রাঙামাটি । বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ , ১৩ চৈত্র ১৪৩০

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১১:০৫, ১২ মে ২০২০

ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের কাজ চালু হচ্ছে, গতি পাবে গ্রামীণ অর্থনীতি

ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের কাজ চালু হচ্ছে, গতি পাবে গ্রামীণ অর্থনীতি

দেশের ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ সীমিত আকারে শুরু হচ্ছে। গত শনিবার দেশের ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) এ–সংক্রান্ত এক নির্দেশ দিয়েছে। গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরকার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সহযোগী সংগঠনগুলোকে কাজ শুরুর অনুমতি দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গ্রাহকের সঞ্চয় ফেরত দেওয়া ও বোরো মৌসুমে মানুষের প্রয়োজনীয় ঋণের চাহিদা মেটাতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে এমআরএ ও পিকেএসএফ সূত্র জানিয়েছে।

দেশে এখন বোরো ধান কাটার মৌসুম চলছে। এ কাজে অর্থ দরকার। এর ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া অশস্য কৃষি উদ্যোক্তারাও (যেমন মৎস্য, পোলট্রি, পশুসম্পদ) অর্থের জন্য বিনিয়োগ করতে পারছেন না নতুন করে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণ তহবিল গঠন করেছে। কিন্তু সেই তহবিল বিতরণের তৎপরতা নেই।

এগুলো চালু রাখতে এসব প্রতিষ্ঠানের কাজ চালু করা যথেষ্ট দরকার ছিল বলে মনে করেন ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদেরা। অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালু করে একটা কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

করোনার কারণে টানা অবরোধে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজও প্রায় বন্ধ। সবচেয়ে মুশকিলে পড়েন লাখো ঋণগ্রহীতা, যাঁদের বিপুল পরিমাণ সঞ্চয় আছে। ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলোর সূত্র জানায়, দেশে এসব গ্রহীতার সঞ্চয়ের পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা।

এমআরএর নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান অমলেন্দু মুখার্জি আজ প্রথম আলোকে বলেন, বোরো মৌসুমে ওঠা ফসলের খরচ মেটানোর জন্য বিশেষ করে গ্রামের মানুষের অর্থের দরকার। এ জন্য মানুষকে ঋণ দেওয়া এবং গ্রাহক সঞ্চয় ফেরত দেওয়া—এই দুই কারণেই সীমিত আকারে কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ক্ষুদ্রঋণের কাজ চালু করতে দেওয়া নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাত দফা শর্ত দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রথমেই করোনা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নিয়ম মেনে দূরত্ব বজায় রাখা, উঠান বৈঠক না করা, নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে অফিসে না থাকা, অফিস ও অফিসের সবাইকে জীবাণুমুক্ত রাখা, লকডাউন ঘোষিত এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে কাজ করা এবং সরকারি যেকোনো নির্দেশ মেনে চলতে বলা হয়েছে।

পিকেএসএফ দেশের বেসরকারি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থায়ন করে। রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু করার নির্দেশ দিতে দেশের সব জেলা প্রশাসককে বলা হয়েছে। কার্যালয়ের নির্বাহী সেলের পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এ চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। সেখানে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাঠপর্যায়ে পিকেএসএফের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ শুরুর অনুমতি দিতে বলা হয়।

পিকেএসএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জসীম উদ্দিন বলেন, 'ক্ষুদ্রঋণের কার্যক্রমকে চালু করার জন্য বড় ধরনের চাহিদা ছিল। এটি পূরণ হলো।'

ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, দেশের ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বছরে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। যেকোনো সময় মাঠপর্যায়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে ৯০ হাজার কোটি টাকা থাকে।

অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে ক্ষুদ্রঋণের বিপুল প্রভাবের কথা বলা হয়। বিশেষ করে গ্রামীণ অকৃষি খাতে এ ঋণের গুরুত্ব ব্যাপক। শুধু অকৃষি খাতে নয়, কৃষি খাতেও এর ভূমিকা যথেষ্ট। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ খাতে সঞ্চয়কারীদের সঞ্চয় ফেরত দেওয়াটা খুব তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, গ্রাহকেরা কিছুটা হলেও আর্থিক খাতে স্বস্তি পাবেন। কিন্তু এখানে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, যাঁরা দেবেন, তাঁদের অর্থায়ন করতে হবে। কারণ, এখন কিস্তি তোলা বন্ধ মানে এসব প্রতিষ্ঠান পুঁজির সংকটে পড়বে। এ জন্য বড় অর্থায়ন দরকার।

বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) বা ক্ষুদ্রঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য গত এপ্রিলে ৩ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এ তহবিল থেকে এনজিওগুলো সাড়ে ৩ শতাংশ সুদে অর্থায়ন নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে বিতরণ করতে পারবে বলে জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ তহবিল নিয়ে হোসেন জিল্লুরের বক্তব্য, ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এ অর্থ ঠিক আছে। কিন্তু বড় বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য আরও বেশি অর্থায়ন করতে হবে।

হোসেন জিল্লুর যে চ্যালেঞ্জের কথা বললেন, মো. জসীম উদ্দিনও এ ব্যাপারে একমত। এ মুহূর্তে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলে মনে করেন জসীম উদ্দিন। তিনি বলেন, 'একটি হলো যে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা মাঠে আছে, সেটি ধীরে ধীরে তুলতে হবে। আবার যে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা গ্রহীতার সঞ্চয় আছে, তা তারা ফেরত চাইবে। এখানে বাড়তি পুঁজির প্রয়োজন হবে। এ ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করছি।'

গাইবান্ধাভিত্তিক বেসরকারি সংগঠন এসকেএস ফাউন্ডেশন ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কাজ করে। দেশের ২০টি জেলায় সংগঠনটির কাজ আছে। গ্রহীতাদের সঞ্চয়ের অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে এসকেএসের নির্বাহী প্রধান রাসেল আহমেদ বলেন, 'এমআরএর নির্দেশনা অনুযায়ী, সঞ্চয়ের নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ এফডিআর করে রাখতে হয়। সব এনজিওকেই রাখতে হয়। এই টাকাটাই ভেঙে সঞ্চয় ফেরত চাইলে দিয়ে দেওয়া হবে। মানুষ এ দুর্যোগে সঞ্চয় ফেরত চাইবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা সেটা দেব,অন্তত আমাদের প্রতিষ্ঠান দেবে।'

টানা অবরোধে অনেক ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারী তাঁদের পুঁজি নষ্ট করে ফেলেছেন। তাই তাঁদের বাড়তি পুঁজি লাগবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করতে এটা দরকার বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। আবার ক্ষুদ্রঋণ দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঠে থাকা টাকা তুলে আনতেও অর্থ দরকার। এ জন্য সরকারের ঘোষণা করা ৩ হাজার কোটি টাকা বড় ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন রাসেল আহমেদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এ টাকা যত দ্রুত ছাড় দিতে পারে, তত ভালো। দেরি হলে এনজিওগুলোর কর্মকাণ্ডও পিছিয়ে যাবে।

সূত্রঃ প্রথম আলো

আলোকিত রাঙামাটি

সর্বশেষ