রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ , ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:২৮, ৩০ আগস্ট ২০২০

খাগড়াছড়িতে নতুন ঝর্ণার সন্ধান

খাগড়াছড়িতে নতুন ঝর্ণার সন্ধান

‘তুয়ারি মাইরাং’ ঝর্ণা দেখে মুগ্ধ পর্যটকরা


নদী,পাহাড়, উপত্যকা,আর ঝর্ণা নিয়ে পাহাড়ি জনপদ খাগড়াছড়ি। এই অঞ্চলগুলো পর্যটকদের কাছে বরাবরই দারুণ আকর্ষণীয়। পাহাড়ের পর পাহাড় সাজানো এই চিরসবুজ অরণ্য দেশের যেকোনো অঞ্চল থেকে এই জনপদকে আলাদা করেছে।

এর ভূ-প্রাকৃতিক গঠন স্বাতন্ত্র্য এলাকা হিসেবে মর্যাদা দিয়েছে। চির রহস্যভূমির এই জনপদ যেমন পর্যটকদের কাছে আর্কষণীয়, তেমনি এটি স্থানীয়দের কাছে ‘ভূস্বর্গ’।

খাগড়াছড়িতে দিন দিন বাড়ছে পর্যটকদের আগমন। এরই মধ্যে জেলার দীঘিনালা সীমান্তে সন্ধান মিলেছে প্রায় এক শ’ ফুট উঁচু ‘তুয়ারি মাইরাং’ ঝর্ণা।

অ্যাডভেঞ্চারদের স্বাদ নিতে নিতে নতুন সন্ধান পাওয়া ঝর্ণা দেখতে স্থানীয় পর্যটক ছাড়াও বাইরে থেকে আসছেন অনেকে। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও গাইড সুবিধা দিচ্ছেন স্থানীয়রা।

লোকালয় থেকে হেঁটে ঝর্ণায় পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র এক ঘণ্টা। উঁচু নিচু পাহাড়ে এখন চোখ ধাঁধানো সবুজ জুম। জুমের ল্যান্ডস্কেপ জুড়ে সবুজ মখমল। কাছে দূরে ছোট ছোট জুমঘর। বন্যপ্রাণী থেকে জুমের ফসল বাঁচাতে জুমিয়া জুমঘর বানায়। আগে জুমিয়ারা ফলনের মৌসুমে জুমের ফসল পাহারায় জুমঘরে রাতযাপন করতেন।


 

জেলার দীঘিনালা সীমান্তে সন্ধান মিলেছে প্রায় এক শ’ ফুট উঁচু ‘তুয়ারি মাইরাং’ ঝর্ণা


বর্তমানে বন্য প্রাণির উৎপাত কম হওয়ায় অনেক জুমিয়া রাতে থাকে না। জুমের পাহাড় জুড়ে এখন সবুজ ধান, ভুট্টা, মারফা, হলুদসহ বিভিন্ন ফসলের বাহার। ঝর্ণায় যেতে জুমের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হবে যেকেউ। পাহাড় থেকে নামতে হয় প্রাকৃতিক লতা বেয়ে। কয়েকটি পাথুরে জায়গা পারাপারে একমাত্র ভরসা সেই লতা।

তবে এসব জায়গা মোটা দড়ি ব্যবহার করা ঝুঁকিমুক্ত। পাহাড় থেকে লতা বেয়ে নেমে হাঁটতে হয় পাহাড়ি ঝিরিতে। ঝিরির দুই পাশে উঁচু উঁচু টারশিয়ান যুগের পাহাড়। পাহাড়ি ঝিরিতে গা ছম ছম অনুভূতি। ঝিরিতে শত বছর ধরে আটকে আছে বড় বড় পাথর খন্ড। পাথর ও ক্যাসকেড বেয়ে নামছে পানির স্রোত।

উঁচু পাহাড় আর গভীর অরণ্যের কারণে ঝিরি পর্যন্ত পৌঁছে না সূর্যের আলো। পথে পথে আরো কয়েকটি ঝর্ণা দেখা যায়। তবে বৃষ্টি কম হওয়ায় সেসব ঝর্ণায় তেমন পানি নেই। ঝিরি পথে হাঁটার পর দেখা মিলে সুবিশাল তুয়ারি মাইরাং ঝর্ণা। শীতল ঝিরি পথের শেষে পাথরের পাহাড় বেয়ে নামছে ‘তুয়ারি মাইরাং’। এতো উঁচু ঝর্ণা দেখে চোখ আটকে যাবে যে কারো। ঝর্ণার উল্টো দিকে পাথুরের পাহাড়। এমন ঝর্ণা দেখে মুগ্ধ পর্যটকরা।

 

সুবিশাল তুয়ারি মাইরাং ঝর্ণা


ঢাকা থেকে তুয়ারি মাইরাং দেখতে বেড়াতে এসেছে ‘নেচার ট্র্যাভেলস বাংলাদেশ’-এর সদস্যরা। বেড়াতে আসা পর্যটক মারিয়া, মুশফিকা ও শান্তু বলেন, করোনার মধ্যে দীর্ঘদিন যান্ত্রিক জীবনে আটকে ছিলাম। তুয়ারি মাইরাং ঝর্ণা দেখতে আসলাম। যারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন তারা আসতে পারবেন। ঝর্ণায় আসার পথ অত্যন্ত রোমাঞ্চকর। যারা পাহাড়ে আসতে পছন্দ করেন, ঝর্ণা পছন্দ করেন, এটি তাদের জন্য বেশ ভালো একটি জায়গা।

তারা আরো বলেন, নাগরিক জীবনের ক্লান্তি কাটাতেই খাগড়াছড়ি এসেছি। নতুন একটা ঝর্ণা ‘তুয়ারি মাইরাং’। এখানে প্রাকৃতিক অনুভূতি আছে। তবে প্রকৃতিকে প্রকৃতির মতো করে উপভোগ করতে হবে।

‘তুয়ারিং মাইরাং’ প্রায় একশ’ ফুট উঁচু। অল্প কষ্টে অল্প হাঁটায় এখানে আসা যায়। দুই পাশে পাহাড়।

‘নেচার ট্র্যাভেলস বাংলাদেশ’-এর টিম লিডার ডা. মইনুল হাসান বলেন, তুয়ারি মাইরাং বেশ সুন্দর ঝর্ণা চারপাশটা বেশ রোমাঞ্চকর। পুরো পথ জুড়ে অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ পাওয়া যায়। কোথাও কোথাও ঝিরি এবং ক্যাসকেড বেয়ে নামতে হয়। এ সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। বন্ধুর পথ পেরিয়ে ঝর্ণা দেখে মুগ্ধ হবে যে কেউ।

পর্যটকদের যাতায়াতে অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। আগত পর্যটকদের গাইড সুবিধাও দিতে চান তারা।

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য হতেন ত্রিপুরা বলেন, ‘তুয়ারি মাইরাং নতুন ঝর্ণা। স্থানীয়রা বেড়াতে এলেও বাইরের পর্যটকরা খুব একটা আসেনি। যাতায়াতের পথ কিছুটা ঝুঁকিপুর্ণ। সরকারের পক্ষ থেকে রাস্তাসহ অবকাঠামো নির্মাণ করে দিলে সুবিধা হবে। পর্যটক বেড়াতে এলে গাইড সুবিধা দেয়া যাবে।

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়