রাঙামাটি । শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রেকিং

পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব : কাপ্তাইয়ে প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাপার্বত্যাঞ্চলের পরিস্থিতি অবনতি ঘটলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে : বীর বাহাদুর ঊশৈসিং এমপিসাজেকে নিহত ৯ জনের ময়নাতদন্ত শেষে হস্তান্তর, আহত ২ শ্রমিককে ঢাকায় প্রেরণকাপ্তাই হ্রদে ৩ মাসের জন্য মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শুরুকেএনএফ প্রধান নাথান বমের স্ত্রী ‘নিখোঁজ’সাজেকে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯, পরিচয় মিলেছে ২ জনের!তীব্র তাপদাহ: জনগণকে সচেতন করতে প্রচারণায় নেমেছে রাঙামাটি স্বাস্থ্য বিভাগকাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫ ইউনিটের ৪টিই বন্ধ, উৎপাদন কমে ৩০ মেগাওয়াট

নজরুল ইসলাম লাভলু (কাপ্তাই) প্রতিনিধি:-

প্রকাশিত: ১৩:৫২, ১৪ এপ্রিল ২০২১

কাপ্তাইয়ের চিৎমরমে কোলাহল মুক্ত অন্যরকম সাংগ্রাই উৎসব

কাপ্তাইয়ের চিৎমরমে কোলাহল মুক্ত অন্যরকম সাংগ্রাই উৎসব
ছবি:- আলোকিত রাঙ্গামাটি 

নজরুল ইসলাম লাভলু (কাপ্তাই) প্রতিনিধি:-  কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরমে রয়েছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার। প্রতিবছর বাংলা নববর্ষ এলে এখানে বসতো ৩-৪ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। হতো মারমা সম্প্রদায়ের বৃহত্তম সামাজিক উৎসব “সাংগ্রাই জলকেলী উৎসব”। উৎসবকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার দায়ক-দায়িকাসহ নানা ধর্মের মানুষের মিলন মেলা বসতো চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার মাঠে। থাকতো ঐতিহ্যবাহী মারমা সম্প্রদায়ের নাচ,গান, খেলাধূলা এবং নানা আয়োজন। মহামারি করোনার কারনে সাংগ্রাই এবছর যেন চিৎমরমবাসীর কাছে এসেছে অন্যরুপে। বিগত বছরও করোনার কারনে এই উৎসব বাতিল করতে হয়েছে আয়োজক কমিটিকে। তাদের আশা ছিলো এবছর ধুমধামে পালন করবে বর্ষ বিদায় ও বর্ষ বরণের এই উৎসব। কিন্ত করোনা সংক্রমনের উর্ধ্বমুখীর কারনে এবারও ঘরোয়া ভাবে পালিত হচ্ছে সাংগ্রাই জল উৎসব। 

বুধবার (১৪ এপ্রিল) সকালে চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা, নেই কোন দোকান, নেই কোন মানুষের সমাগম। অথচ প্রতিবছর ১৩ এপ্রিল হতে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত এই মাঠে বসতো বৈশাখী মেলা। হরেক রকম পণ্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা দূর দূরান্ত হতে আসতো এই মেলায় বেচাকেনা করতে। তবে চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারে স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন সকাল থেকে বুদ্ধ মূর্তিকে স্নান করানো, বুদ্ধ পুজা, পূজনীয় ভিক্ষু সংঘকে পিন্ডদানসহ নানা ধর্মীয় আচার আচরণ পালন করে আসছেন। 

আলাপ কালে সাংগ্রাই জলকেলী উদযাপন কমিটি ২০২১ এর আহবায়ক ক্যাপ্রু চৌধুরীর জানান, সকল প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছিল এবছর ধুমধামে পালন করা হবে এই উৎসব। কিন্ত সরকারি নির্দেশনাকে সম্মান জানিয়ে তারা সকল আনুষ্ঠানিকতা বাতিল করেছেন।

মারমা সংস্কৃতি সংস্থার (মাসস) কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক চিৎমরমের বাসিন্দা মংসুইপ্রু মারমা জানান, সাংগ্রাই মানে উৎসব, সাংগ্রাই মানে সকল সম্প্রদায়ের মিলন মেলা। কিন্ত করোনার কারনে তারা আজ ঘরে বসে পরিবার পরিজন নিয়ে এবং কিয়াংয়ে গিয়ে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করে এবছর সাংগ্রাই পালন করছেন।

চিৎমরমের বাসিন্দা বেতার শিল্পী রফিক আশেকী জানান, সাংগ্রাই মূলত মারমা সম্প্রদায়ের উৎসব হলেও সকল সম্প্রদায়ের লোকজন এই উৎসবে অংশ নিতেন।মারমা জনগোষ্ঠী বর্ষবরণের এই উৎসব কে পালন করেন সাংগ্রাই নামে। এ উৎসব চলে ৩ দিন ধরে। মারমাগণ সবাই বুদ্ধের ছবি সহকারে নদীর তীরে যান এবং দুধ কিংবা চন্দন কাঠের জল দিয়ে এ ছবিটিকে স্নান করান। তারপর আবার এই ছবিটিকে আগের জায়গায় অর্থাৎ মন্দির বা ঘর বাড়িতে ফিরিয়ে এনে যথাস্থামে লাগানো হয়। মারমা সম্প্রদায় সেই আদিকাল থেকে অন্যান্য সম্প্রদায় থেকে ভিন্ন আঙ্গিকে পুরনো বছরের বিদায় এবং নতুন বছরের আগমনকে স্বাগত জানাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করে আসছে। যা মারমা ভাষায় সাংগ্রাই নামে পরিচিত। মূলত 'সাক্রাই' (সাল) শব্দ থেকেই 'সাংগ্রাই' শব্দ এসেছে বলে ধারণা করা হয়। যা বাংলায় 'সংক্রান্তি' বলে পরিচিত। মারমা সম্প্রদায়ের 'সাংগ্রাই জ্যা'র (মারমা বর্ষপঞ্জি) গঠনের মাধ্যমে সাংগ্রাইয়ের দিন ঠিক করা হয়ে থাকে। মাইংমা ১৩৫৯ খ্রিষ্টাব্দের আগে থেকেই এ 'সাক্রাই' বা সাল গণনা করা হয়, যা 'জ্যা সাক্রই' নামে পরিচিত।

সাংগ্রাইয়ের উৎপত্তি নিয়ে মারমা ভাষায় বিভিন্ন কল্পকাহিনী বিদ্যমান রয়েছে, যা এখনো মারমা বয়োজ্যেষ্ঠদের মুখে মুখে প্রচলিত। কবে থেকে মারমাদের সাংগ্রাই উদযাপন শুরু হয় এব্যাপারে সঠিক কোনো ইতিহাস এখনো পাওয়া যায়নি। সাংগ্রাই উৎসবটি মারমারা তিন দিনব্যাপী উদ্যাপন করে। সাংগ্রাইয়ের প্রথম দিন (১৩ এপ্রিল) মারমা ভাষায় 'সাংগ্রাই আক্যা' বা ‘পাইং দোয়াক’(সাংগ্রাইয়ের প্রথম দিন পুষ্প আহরণ), এই দিন ঘরে ঘরে পুষ্প দিয়ে সাজানো হয়, অনেক বয়স্করা উপবাস থাকেন,কিয়াংয়ে রাত্রিযাপন করেন । দ্বিতীয় দিন মূল সাংগ্রাই বা 'সাংগ্রাই বাক' (সাংগ্রাইয়ের দিন) এদিন বিহারে গিয়ে বুদ্ধ পুজা, বুদ্ধ মূর্তিকে ম্নান করানো এবং বয়স্কদের স্নান করানো হয়, উৎসব এর তৃতীয় দিন (১৫ এপ্রিল) ‘সাংগ্রাই আপ্যাইং’ (সাংগ্রাই বিদায়) নামে পরিচিত। এই তিন দিন মারমারা নানা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করে। করোনা মুক্ত হয়ে আবারোও সাংগ্রাই আসুক আনন্দের বারতা নিয়ে এটাই সকলের প্রত্যাশা।

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়