রাঙামাটি । শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ , ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৪:৫৬, ১১ আগস্ট ২০২০

তিন মাস বন্ধ থাকার পর রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার শুরু

তিন মাস বন্ধ থাকার পর রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার শুরু

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধিঃ- তিন মাস বন্ধ থাকার পর আজ থেকে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে আবারো মাছ শিকার শুরু হয়েছে। মধ্যরাত থেকে আবারো জেলেরা মাছ শিকার শুরু করায় রাঙামাটির বিএফডিসির অবতরণ ঘাটে মৎস্য ব্যসায়ীদের কর্ম তৎপরতা শুরু হওয়ায় প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরেছে ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের মাঝে। খুলে দেয়া হয়েছে শহরের সকল বরফ কল। জেলে ও মাছ ব্যসায়ীদের তৎপরতা শুরু হওয়ায় রাঙামাটি শহরের মাছের বাজার গুলোতেও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।

মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) ভোর ৫টায় রাঙামাটি বিএফডিসির অবতরণ ঘাটে প্রথম মাছের চালান লোড করেছে বলে জানিয়েছেন বিএফডিসি’র ব্যবস্থাপক লে. কমান্ডার এম. তৌহিদুল ইসলাম। একইভাবে কাপ্তাইসহ অন্যান্য অবতরণ ঘাটে মাছের চালান আসতে শুরু করেছে।

তিনি আরো জানান, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছের সুষ্ঠু প্রাকৃতিক প্রজনন, বংশ বিস্তারের কারণে বাম্পার আহরণ সম্ভব হবে এবার। তবে এর জন্য বিএফডিসির সকল কর্মকর্তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। বন্ধকালীন (মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা) সময় অবৈধ মাছ নিধনসহ পোনা মাছের রক্ষণাবেক্ষণে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয় তাদের। এ সময়ে হ্রদের মৎস্য সম্পদ তদারকি করার জন্য ৬টি মোবাইল মনিটরিং সেন্টার ও ৭টি চেকপোস্ট বসানো হয়। যার সুফল এখন মৎস্যজীবীরা ভোগ করবেন।

রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে ৬৬টি দেশিও প্রজাতির ও ৬টি বহিরাগত প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। প্রতি বছর রাঙ্গামাটি কাপ্তাই হ্রদ থেকে প্রায় ১০ হাজার ৫০০ মেট্টিক টন মাছ আহরিত হয়। যা প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এই হ্রদে মাছের প্রকৃতিক প্রজনন ধরে রাখতে বিএফডিসি বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি সাধারণ সম্পাদক ও মৎস্য ব্যবসায়ী উদয়ন বড়ুয়া জানান, দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকার পর আবারো ব্যবসা চালু হওয়ায় আমরা দারুণ খুশি। কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরার সঙ্গে প্রায় ২২ হাজার জেলে নির্ভর করেন। তাদের আয়ের একমাত্র পথ মাছ শিকার। এটি আবারো চালু হওয়ার সবাই আনন্দিত।

রাঙামাটি বিএফডিসি সূত্রে জানা গেছে, ৭২৫ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলধারা ও বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদ। যা দেশের মিঠা পানির মাছের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত। এ হ্রদ থেকে আহরিত মাছ রপ্তানি করা হয় চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। যার সুফল ভোগ করেন এ অঞ্চলের ২২ হাজার মৎস্যজীবী। এছাড়া অবতরণ কেন্দ্রের সঙ্গে জড়িত তিন শতাধিক শ্রমিক ও শতাধিক ব্যবসায়ী। প্রতিবছর মে থেকে জুলাই এই তিন মাস যাতে কাপ্তাই হ্রদে মাসের সুষ্ঠু প্রজনন হতে পারে সে জন্য এ সময় হ্রদে মাছ আহরণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনরে উদ্যোগে হ্রদে ছাড়া হয় বিপুল পোনা মাছ। এসব পোনা বড় হওয়ার পর মাছ শিকার শুরু হয়েছে। এতে কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে জেলে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীর মধ্যে। চলতি বছর সরকারের রাজস্ব যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি দেশে মিঠা পানির মাছের চাহিদাও মিটছে, আর লাভবান হচ্ছে মৎস্যজীবীরা। এরই মধ্যে জমে উঠেছে মৎস্য ব্যবসাও।

উল্লেখ্য, দেশের সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণসহ কাপ্তাই হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশকে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের এক আদেশে গত ৩০ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদের সকল প্রকার মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়। এ মাছ শিকার বন্ধকালীন সময়ে হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের পাশাপাশি মাছের বংশ বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় নার্সাসি থেকে ৩০ টন মাছের পোনা ছাড়া হয়।

আলোকিত রাঙামাটি