রাঙামাটি । বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ , ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৬:২৫, ২ ডিসেম্বর ২০১৯

কে এই ‘ডাক্তার ভাই’, যাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এত তোলপাড়

কে এই ‘ডাক্তার ভাই’, যাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এত তোলপাড়

ছবিঃ সংগৃহীত


তাকে সবাই চেনেন। ডাকেন ‘ডাক্তার ভাই’ নামে। কিন্তু একজন ভিনদেশি। টাঙ্গাইলের মধুপুরের কাইলাকুড়ি গ্রামে গড়ে তোলেন একটি হাসপাতাল। এই হাসপাতালের নাম দিলেন ‘কাইলাকুড়ি হেলথ কেয়ার সেন্টার’। যা এখন জামালপুর, ময়মনসিংহ জেলার দরিদ্র মানুষদের জন্য এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র এক আশির্বাদ। 

জন্ম, শৈশব ও লেখাপড়া:    

তার পুরো নাম এড্রিক সার্জিসন বেকার। ১৯৪১ সালে নিউজিল্যান্ডের রাজধানী ওয়েলিন্টনে জম্ম। এই শহরেই প্রাথমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক লেখাপড়া শেষ করে ১৯৬০ সালে তিনি ডুনেডিন শহরের ওটাগো মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে চিকিৎসা শাস্ত্রে স্নাতক শেষ করেন। 

এরপরে ১৯৭০ সালে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের জন্য অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে যান। সিডনিতে ট্রপিকাল মেডিসিনে ডিপ্লোমা শেষ করেন। ফিরে আসেন মাতৃভূমিতে। ১৯৭১ সালে অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধাত্রীবিদ্যার উপর ডিপ্লোমা পাস করেন। ১৯৭৭ সালে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিশু বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রী লাভ করেন।

বেকার বাংলাদেশে আসেন ১৯৭৯ সালে। তিনি প্রথমে মেহেরপুর মিশন হাসপাতাল ও পরে টাঙ্গাইলের কুমুদিনী হাসপাতালে কাজ করেন। তবে শহুরে হাসপাতালের চেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করার ঝোঁক ছিল তার বেশি। সেই ঝোঁক থেকেই মধুপুরের কাইলাকুড়ি গ্রামে গড়ে তোলেন একটি হাসপাতাল। এই হাসপাতালের নাম দিলেন ‘কাইলাকুড়ি হেলথ কেয়ার সেন্টার’। এরপর টানা ৩৬ বছর ধরে তিনি দরিদ্র মানুষের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিলেন। ২০১৫ সালের ১ সেপ্টম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। কাইলাকুড়ি হেলথ কেয়ার সেন্টারের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

যেভাবে বাংলাদেশে আসেন

ছোটোবেলায় হাত কেটে যায় বেকারের। এরপর আঙ্গুলে ব্যাথা হয়। এ ঘটনার পর থেকে মায়ের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পান। ডাক্তার হওয়ার বাসনা তাকে পেয়ে বসে। এমবিবিএস পাসের পর সরকারের শল্য চিকিৎসক দলের সদস্য হিসেবে যুদ্ধবিধ্বস্ত ভিয়েতনামে যান। সেখানে কাজ করার সময়ই পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারেন। যুদ্ধকালীন ও তার পরবর্তী এখানকার মানুষের দুর্ভোগের চিত্র দেখে তিনি ঠিক করেন সম্ভব হলে বাংলাদেশে আসবেন।

১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে আসেন। মেহেরপুর জেলার বল্লভপুর মিশন হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮১ সালে টাঙ্গাইল চলে আসেন এবং শিশু বিষয়ক মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কুমুদিনী হাসপাতালে জয়েন করেন। সেখানে মন টিকাতে না পেরে চলে আসেন টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায়। মধুপুরের থানার বাইদের চার্চ অফ বাংলাদেশ হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার ইনচার্জ হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই দায়িত্ব ২০০৪ সাল পর্যন্ত পালন করেন।

‘গরীবদের চিকিৎসা, গরীবরাই তা করবে’ এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ব্যতিক্রমী চিকিৎসাকেন্দ্র ‘কাইলাকুড়ি হেলথ কেয়ার সেন্টার’। ২০০ শতক জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০০ রোগী ফ্রি চিকিৎসাসেবা পেয়ে থাকে। ছোট ছোট মাটির ঘরে ডায়াবেটিস বিভাগ, যক্ষ্মা বিভাগ, মা ও শিশু বিভাগ, প্রশিক্ষণ কক্ষ, মাতৃসদনসহ নানা বিভাগ রয়েছে। সব বিভাগ মিলিয়ে ৪০ জন রোগী ভর্তি করানোর ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। সাভারের গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজ থেকে দুইজন ইন্টার্ন ডাক্তার সেখানে নিয়মিত সেবা দিয়ে থাকেন।

আসুন এবার এড্রিক বেকারের অর্জন সমূহ জেনে নেই

এড্রিক বেকারের সবচেয়ে বড় অর্জন মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসা। বাংলাদেশের খ্যাতিমান নির্মাতা এবং উপস্থাপক হানিফ সংকেত ২০১১ সালের ৩০ ডিসেম্বর এড্রিক বেকারের ওপর একটি প্রতিবেদন তুলে ধরেন বিনোদন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে। প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানুষের সেবা দেয়ার অবদান স্বরপ বাংলাদেশ সরকার জনাব বেকারকে ২০১৪ সালের পাঁচ আগস্ট নাগরিকত্ব দেয়।

১৯৯৯ সালে নিজদেশে তিনি ‘Officer of the New Zealand Order of Merit’ পুরষ্কারে ভূষিত হন। বেকার মারা যাওয়ার পর তার আদর্শ বুকে ধারন করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ‘কাইলাকুড়ি হেলথ কেয়ার সেন্টারে’ কর্মরত ১০০ স্টাফ।

আলোকিত রাঙামাটি