রাঙামাটি । শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ , ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ২৬ জানুয়ারি ২০২০

গ্রাহককে জিম্মি করে কোটিপতি ইভ্যালি

গ্রাহককে জিম্মি করে কোটিপতি ইভ্যালি

সংগৃহীত


কৌশলে গ্রাহককে জিম্মি করার অভিযোগ উঠেছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে। অনলাইন শপিংয়ের পর ১৫ দিনে ডেলিভারি দেয়ার কথা থাকলেও মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও মিলছেনা কাঙ্খিত পণ্য। সেই সঙ্গে অগ্রিম টাকা দিয়ে ভোগান্তিতে রয়েছেন অনেক গ্রাহক।

সম্প্রতি এক গ্রাহক ইভ্যালি থেকে বড় ভাইয়ের জন্য মোটরসাইকেল অর্ডার দিয়ে হয়েছেন ঘরছাড়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোটরসাইকেল কিনতে গিয়ে কিভাবে ঘরছাড়া হয়েছে তা তুলে ধরেছেন তিনি।

ফারুক ইসলাম নামের ওই গ্রাহক বলেন, ইভ্যালিতে বড় ভাইয়ের জন্য বাইক অর্ডার করে আজ আমি ঘরছাড়া। যত দিন না ডেলিভারি পাব ততদিন আর বাসায় ঢুকতে পারবো না। ভাই সবাই আমার জন্য একটু দোয়া করবেন। কি করে হিরো বাইক ডেলিভারি পাওয়া যায় সেই সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

ইভ্যালি থেকে প্রতিদিনই এমন হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। তাদের অভিযোগ ইভ্যালি কখনো নির্ধারিত সময়ে পণ্য ডেলিভারি দেয় না। এমনকি তিন চার মাস অপেক্ষায় রেখে গ্রাহককে বলা হয় স্টক আউট হওয়ার কারণে পণ্য দেয়া যাচ্ছে না।

অভিযোগ উঠেছে যাদের পণ্য ডেলিভারি দেয়া হয় না তাদের সরাসরি টাকাও ফেরত দেয়না প্রতিষ্ঠানটি। ইভ্যালির ওয়েবসাইটে গ্রাহকের করা একাউন্টে এই টাকা রেখে পরবর্তীতে পণ্য কিনলে অ্যাডজাস্ট করা হবে বলে জানানো হয়। যা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের একটি অপরাধ।

আইনের ৪৫ ধারায় বলা আছে, প্রদত্ত মূল্যের বিনিময়ে প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করা হলে অনূর্ধ্ব এক বছর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা জানান, আমাদের টাকা আমরা দেখতে পাব কিন্তু নিতে পারবোনা। তার মানে আমাদের সরলতাকে পুঁজি করে আমাদের জিম্মি করছে প্রতিষ্ঠানটি। তারা যদি আমাদের পণ্য না দিতে পারে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে টাকা ফেরত কেন দেয়না। মাসে এমন করে গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা তাদের কাছে রাখছে। আর সেই টাকা দিয়েই ব্যবসা করছে ইভ্যালি। এক অফারের পণ্য না দিতেই অন্য অফারে চলে যায় তারা। এতে ওই অফারেও নেয়া হচ্ছে টাকা। এ যেন আরেক ডেসটিনি। যারা  এমএলএম ব্যবসার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে।

সম্প্রতি এক গ্রাহক তিনটি মোবাইল ফোন ক্রয়ের জন্য পেমেন্ট দিলেও তাকে যথা সময়ে ফোন না দেয়া, সঠিক হ্যান্ডসেট না দেয়া, বদলে দেয়ার কথা বলে অতিরিক্ত টাকা নেয়া এবং একটি ফোন ডেলিভারি দিয়ে তিনটি মোবাইলের রিসিট দেয়ার অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

শামীম রাফি নামের ওই গ্রাহক ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, ইভ্যালীর লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টে আমি তিনটি মটোরোলা ই৫ প্লাস মোবাইল অর্ডার করি এবং তিনটি মোবাইলের জন্য ২৩ হাজার ৭০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট করি। মোবাইলগুলো ১৫ দিনের মধ্যে ডেলিভারি দেয়ার কথা থাকলেও স্টকে নেই বলে আমাকে ঘোরাতে থাকে। পরে  এমআই রেডমি নোট ৭এস নামক মোবাইল ফোনটি নিতে পারবেন বলে জানায়। কিন্তু তার জন্য আরো তিন হাজার করে টাকা জমা দিতে হবে।

যেহেতু আমার তিনটি মোবাইলই দরকার ছিল, সেজন্য আমি আরো নয় হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে ইভ্যালিকে পেমেন্ট করি এবং তারা আমাকে ২২ নভেম্বর ‘পেপারফ্লাই’ নামক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মোবাইল ফোন ডেলিভারি করে।

কিন্তু ডেলিভারিকৃত মোবাইল ও তার মানি রিসিট দেখে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরে। কেননা তারা আমাকে যে ফোনটি ডেলিভারি করেছে সেখানে মাত্র একটি ফোন ছিল আর মানি রিসিটে ছিল আমাকে তিনটি মোবাইল ডেলিভারি দেয়া হয়েছে।

আমি তাৎক্ষনিক ইভ্যালির কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিলে জানানো হয় বাকি দু’টি মোবাইলের টাকা রিফান্ড করা হবে।

পরে আমি ভোক্তা অধিকারে লিখিত অভিযোগ করার পর ইভ্যালির কয়েকজন কর্মকর্তা ভোক্তা অধিকারের পরিচালকের রুমে ক্ষমা চেয়ে বাকি ফোন দু’টি দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে গিয়ে দেখি সেখানে আগে থেকেই অনেক ভুক্তভোগী ইভ্যালির বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। প্রতিদিনই এমন ভুক্তভোগী আসছেন। সেই সঙ্গে ইভ্যালির কিছু কর্মকর্তারাও সব সময় সেখানে থাকেন এসব বিষয় ম্যানেজ করার জন্য।

ইভ্যালিতে অর্ডার থাকার কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভুক্তভোগী বলেন, ইভ্যালির বড় সমস্যা হলো তারা ডেলিভারি টাইম ঠিক রাখেনা। পণ্যের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। আমি অর্ডার করে প্রায় তিন মাস হতে চলেছে এখনো প্রডাক্ট হাতে পায়নি। কর্তৃপক্ষ থেকেও কোন ধরনের সহযোগীতা পাওয়া যায়না।

হালিম নামে এক গ্রাহক ইভ্যালির পেজে কমেন্টসে লিখেছেন, গত ১৬ ডিসেম্বর প্রিসেলে অর্ডার করা ল্যাপটপ এখনো হাতে পাইনি। কাস্টমার কেয়ার জানিয়ে ছিলো ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে প্রোডাক্ট হাতে পেয়ে যাবো। আস্থা রেখে আর একটা কলও দেইনি। এখন পর্যন্ত পুরো সিস্টেম প্রসেসিং অবস্থায় আছে। দয়া করে ইভ্যালি কর্তৃপক্ষ থেকে একটি যুক্তিসঙ্গত কারণ কি জানাবেন???।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের কাছে লিখিত যতগুলো অভিযোগ এসেছে তার পদক্ষেপ নিচ্ছেন সহকারী পরিচালকরা। অভিযোগের প্রমাণ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হয়।

কি পরিমাণ অভিযোগ জমা পরেছে সেই সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিদিনই ইভ্যালির বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পরছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, আমরা এখনো কোনো ক্রেতার অভিযোগ পাইনি। তবে ফেসবুক এবং অন্যান্য মাধ্যমে ইভ্যালির সমস্যার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা সেগুলো ইভ্যালিকে জানিয়েছি। তারা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে আমাদের জানিয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেলকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি। মোবাইলে ম্যাসেজ দিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

আলোকিত রাঙামাটি

সর্বশেষ