বিভিন্ন ফলের, ওষুধি গাছের চারা রোপনের কাজ শুরু করেন। এযাবৎ বিভিন্ন সবজি ফসল ও নার্শারীতে উৎপাদিত বিভিন্ন ফলজ,বনজচারা বিক্রি করে প্রায় এক লাখ টাকা আয় করেন তিনি। তিনি জানান, তার স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ৪ জন মিলে ফসলের পরিচর্যার পাশাপাশি আরো ৩-৪ জন দৈনিক ভিত্তিক লোক নিয়োজিত করেন। প্রতিদিন এদের মাথাপিছু ৫ শ' টাকা করে এবং অপর ১ জনকে মাসে আট হাজার টাকা করে বেতন বা পারিশ্রমিক দিতে হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরো জানান, সরকারি ভাবে এপর্যন্ত তিনি কোন সাহায্য সহযোগিতা বা প্রনোদনা পাননি। তবে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে সম্প্রতি ১শ' ৬০ কেজি সার, ১টি স্প্রে মেশিন ও ২টি কাটার মেশিন ছাড়া আর কিছুই পাননি বলে জানান। আগামী দু'মাসের মধ্যে তার লাগানো বিভিন্ন ফসল অর্থাৎ বিভিন্ন প্রজাতির লিচু ও পেঁপে হতে ৮ -১০ লাখ টাকার ফসল বিক্রি করে স্বাবলম্বী হতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করে কৃষক বাচ্চু। তিনি জানান, সরকারি কোন প্রনোদনা বা সহযোগিতা পেলে আরো ভালো কিছু করতে পারবেন। তিনি বলেন, তার উৎপাদিত এসব ফসল দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক ও কৃষক এধরনের কৃষি কাজে উৎসাহিত হচ্ছে।তারা ইতিমধ্যে এমন ফসলের চাষ শুরু করে দিয়েছে। কৃষক বাচ্চু জানান, বর্তমান শুস্ক মৌসুমে তাকে সরকারি ভাবে একটি পাম্প মেশিন এবং গাছে ওষুধ ছিটানোর জন্য উন্নত মানের একটি স্প্রে মেশিন প্রদান করলে তার কাজ আরো এগিয়ে যাবে। 

এদিকে, এলাকার সমাজ কর্মী মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, কৃষক বাচ্চু সত্যিকারের একজন সফল কৃষক। বহু কষ্ট করে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তার কৃষি কাজ দেখে এলাকার আরো বহু যুবক ও লোকজন কৃষি কাজে এগিয়ে আসছে। সরকারি ভাবে এই কৃষককে সহযোগীতা করা হলে সামনে আরো ভালো কিছু করতে পারবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।  

আলোকিত রাঙামাটি