‘জঙ্গিবাদ একটি ধারণা বা বিশ্বাস, শুধু বন্দুক দিয়ে দমন সম্ভব নয়’
জঙ্গিবাদ একটি ধারণা বা বিশ্বাস। এটা হৃদয়ে থাকে। শুধু বন্দুক দিয়ে বা অপারেশন করে তা দমন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার।
বৃহস্পতিবার র্যাব সদরদফতরে জঙ্গি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান ‘নব দিগন্তের পথে’ প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) বলেন, আমরা যাদের সন্ত্রাসী বলি, সবাই সন্ত্রাসী নয়। কারো মনে সামান্য সহানুভূতি থাকে। এক পর্যায়ে সাপোর্টার হয়ে যায়। এরপর অ্যাক্টিভিস্ট হয়, সে তখনও সন্ত্রাসী বা জঙ্গি হয়ে যায় না। এরপরের ধাপে অ্যাকস্ট্রিমিস্ট হয়। এই পর্যায়ে সে অন্য কারো মতাদর্শকে মানতে চায় না। অ্যাকস্ট্রিমিস্ট হওয়ার পর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। তখন সবাইকে শত্রু মনে করতে থাকে।
তিনি বলেন, তার ভ্রান্ত ধারণাকে অবহেলা করা যাবে না। কারণ এটা সে বিশ্বাস করে। তার ধারণায় আঘাত করতে হবে। যেটা শুধু বন্দুক দিয়ে সম্ভব নয়। দরকার হয় ডিরেডিকেলাইজেশন। অ্যাকস্ট্রিমিস্ট থেকে টেররিস্ট হয় একজন ব্যক্তি। তখন কোনো একটি নাশকতামূলক কাজের জন্য রওনা দেয়।
ডি রেডিকেলাইজেশনের কয়েকটি ধাপ উল্লেখ করে কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেন, প্রথমে এই রেডিকেলাইজড হওয়া ব্যক্তিদের স্বাচ্ছন্দ নষ্ট করতে হবে। তাদের সক্ষমতা নষ্ট করতে হবে। তার গ্রুপের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাকে ধরে আনতে হবে।
তিনি আরো বলেন, তাকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাকে বিচারের মুখোমুখি না ডিরেডিকেলাইজেশনে সম্পৃক্ত করতে হবে তা নিয়ে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট করতে হবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হয়।
যারা ডিরেডিকেলাইজেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে তাদের মানসিক, সামাজিক ও আর্থিক সাপোর্ট দিতে হবে বলে জানান তিনি।
জঙ্গি দমন প্রক্রিয়ায় সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেন, আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবাই মিলে কাজ করলে তা হবে মাত্র ২৫ দশমিক ৭ ভাগ কাজ। সমাজের সবাইকে নিয়ে এই ভয়াল দৈত্যকে মোকাবিলা করতে হবে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গিবাদ একটা ধারণা, বিশ্বাস। এটা হৃদয়ে থাকে। শুধু বন্দুক দিয়ে বা অপারেশন করে তা দূর করা যাবে না। তবে শুরুতে অপারেশনাল পন্থা অবলম্বন করতে হবে। যেহেতু আমরা এই পন্থায় সফল হয়েছি তাই এবার আমরা এই জঙ্গিবাদের মূল উৎপাঠন করতে একটা বাতায়ন খুলে দিতে চাই। যারা শুধু মানসিকভাবে দূষিত হয়েছে তারা যেন আলোর পথে আসতে পারে। তারা অগ্রদূত হয়ে যেন অন্যদের এই পথে নিয়ে আসে।
আলোকিত রাঙামাটি