রাঙামাটি । শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রেকিং

পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব : কাপ্তাইয়ে প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাপার্বত্যাঞ্চলের পরিস্থিতি অবনতি ঘটলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে : বীর বাহাদুর ঊশৈসিং এমপিসাজেকে নিহত ৯ জনের ময়নাতদন্ত শেষে হস্তান্তর, আহত ২ শ্রমিককে ঢাকায় প্রেরণকাপ্তাই হ্রদে ৩ মাসের জন্য মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শুরুকেএনএফ প্রধান নাথান বমের স্ত্রী ‘নিখোঁজ’সাজেকে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯, পরিচয় মিলেছে ২ জনের!তীব্র তাপদাহ: জনগণকে সচেতন করতে প্রচারণায় নেমেছে রাঙামাটি স্বাস্থ্য বিভাগকাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫ ইউনিটের ৪টিই বন্ধ, উৎপাদন কমে ৩০ মেগাওয়াট

শিক্ষাঙ্গন ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ২২:০১, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

গবাদি পশুর প্রজননের খবর জানাবে বাংলাদেশি ছাত্রের তৈরি যন্ত্র

গবাদি পশুর প্রজননের খবর জানাবে বাংলাদেশি ছাত্রের তৈরি যন্ত্র

গর্ভবতী নারী বাচ্চার অবস্থান জানা যায় আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে। গবাধি পশুর বাচ্চার অবস্থান জানার এমনই একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন ডা. আইনুল হক। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। তার উদ্ভাবনের যন্ত্রটির নাম ‘বাউ এআই ভিশন’। বিস্তারিত জানাচ্ছেন আবুল বাশার মিরাজ 

পরিকল্পনা যেভাবে হলো

গবেষণার কাজে একদিন গিয়েছিলেন গাজীপুরের কোনাবাড়ি। একজন গরুর মালিক তার কাছে আসলো। তিনি আইনুলকে বললেন, আমার গরুরে ৮ বার পাল দিলাম, বাচ্চা তো হয় না বাবা! আগ্রহ ভরে শুনলেন বিস্তারিত ঘটনা। বাকৃবি ক্যাম্পাসে এসে ভাবতে লাগলেন আইনুল। কি করে এসব খামারীদের জন্য দেশীয় প্রযুক্তিতে একটি যন্ত্র আবিষ্কার করা যায়। লেগে গেলেন কাজে। এমন কিছু করতে যাচ্ছেন তাও জানালেন তার সুপারভাইজারকে। পেয়ে গেলেন তারও সম্মতি। 

আইনুল বলেন, বর্তমানে কৃত্রিম প্রজনন গবাদি পশুর বংশবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান মাধ্যম। দেশে বিভিন্ন কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি থাকলেও বর্তমানে সর্বাধিক প্রচলিত ও সাশ্রয়ী পদ্ধতি হলো হিমায়িত সিমেন (বীজ) দিয়ে প্রজনন করানো।  দেশে এ পদ্ধতি ছাড়া আজ অবধি তেমন কোন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার মাঠ পর্যায়ে ওভাবে শুরু হয়নি। 

তিনি জানান, ক্লাসে যখন কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি পড়তাম কিংবা ব্যবহারিক করতাম তখন অনেক জটিল মনে হত। বিশেষ করে জরায়ুর মুখ নির্ণয় করা ও গান প্রবেশ করানো। কারণ সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি করতে হয় মলাশয়ে হাত দিয়ে। কেবল হাতের অনুভবেই কাজটি বুঝতে হত। চোখে দেখার কোন সুযোগ ছিল না। আমি চেয়েছি এমন কিছু তৈরি করতে, যার কল্যাণে আমরা সেটি চোখে দেখে সঠিকভাবে প্রক্রিয়াটি হচ্ছে কিনা তা জানতে। 

সুপারভাইজারের সহযোগিতা

বাকৃবির সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার পর অনেক কিছু জানতে পারেন আইনুল। তার সুপারভাইজার অধ্যাপক ড. নাছরীন সুলতানা জুয়েনার তত্ত্বাবধানে গবেষণা কাজ শুরু হয় তার। গবেষণার কাজে তাকে যেত হত দেশের বিভিন্ন উপজেলায়। মূলত খামারিদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের জন্য যেতেন তিনি। কিন্তু খামারীদের কৃত্রিম প্রজনন নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনতে ভালো লাগত না তার। কিভাবে এ সমস্যাটির সমাধান করা যায় সে চিন্তাভাবনা করতেন আইনুল। আর সেগুলো জানাতেন তার সুপারভাইজারকে। সবসময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য তাকেও বিশেষভাবে ধন্যবাদ দেন আইনুল। 

এবিষয়ে জানতে চাইলে ড. অধ্যাপক ড. নাছরীন সুলতানা জুয়েনা বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগামের (এনএটিপি) দুই নাম্বার ধাপের একটি প্রজেক্টের গবেষণার কাজে তাকে মাঠের কিছু তথ্য সংগ্রহের কাজে পাঠাই। প্রজেক্ট থেকে আমরা জানতে পারি, কৃত্রিম প্রজনন সঠিকভাবে না হওয়ায় আমাদের গরুর বাছুর উৎপাদন কম হত। বর্তমানে এ সমস্যাটি আর নেই। কারণ যন্ত্রটি এআই কর্মীরা ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যাটি চোখে দেখে সঠিকভাবে কৃত্রিম প্রজনন হচ্ছে কিনা, জানতে পারছেন। 

যেভাবে বানালেন যন্ত্রটি 

আইনুল বলেন, কৃত্রিম প্রজননের অন্যতম সমস্যার মধ্যে একটি হলো, জরায়ুর বডিতে সিমেন সঠিকভাবে দিতে না পারা। আমার মনে হয়েছিল যদি জরায়ুর মুখ বাইরে থেকে দেখা যেত তাহলে বিষয়টা অনেক সহজ হত। আমি ইন্টারনেটে সার্চ করে এরকম কোনো যন্ত্র আছে কিনা তা খোঁজার চেষ্টা করলাম। অনেক খুঁজে পেয়েও গেলাম। 

কিন্তু তাদের সাথে যোগাযোগ করে দেখলাম। এটির যে দাম তাতে আমাদের দেশে ব্যবহার অনেক ব্যয়বহুল। মনটা খারাপ হয়ে যায় তখনই। মনস্থির করলাম, কিভাবে কম খরচে আমাদের দেশে এটা  তৈরি করা যায়। তখন থেকে শুরু করে দেই কাজ। কাজ শুরু করতে গিয়ে দেখলাম আমার যা লাগবে কোনটাই বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। তখন শুরু হল বিভিন্ন দেশে ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ। কেউ রাজি হয় না আমার কাজটি করে দিতে। একজন আবার, একজন ডাক্তার হয়ে আমার পক্ষেও সম্ভব ছিল না ক্যামেরা ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি তৈরি করা। তারপরও হাল ছাড়লাম না। অবশেষে একটু আশার বাণীর সন্ধান পেলাম। আমার আগ্রহ আর দেশের উপযোগী (কমদাম) করে তোলার প্রচেষ্টা দেখে তারা আমাকে ক্যামেরা তৈরি করে দিতে রাজি হলো। এরপর আর একটি সমস্যা সামনে হাজির হলো। সেটি হলো শুধু ক্যামেরা হলেই তো হবে না। ক্যামেরা বসানোর জন্য আরো কিছু লাগবে, লাগবে দেখার জন্য স্ক্রিন ও সফটওয়্যার। এগুলো তৈরিতে বাধার সম্মুখীন হয়েছি বার বার। অনেকে আমাকে বলতে লাগলো, বাদ দাও এসব। এদেশে এগুলা বানানো সম্ভব না। পাগলামি করছি বলেও ক্ষ্যাপাতো বন্ধুরা। শেষ পর্যন্ত সবই ব্যবস্থা করে ফেললাম। অনেক পরিশ্রমের পর একটা বাস্তব রূপ দিলাম যন্ত্রটির। 

মাঠ পর্যায়ে কাজ

খুব ভয়ে ছিলাম, এত পরিশ্রম, সময় সব বৃথা যায় কিনা। কিন্তু স্রষ্টা আমাকে নিরাশ করলেন না। তৈরি হল সাশ্রয়ী খরচে ব্যবহার উপযোগী কৃত্রিম প্রজননে ডিজিটাল ডিভাইস, নাম দিলাম ‘বাউ এআই ভিশন’। যন্ত্রটি তৈরি করার পর প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গরুর খামারে পরীক্ষা নিরীক্ষা করলাম। তারপর গেলাম আবার গেলাম ওই খামারীদের কাছে।  

যন্ত্রটির সুবিধা সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি অনেক কম খরচে তৈরি করা যাবে। একটি যন্ত্র তৈরিতে প্রায় ৭ হাজার টাকা খরচ পড়বে। একটি যন্ত্রই দিয়েই বড় একটি গ্রামে সকল খামারীদের চাহিদা মেটানো যাবে। এছাড়াও  জরায়ুর মুখ মোবাইল স্ক্রিনে দেখে নিশ্চিত হয়ে জরায়ুতে সিমেন দেয়া ও অনেক রোগ নির্ণয়ে ব্যবহার করা যাবে।

আলোকিত রাঙামাটি

জনপ্রিয়